পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$98. টিলার উপরকার বটতলায় আসন্ন সন্ধ্যার ঘন ছায়ায় দাড়াইয়া দাড়াইয়া কত দূর পর্যন্ত এক চমকে দেখিতে পাইলাম—কলুটোলার মেস, কপালীটোলার সেই ব্রিজের আডডাটি, গোলদীঘিতে আমার প্রিয় বেঞ্চখানা প্রতিদিন এমন সময়ে যাহাতে গিয়া বসিয়া কলেজ ষ্ট্রীটের বিরামহীন জনশ্রোত ও বাস্-মোটরের ভিড় দেখিতাম। হঠাৎ যেন কত দূরে পড়িয়া রহিয়াছে মনে হইল তাহারা । মন হু স্থ করিয়া উঠিল—কোথায় আছি! কোথাকার কোন জনহীন অরণ্যে প্রাস্তরে খড়ের চালায় বাস করিতেছি চাকুরীর খাতিরে! মামুষ এখানে থাকে ? লোক নাই, জন নাই, সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ—একটা কথা কহিবার মানুষ পর্য্যস্ত নাই। এদেশের এই সব নিতান্ত মূৰ্খ, বৰ্ব্বর মানুষ, এরা একট। ভাল কথা বলিলে বুঝিতে পারে না—এদেরই সাহচর্ঘ্যে দিনের পর দিন কাটাইতে হইবে ? সেই দূরবিসপী দিগন্তব্যাণী জনহীন সন্ধ্যার মধ্যে দাড়াইয়া মন উদাস হইয়া গেল, কেমন যেন ভয়ও হইল। তখনই সঙ্কল্প করিলাম, এ-মাসের আর সামান্য দিনই বাকী, সামনের মাসটা কোনরূপে চোখ বুজিয়া কাটাহব, তার পরে অবিনাশকে একখানা লম্ব পত্র লিথিয়া চাকুরীতে ইস্তফা দিয়া কলিকাতায় সভ্য বন্ধুবান্ধবের অভ্যর্থন পাইয়া, সভ্য খাদ্য খাইয়া, সভ্য মুরের সঙ্গীত শুনিয়া, মাধের ভিড়ের মধ্যে কিয়া বহু মানবের আন উল্লাসভরা কণ্ঠস্বর শুনিয়া বাচিব । পূৰ্ব্বে কি জানিতাম মামুষের মধ্যে থাকিতে এত ভালবাসি ! মানুষকে এত ভালবাসি ! তাহদের প্রতি আমার যে কৰ্ত্তব্য হয়ত সব সময় তাহা করিয়া উঠিতে পারি না–কিন্তু ভালবাসি তাহদের নিশ্চয়ই। নতুবা এত কষ্ট পাইব কেন তাহাদের ছাড়িয়া আসিয়া। #: প্রেসিডেন্সী কলেজের রেলিঙে বই বিক্র করে সেই যে ' বৃদ্ধ মুসলমানটি, কত দিন তাহার দোকানে ধাড়াইয়া পুরনো বই ও মাসিক পত্রিকার পাতা উন্টাইয়াছি—কেন। উচিত ছিল হয়ত কিন্তু কেন হয় নাই—সেও যেন পরম আত্মীয় বলিয়া মনে হইল-তাছাকে আজ কত দিন দেখি नाशे ! {..., প্রবাসী ్సNరీ8é o কাছারিতে ফিরিয়া নিজের ঘরে ঢুকিয় টেবিলে আলো জালিয়া একখানা বই লইয়া বসিয়াছি, সিপাহী মুনেশ্বর মাহাতে আসিয়া সেলাম করিয়া দাড়াইল। বলিলাম—কি মুনেশ্বর ? ইতিমধ্যে দেহাতি হিন্দী কিছু কিছু বলিতে শিখিয়াছিলাম। মুনেশ্বর বলিল-হুজুর, আমায় একখান লোহার কড় কিনে দেবার হুকুম যদি দেন মুহুরী বাবুকে । —কি হবে লোহার কড়া ? মুনেশ্বর মাহাতোর মুখ প্রাপ্তির আশায় উজ্জল হইয়া উঠিল। সে বিনীত স্বরে বলিল—একখান লোহার কড়া থাকলে কত স্থবিধে হুজুর। যেখানে-সেখানে সঙ্গে নিয়ে গেলাম, ভাত রাধা যায়, জিনিষপত্র রাখা যায়, ‘শুতে ক’রে ভাত খাওয়া যায়, ভাঙবে না। আমার একথানাং কড়া নেই। কত দিন থেকে ভাবছি একথান কড়ার কথা—কিন্তু হুজুর, বড় গরিব, একখানা কড়ার দাম ছ’ আন । অত দাম দিয়ে কড়া কিনি কেমন করে ? তাই হুজুরের কাছে আস, অনেক দিনের সাধ একথান কড়া আমার হয়, হুজুর যদি মঞ্জুর করেন, হুজুর মালিক। একখানা লোহার কড়াই যে এত গুণের, তাহার জন্য ধে এখানে লোক রাত্রে স্বপ্ন দেখে, এ ধরণের কথা এই অামি প্রথম শুনিলাম। এত গরিব লোক পৃথিবীতে আছে যে ছ’ আন দামের একখানা লোহার কড়াই জুটিলে স্বৰ্গ হাতে পায় ? শুনিয়াছিলাম এদেশের লোক বড় গরিব । এত গরিব তাহ জানিতাম না। বড় মায় হইল । পরদিন আমার সই-করা চিরকুটের জোরে মুনেশ্বর মাহাতো নউগচ্ছিয়ার বাজার হইতে একখানা পাচ নম্বরের কড়াই কিনিয়া আনিয়া আমার ঘরের মেজেতে নামাইয়া আমায় সেলাম দিয়া দাড়াইল । —হো গৈল, হুজুরকী কৃপা সে—কড়াইয়া হে গৈল— তাহার হর্যোৎফুল্ল মুখের দিকে চাহিয়া আমার এই এক মাসের মধ্যে সৰ্ব্বপ্রথম আজ মনে হইল—বেশ লোকগুলো । বড় কষ্ট ত এদের } - ( ক্রমশ: )