পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SaR প্রবাসী S్ఫvరి£8 সে ধীরে ধীরে বলতে লাগল, “দেখুন আপনার বাইরের পরিচয় আমি জানি নে ; কিন্তু এই অল্পক্ষণের মধ্যে আপনার অস্তরের যে-পরিচয় আমি পেয়েছি তাকে তুচ্ছ করতে পারি এত স্পৰ্দ্ধ আমার নেই। আপনার বয়স অল্প কিন্তু আপনার ত্যাগে, আপনার নিষ্ঠায় আপনি আপনার বয়স এবং আপনার বন্ধনকে অতিক্রম ক’রে গিয়েছেন । সমস্ত বন্ধনকে অতিক্রম করতে না পারলে কেউ আপনার মত এমনি ক’রে বেরিয়ে পড়তে পারে না । সেই বন্ধনই আমাকে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্যে এমন ক’রে আবদ্ধ ক’রে রেখেছে । শক্তি আমার কিছুই নাই, যা নিয়ে আপনার বিরাট মুক্তি-কামনার তীর্থে অৰ্ঘ্য দান করতে পারি।” বলে একটু থেমে বললে, “পাৰ্ব্বতী দেবী ছাড়া আজ আমার পক্ষে এ-প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা অসম্ভব হ’ত। বাকী আমার যেটুকু শক্তি সে আমার পিতৃদত্ত অর্থ —তার যতটুকু আমি কমলাপুরীর কল্যাণে ব্যয় করি ততটুকুই আমার সাস্তুনা এবং যতটুকু আমার নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের স্মরণে সঞ্চিত রাখি সেইটুকুই আমার নিরাশ্রয় চিত্তের দুরাশা—বাকী আর আমার কিছুই নেই। আপনি আপনার নারীভবনকে আপনার মুক্তিমস্ত্রে গড়ে তুলুন, কমলাপুরীর সমাধিমন্দিরকে সমাধিক্ষেত্র ব'লেই জানবেন—সে আমার ব্যক্তিগত জীবনের গোপন তীর্থ। আমাকে ক্ষমা করবেন, বাইরের জনতার মুক্তি-কোলাহল দিয়ে আমার সেই নির্জনতাকে ক্ষুব্ধ করা আমার সম্ভব নয় ।” সীমা মনে মনে বিরক্ত হয়ে উঠল। ভাবলে রঙ্গ-দার কথাই ঠিক। এরা আবার জমিদারীর মায়া, টাকার মায়া ছাড়বে। বেশ মজার কথা ; অৰ্দ্ধেক টাকা মৃত পত্নীর জন্তে সমাধি আর বাকী টাকা পালানো ছেলের জন্তে জমা দি, আছে বেশ । এই সব প্যানগেনে লোকেরা কি ইচ্ছে ক’রে নাববে ? গুতোর চোটে এরা বাবা বলে। দাড়াও তোমাকে একবার রজ-দার হাতে ফেলি, সেই তোমার ঠিক ওষুধ । ওসব নাকে কান্নার ভব্য চারুকলার সে ধার ধারে না। ভাবলে, দেশটা জুড়েই কি এই যাত্রার দলের নায়কনায়িকা ছাড়া আর মানুষ নেই । দাড়াওঁ তোমাকে নিয়ে একবার খাচায় ত পুরি—তার পর । মুখে অত্যন্ত সহৃদয় বন্ধুদ্ধের ভাব টেনে এনে সে বললে, “দেখুন, আমি না জেনে হয়ত আপনাকে অকারণে উত্যক্ত করেছি। আপনার নির্জন-সাধনার পবিত্রতাকে আমার অশাস্ত চিত্তের কোলাহল দিয়ে আমি নষ্ট করতে চাই না। আপনার কমলাপুরী দেখে আমার মনে হয়েছিল যে আমার দেশের মুক্তিকামনার পথে আপনি আমার কাজ অনেকখানি এগিয়ে রেখেছেন । তাই বড় আশা করেছিলাম যে আমার ক্ষুদ্র শক্তি দিয়ে যা সম্ভব হয় নি আপনার সাহায্যে তাকে সফল করে তুলব। কিন্তু বুঝতে পারছি আপনার মন অন্ত স্বরে বাধা । আপনাকে আর বিরক্ত করব না । কালই আমাকে ফিরে যেতে হবে ; আমার অনেক কাজ পড়ে আছে। তা ছাড়া—” ব’লে সে যেন চিস্তাকুল হ’য়েই একটু চুপ করলে । শচীন্দ্র এই মেয়েটির হতাশ পীড়িত চিত্তের ব্যথিত কণ্ঠে একটু লজ্জিত হয়ে বলতে লাগল, “দেখুন, অকারণে আমার শক্তি সম্বন্ধে একটা আশা পোষণ করেছিলেন ব'লেই আঞ্জ হতাশার কথা বলছেন । অামাকে আর লজ্জা না। যে তুষেব শস্য কাটে নি:শেষ করেছে তাকে আছাড় মারলে আর কি কিছু পাবেন ? কিন্তু কি যেন বলতে গিয়ে আপনি চুপ ক'রে গেলেন ; কেন ? কোন কথা কোন ভৎসনাই আমার পক্ষে অপ্ৰযুজ্য নয় । এই কথাই ত বলছিলেন যে, “তা ছাড়া আপনার অপদার্থত এত স্পষ্ট ক'রে আগে বুঝতে পারি নি" ; অকারণে দেশের কাজের এতগুলো পয়সা এবং সময় আপনার অপব্যয় হ’ল । আপনি যদি কিছু না মনে করেন তবে আমার সামান্ত শক্তি অনুসারে আপনাকে অল্প কিছু পাথেয়-স্বরূপ দেব, আর—* দেবেন সীমা বাধা দিয়ে বললে, “না না, ও-রকম কথা আপনার সম্বন্ধে আমার মনেই হয় না। আমি অন্ত কথা ভাবছিলাম । কিন্তু আপনাকে সে-কথা জানালে আমার নবলব্ধ বন্ধুটি আমাকে ক্ষমা করবেন কি না, তাই ভাবছি।” ‘নবলব্ধ বন্ধু' বলতে নিজের কথা মনে ক'রে শচীন বললে, “আমি কিছু মনে করব না। আপনি নিশ্চিন্ত মনে যা খুশী বলে যেতে পারেন। শক্তি আমার অবশু—” “মা না, আপনার কথা হচ্ছে না। আমি পাৰ্ব্বতী দেবীর কথা বলছি।” বলে সে আবার চিন্তাশীল হয়ে পড়ল ।