পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্ৰিবেণী শ্রীজীবনময় রায় ჯyo নিখিলনাথ যখন সীমার আস্তানায় গিয়ে পৌছল রাত তথন অনেক হয়েছে। এত রাত্রে তাকে আসতে দেখে সীমা আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে, “আপনি এত রাত্রে যে ! কি ব্যাপার ? এ কি ? আপনার এমন চেহারা হয়েছে কি ক’রে ? খাওয়াদাওয়া হয় নি বুঝি ? নিখিল নিজের মনের উত্তেজনা কষ্টে দমন ক’রে গম্ভীর মৃদু ক’ণ্ঠে বলতে লাগল, “সীমা, অত্যন্ত বিপদ উপস্থিত। ইন্সপেক্টর ভুলু দত্তর নাম শুনেছ নিশ্চয়। সত্যদার মৃত্যুর পর তোমাদের অনুসন্ধানে সে-ই ত্ররামপুর গিয়েছিল । তোমাকে পায় নি বটে, কিন্তু তোমাকে ধরবার চেষ্টায়ু সে এতদিন অপেক্ষা ক’রে ছিল । আজ যেমন ক’রেই হোক সে তোমাদের আড়ার সন্ধান পেয়েছে ; এবং আজই সে তোমাদের বিরুদ্ধে বেশ বড় একটা চেষ্টা করবে। বিশেষ ক’লে তোমারই উপর তার আক্রোশ । আমার কথা শোনো ; এখনি এখান থেকে পালাও । নইলে, ভুলু দত্তকে তুমি ভাল ক’রে জান মা, সে কোনো কিছু করতেই পিছ-পা হবে না । তাকে তার নাছোড়বান্দা একগুঁয়েমির জন্তে কলেজে আমরা বুলডগ’ বলে ডাকতাম, সে আমাদের ক্লাস-ফ্রেণ্ড ছিল । আমার একান্ত অতুরোধ ; অকারণে ধরা পড়ে প্রাণ হারিয়ে কোন লাভ নেই, সীম৷ ” সীমা হেসে বললে, “প্রাণ হারিয়েহ ত লাভ । আজ দাদারা প্রাণ দিয়েছে ব’লে, প্রাণ হারানোর ভয় আমাদের ঘুচে গেছে। কিছু করবার শক্তি বা সুযোগ আমাদের নেই, তাই প্রাণটাকে পণ করে দেশে প্রাণের সাড়া জাগাবার ব্রত নিয়েছি আমরা। ভুলু দত্তের সব খবরই আমি জানি । কোন একটা কারণে ভুলু দত্তের কুপা আমাদের উপর পড়তে পারে জেনেই আপনাকে এখানে আসতে বারণ করে দিয়েছিলাম । না শুনে আপনি ভাল করেন নি। এখন আপনাকে বাচাবার হাতও বোধ হয় আমার নেই। আম দের বাড়ীর চতুদিকে আজ সন্ধে থেকেই পুলিসের পাহার। আছে জানবেন । বেরতে গেলেই ধরা পড়বেন ।" নিখিল সন্ত্রস্ত হতাশ মুরে বললে, “জেনেও পালাও নি কেন তোমরা । এ কি করেছ তুমি ? এখন কি উপায় করবে ? আমার জন্যে আমি ভাবি না। এ আমার উপযুক্তই হয়েছে । তোমাদের থেকে আমার অপবাধ ত একটু৪ কম না । নন্দলালের হত্য, শচীন সিংহের অপহরণের সম্ভাবনা, এ সব সংবাদ জেনেও আমি তার কোন প্রতীকার করি নি। আর আজ এই হত্যাকারী এনাকিষ্টদের ক্ষে করবার জন্যেই গুপ্তচর হয়ে এসেছি ছুটে । তোমাদের ভাগ্যে যে শাস্তি আছে তার থেকে যদি আজ বঞ্চিত হত, তবে আমার চেয়ে দুর্ভাগ্য কেড নেই । কিন্তু কোন উপায়ই কি নেই ?” নিখিল ইচ্ছে ক’রেই শচন্দ্রের কথ! এড়িয়ে গেল পাছে তার কোন দুঃসংবাদ শুনতে হয় । সীমা বললে, “উপায় আছে শুধু আমার পালাবার। কিন্তু আমার আরও পাঁচ জন ভাই এখানে আছে, তাদেব কি গতি হবে ? ওদের ছেড়ে ত যাওয়া চলবে না। পালানে আমার হবে না ; মইলে অকারণে পুলিসের হাতে প্রাণ দেবারও আমাদের নিয়ম নেই। আর পালাবার ইচ্ছে আমার নেই ; আমাদের নিজেদের মধ্যেই ঘুণ ধরেছে । নইলে আজকের এই অতর্কিত বিপদ ঘটবার সম্ভাবনা ছিল না, নিখিলবাবু !” সীমার স্বর ক্লাস্ত গভীর মনস্তাপব্যঞ্জক । “মানে ?” “মানে, যা বলছি তাই। নহলে যে ব্যবস্থা এবারকার আয়োজনে আমরা করেছিলাম, তাতে আপনার “বুল ডগের সাধ্য ছিল না আমাদের নামগন্ধ পায় । কিন্তু সে যাই হোক, আপনার নিশ্চয় খাওয়া হয় নি। তার ব্যবস্থা কিছু করা যায় কি না আগে দেখি ” নিখিল ব্যস্ত হয়ে বললে, “সীমা শোনে, খিদেটিদে আমার পায় নি। তুমি ওসব রেখে বাঁচবার চেষ্টা কর ।