পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শহুরে মেয়ে শ্রীসীতা দেবী মালতী মধ্যবিত্ত গৃহস্থঘরের মেয়ে, দুই বোনের পর তাহার জন্ম । নিতান্ত মা-যুষ্ঠীর কুপায় তাহার পরে মায়ের কোলে খোকা নিতুর আবির্ভাব ঘটিয়াছিল, না হইলে শুধু কন্যা গভে ধারণ করার লজ্জায় মালতীর মাকে চিরকালই মাটির সঙ্গে মিশিয়া থাকিতে হইত। শাশুড়ী, ননদ, বড় জা, এমন কি নিজের বাপের বাড়ীর লোকের কাছেও তাহার লজ্জাম সীমা ছিল না। উভয় বংশের কোন নারীরষ্ট নাকি এতবড় দুভাগ্য কোনদিন ঘটে নাই । নিত্যানন্দ আসিয়া যেন মাকে আকাশের চাদ হাতে তুলিয়া দিল, অবাঞ্ছিত৷ মেয়ের দলের অগৌরব আরও একটু বাড়িয়া গেল বষ্ট কমিল না। কাজেই শৈশব ও বাল্য জীবনে মালতীর যে আদরের বান ডাকিয়া যায় নাই, তাহা না বলিয়া দিলেও চলে । কিন্তু হাজার হউক কলিকাতায় তাহারা থাকিত ত ? আশেপাশে পাড়াপাড়শী ঢের, সবাই বাঙালী, তাহাদের কাছে হাড়ির কোনও খবর লুকাইবাব উপায় নাই । সুতরাং নিতাইকে এক সের সুধ দিলে, মেয়ে-তিনটাকেণ্ড ভাতের সঙ্গে মুড়ির সঙ্গে মাখিয় এক-আধ হাত দুধ দিতে হয়। ঠাকুরম এ-খরচচুকু বাচাইতে চান, ধেড়ে ধিঙ্গী মেয়ে সব, দু-পাটি করিয়া দাত, তাহীদের অত দুধ খাওয়ার ঘট কেন ? সব জিনিষই ত তাহারা থাইতে পারে ? উহাদের বয়সে তাহার। দুধের বাটি ইচ্ছা করিয়া ঠেলিয়া ফেলিয়া দিয়াছেন, লোহার কড়াই মৃদ্ধ চিবাহয়৷ থাইয়াছেন, আর এ-মেয়েদের রকম দেথ না, খুর্কীরা আজন্ম খুকাই থাকিবেন। মাও তেমনি । মেয়েগুলির নোলা যা বাড়িয়াছে তাহ বলিবার নয়। সারক্ষিণ থাইতে দিলে অমনি অভ্যাস হইবেই ত ? শ্বশুরবাড়া গিয়া যখন খালি ঝাট আর উমানের ছাই থাইতে পাইবে, তখন মায়ের সোহাগ থাকিবে কোথায় ? মেয়েছেলেকে সৰ্ব্বদা পেট কাদাইয়া খাইতে দিতে হয়, ন হইলে পরজীবনে অশেষ দুঃখ । এহেন মহীয়সী ঠাকুরমা থকা সত্ত্বেও অজ্ঞ বাপ-মায়ের বোকামিতে মেয়ে-তিনটা দুধ, ভাত, তরকারি, মাছ সবই থাইত । মালতীর বাপের রোজগারেই সংসারটা চলে, কাজেই তাহাদের মতামত একেবারে উড়াইয় নেওয়া যায় না। পৈতৃক সম্পত্তির মধ্যে এই ছোট একতলা বাড়ীখলি, কোন শুমতে মাথা গুজিয়া থাকা চলে । যাহাই হউক, নিজের ঘর, মাসে মাসে ভাড়া গুলিতে হয় না, কল, চৌপাস্ট লইয়া পাশেখ ঘরের ভাড়াটের সঙ্গে সারা দিন-রাত ঝগড়াও করিতে शं नः । পড়ায় কপোরেশনের অবৈতনিক স্কুল আছে, বছর ছয় বয়স হইতে-ন-হইতে মালতাও দিদিদের সঙ্গে সেখানে পড়িতে চলিল। আজকালকার দিনে উৎপাতের ত শ্বস্ত নাই ! শ্বশুরবাড়ী গিয়া ধে-বউকে চব্বিশ ঘণ্ট। খালি বাসন মাজিতে ও ভাত সিদ্ধ করিতে হইবে, তাহাকেও দেখিতে আসিম বরপক্ষ প্রথম জিজ্ঞাসা করিবেন, "মেয়ে পড়েছে কতদূর ? গানবাজনা জানে কি না ?” কাজেই মেয়েকে স্কলে দেওয়া ছাড়া উপায় কি ? বাড়ীতে থাকিলে না-হয় তিনটাকে গামছা বা মা-খুড়ীর ছেড়া শাড়ীর টুকুর পরাইয়া রাখা চলে, কিন্তু স্কুলে ত যথোপযুক্ত বেশভূযা ন হইলে পাঠান চলে না ? ফ্রক হোক বা শাড়ী জাম হোক, কিনিয়া দিতেই হইবে। অবশ্য, সত্যের খাতিরে স্বীকার করিতে হয় যে, এ দিকে মালতীর ম-বাপ বিন্দুমাত্র বদান্তত দেখাইতেন না, যথাসম্ভব খেলো সপ্ত। জিনিষই দিতেন। একই শাড়ী পরিয়া সরযু আর বিমলা দিনের পর দিন স্কুলে যাইত। শাড়ীর আঁচলে মুখহাত মুছিয়া সেটাকে আশ্চৰ্য্য চিত্রবিচিত্র করিয়া তুলিত, জামার পিঠে চুলের তেল আর ময়লা লাগিয়া বেশ পুরু একটি কাল স্তর জমা হইয়া উঠিত, কিন্তু সেদিকে কাহারও