পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●。ー求 আবিষ্কার করল তার সারল্য-মণ্ডিত শুভ্ৰহৃদয়ের গোপন সৌন্দৰ্য্যকে—সে-দৃষ্টি আছে শুধু কবির চোখে। অন্যের চোখে ঐ ছেলেট একটা অসভ্য বঁদের ছাড়া আর কিছুই নয়। সাধারণের দৃষ্টির সঙ্গে কবির দৃষ্টির এই পার্থক্য হ’ল ছেলেটাকে দেখবার ভঙ্গিমা নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের কাছে বালক একট। দুষ্ট বালক মাত্র নয়, সে একটা মহামূল্য সম্পদের মতই আদরের সামগ্রী । অন্যেও যদি কবির মত ক’রেই তাকে দেখতে পারত, তবে বালক তাদের কাছেও পেত অনাদরের পরিবর্তে অধাচিত স্নেহ । তবে দাড়াল এই । ভাল কবিতার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে ভাষার অতুপম ধাতু । সে যাদু লেখকের অস্তরের অনুভূতিকে পাঠকের মনের মধ্যে জীবস্ত করে তুলবে। আর ভাষার মধ্যে যাদু নিয়ে আসা তখনই হয় সম্ভব, যখন এই পৃথিবীর সব-কিছুই আমাদের চেতনায় এসে দাড়ায় অপরূপ সৌন্দধ্যে মণ্ডিত হয়ে । যে অভিজ্ঞতাই আমরা লাভ কfর না কেন, আমাদের চেতনায় তাকে গ্রহণ করতে হবে হৃদয়ের সবটুকু শক্তি দিয়ে। রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শ নিয়ে এই বিচিত্র জগৎ ক্ষণে ক্ষণে আমাদের হৃদয়ের দুয়ারে করছে করাধাত । যাদের জাগ্ৰত মন মুহুর্তে মুহূর্তে এই আহবানে সাড় দিতে পারে তাঁদেরই কবিতা আমাদের কল্পনাকে নাড়া দেয় । আমাদের অভিজ্ঞতা যদি কেবল ভাসী-ভাস হয়, তার মধ্যে যদি না-থাকে অনুভূতির তীব্রত, তবে আমাদের কবিতা কখনও পারবে না পাঠকের মনে গভীর রেখাপাত করতে । পাঠকের চেতনার উপর দিয়ে আমাদের ভাষার প্রবাহ চলে যাবে তেমনি ক’রে, যেমন ক’রে জলধারা চলে ধায় হাসের পাথার উপর দিয়ে । ছোটনাগপুরের আদিম অধিবাসীদের প্রেমসঙ্গীতগুলির মধ্যে আছে একটি অনিৰ্ব্বচনীয় মাধুর্ঘ্য । এই মাধুয্যের মূলে রয়েছে প্রেমের নিবিড় আঠুভূতি । পাহাড়ের উপত্যকায় ঝরণার ধারে শালের বনে যে মুণ্ড যুবকটি প্রেমে ডুবে তার প্রণয়িনীর কালে৷ কেশে পরিয়ে দেয় রক্ত-পলাশের গুচ্ছ—তার অমুভূতির মধ্যে গভীরতার অভাব নেই। এই জগুই তার মিলনের আনন্দ অথবা বিরহের বেদন যখন সঙ্গীতের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে, সে সঙ্গীত সহজেই আমাদের অস্তরকে দেয় নাড় । কলেজে-পড়া শিক্ষিত যুবকদের প্রেমের কবিতাগুলির অধিকাংশই যে পাঠকের চিত্তকে স্পর্শ করে না তার কারণও অনুভূতির দীনতার মধ্যে। প্রবণসী పెళి 88 প্রেম আসে শুধু কল্পনাকে আশ্রয় করে, জীবনের নিবিড়ভম অভিজ্ঞতার সঙ্গে নেই তার নাড়ীর যোগ। এই জগুই সেই প্রেম থেকে আসে না কবিতার মত কবিতা। দুধ্যস্তশকুন্তল অথবা রোমিও-জুলিয়েটের ভালবাসার কাহিনী পড়ে লেখা হয়েছে যে প্রেমের কবিতা, সে কবিতার মধ্যে মাহুষের জীবস্ত অতৃভূতির স্পন্দনকে খুজে পাব কোথা থেকে ? ইংরেজীতে যাকে বলে experience— সেই experieuce-এর মধ্যে থাকা চাহ হৃদয়ের সবটুকু দরদ, প্রাণের সবটুকু অনুভূতি । তবেই জীবনের অভিজ্ঞত ভাষার যাদুকে আশ্রয় ক'রে অতুপম কবিতা হয়ে প্রকাশ পাবে। নইলে কবিতা হবে শুধু কখার সমষ্টি—তার মধ্যে ঝঙ্কার থাকতে পারে, কিন্তু প্রাণ থাকে না । অনুবাদ-সাহিত্যের মধ্যে মূল কবিতার সৌন্দৰ্য্যকে আমরা যে খুজে পাই মা তারও কারণ জীবন্ত অন্তৰ্ভূতির অভাব। অনুবাদ অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে শুধু প্রকাশ করতে পারে । সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে কবির অস্তরের ধে গভীর অন্তভূতি জড়িত হয়ে আছে অতুবাদের মধ্যে ত প্রকাশ পাবে কেমন ক'রে ? ধে কfব আনন্দকে অথবা বেদনাকে সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রথম অষ্টভপ করেছিল, আপুন অতুভূতিকে অপরের মনে জীবন্ত রাখবার জন্ত fক ভাষা ব্যবহার করতে হবে সে রহস্য কেবল তারই fছল গুগল । আর এক জনের অনুবাদের মধ্যে মূল কবিতার সেই ভাষার মোহিনীশক্তিকে দেখবার আশা করা বাতুলত। মাত্র। আলিপুরের চিড়িয়াখানার বাঘের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ দেখবার যে আশা করে, তাকে কি বলব ? দুটোই বাঘ সন্দেহ নেই, কিন্তু খাচার বাঘ বনের বাঘের অম্বুবাদ মাত্র । অল্পবাদে মূলের সৌন্দধ্য ক্ষুন্ন না হয়ে क्षtध नौ । এইবার প্রবন্ধের উপসংহার কfর । ভাল কবিতা এমনই একটা দুলভ সম্পদ যার সৌন্দৰ্য্যকে বিশ্লেষণ ক'রে বোঝানো ধায় না। তার মহিমা শুধু অম্বরের উপলব্ধির বিষয়। তবুও কাব্যকে বিচার করবার জগু বাহিরের একটি নিকষ-পাথর থাকা মন্দ নয় । সেই নিকষপাথর সব সময় নিভুল না হ’লেও সেখানে যাচাই ক’রে কাব্যের মূল্য নির্ধারণ করার একটা সার্থকতা আছে । এই প্রবন্ধে এই রকম একটা নিকষ-পাথরের কথাই বল EURICE |