পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন qরমুখী। ছেলেবেলা হইতে আপন ঘর তাহার নাই, পরের ধরেই সে পালিত, তাই কি ঘরের দিকে এত বেশী তাহার মন পড়িয়া থাকে ? বড় হইয়া কি সে করিবে, কেমন ভাবে জীবন যাপন করিবে ? ভাবিতে গেলে ঐরকম একটি স্বন্দর পল্লীভবনের ছবিই কেন সবার আগে তাহার মানসনেত্রের সম্মুখে ভাসিয়া উঠে ? অার কোনও রকম ভবিষ্যতের কল্পনা কেন সে করিতে পারে না ? ছুটির আগে একদিন বেড়;হুবার সময় তিন বন্ধুতে গল্প হইতেছিল । আশা বলিল, “বাপ রে, কবে যে এই ঘানিতে ঘোরা শেষ হবে। আর পারা যায় না, এখনও হয়ত পাচছ’টা বছর এরই মধ্যে কাটাতে হবে, ভাবলেই আমার প্রাণ যেন ইপিয়ে ওঠে।” t প্রমীলা বলিল, “আমি বাবা এই ম্যাটিক পৰ্য্যস্ত, তার পর আর এমুখে হচ্ছি নে। অড ব্লু ষ্টকিং হয়ে আমার দরকার নেই ।” মৃণাল হাসিয়া বলিল, “ও, সনাতন ধর্শ্ব অবলম্বন করবে বুঝি ? সব ঠিক হয়ে আছে নাকি ?” প্রমীলা মুখ ঘুরাইয়া বলিল, “নাই বা ঠিক হ’ল ? ঠিক হ’তে কতক্ষণ ? অামার বাপু সোজা কথা, একটু পড়াশুনো না করলে আজকাল চলে না, লোকে মুখু ব'লে ঠাট্টা করে, তাই পড়তে আসা । তার পর কলেজের পড়া পড়তে পড়তে পিঠ কুঁজে হয়ে যাক, চোখে চশমা উঠুক, তখন যা ছিরি হবে ।” আশার বাড়ীর সব মেয়েরাই উচ্চশিক্ষিতা । মা বি-এ পাস, দুই দিদি বি-এ পাস, তাহাকেও যে বি-এ পাস করিতে হুইবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নাই, এবং তাহাতে আশার বিন্দুমাত্র আপত্তিও নাই। তাই প্রমীলার কথায় চটিয়া গিয়া বলিল, “ই্যা গে৷ ই্যা, সবই পড়াশুনোর দোষ । তোমরা স্বাস্থ্যের কোনও একটা নিয়ম মেনে চলতে জানবে না, আর দোষ হবে পড়াশুনোর। আমার মায়ের ত তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, কোনওদিন তাকে চশমা পরতে দেখেছিস । বড়দি আর মেজদি ত তোর সামনেই এখান থেকে ড্যাং ড্যাং করতে করতে বি-এ পাস করে বেরিয়ে গেল, তাদের পিঠে কত বড় কুঁজ ছিল ? তাদের কেউ আর পোছে নি, না ?” মাটির বাস। ԵաՏԴ আশার বড় বোন বিভা স্বন্দরী, মুশিক্ষিত, তাহার বিবাহ চট, করিয়াই হইয়া গিয়াছে। মেজ বোন শুভাও বেশ জোর কোর্টশিপ চালাইতেছেন, কাজেই তাহীদের কেহ পোছে না একথা আর কি করিয়া বলা যায় ? তবু প্রমীলা হাটবার মেয়ে নয়, বলিল, “দু-একটা ‘একৃসেপশুন থাকলেই যে জিনিষটা অপ্রমাণ হয়ে যায় তা ত নয় ? কত গণ্ডায় গণ্ডায় মেয়ে দেখেছি, উচ্চশিক্ষার ঠেলায় যাদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্ঘ্য দুইই নষ্ট হয়ে গেছে।” আশা বলিল, “আর আমি হাজারে হাজারে অশিক্ষিতা । মেয়ে দেখেছি যাদের স্বাস্থ্যও নেই, সৌন্দর্ষ্যও নেই, আঁছে7 কেবল বোকার মত লম্বা লম্বা কথা, যা তারা স্বার্থপর পুরুষের কাছে শিখেছে এবং না বুঝে তোতা পার্থীর মত আওড়াচ্ছে। আর আছে কোলে, পিঠে, কাখে, গণ্ডায় গওীয় ছেলে * তর্কট শেষে ঝগড়ায় পরিণত হইবার উপক্রম করিতেছে দেখিয়া মৃণাল বলিল, “যাকগে ভাই, ও নিয়ে তর্ক ক’রে কি হবে ? তর্কেতে আর কি প্রমাণ হবে ? স্ব-পক্ষেই ত ঢের কথা বলবার অাছে।” ہمبی-متصحہ یہ আশা বলিল, “আচ্ছা তোর নিজের মতলবখানা কি - শুনি ? তুই ম্যাটিক পাস করেই বিয়ে করতে দৌড়বি, না কলেজে পড়বি ?” মৃণাল বলিল, “সবটাই কি আর আমার হাতে থাকবে ভাই ? বাবা রয়েছেন, মামা রয়েছেন, তাদের কি মত হবে কে জানে ? অামার নিজের অবশু ইচ্ছে ষে কলেজেই পড়ি ।” আশা বলিল, “তবে দেখ, মৃণাল যে অত পাড়াগায়ের ভক্ত, সেও মুখ হয়ে থাকতে চায় না, আর তোর বাড়ী কলকাতায়, তোর এত সাত-তাড়াতাড়ি গোয়ালে ঢুকবার সখ কেন রে ?” প্রমীলা হাসিয়া বলিল, “তা আমার যদি সৰ্থ হয় বাপু ত কি করা যাবে ? হাই-হীল জুতো পরে, হাতে ব্যাগ নিয়ে, খটু খট, ক'রে ক্লাসে পড়াতে যাচ্ছি, কি ডাক্তারী করতে যাচ্ছি, তা ভাবতে আমার একটুও ভাল লাগে না। তার চেয়ে রান্নাবাল্লা ঘরকন্নার কাজ করছি ভাবতে ঢের বেশী ভাল লাগে।”