পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

i i গোতমের ধর্মে আত্মার স্থান শ্ৰী মহেশচন্দ্র ঘোষ প্রথম প্রবন্ধে দেখান হইয়াছে যে, গৌতম একজন পুগ গল বা পুরুষের অস্তিত্ব স্বীকার করিয়াছেন। এই পুরুষই কৰ্ম্ম করে, কৰ্ম্মফল ভোগ করে ; এই পুরুষই ইহলোক পরলোকে বিচরণ করে। এস্থলে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হইতে পারে—কৰ্ত্ত, কৰ্ম্ম, কৰ্ম্ম-ফল ভোগই কি গোতমের শেষ কথা ? কত্ত্বরূপে প্রকাশিত পুরুষই কি পুরুষের প্রকৃতরূপ } ন, ইহা গোতমের চরম কথা নহে ; ইহা সংসার-তত্ব, সংসার-তত্ত্ব চরম তত্ত্ব নহে। সম্+স্ব ধাতু হইতে ‘সংসার’ শব্দ। ‘স্ব’ ধাতু গতিসূচক । সংসার নিরস্তর প্রবাহিত হইতেছে, জীবজন্তু পুনঃ পুনঃ জন্ম-মরণের অধীন হইয়া ধাবিত হইতেছে। সংসার গতিশীল, কখন স্থিতিশীল নহে । মনুষ্যলোক দেবলোক প্রভূতি যাহা কিছু কালের অধীন, সে সমুদায় লইয়াই সংসার। ইন্দ্র, প্রজাপতি, ব্ৰহ্ম, মহাব্ৰহ্মা প্রভৃতি দেবগণ৪ সংসারের অন্তভূত । কিন্তু এসংসার অনিত্য ও অশাশ্বত। যতদিন দেবমণ্ডুযাদি এই অনিত্য সংসারে আবদ্ধ থাকে, তত দিন তাহার পুনঃ পুন: জন্ম-মৃত্যুর অধীন হইয়া বাস করে, সংসারে কৰ্ম্ম করে এবং কৰ্ম্মফল ভোগ করে । অনাদি কাল হইতে এইভাবে সংসার চলিয়া আসিতেছে। কল্প এক এক কল্পের প্রারম্ভে, এক এক সংসারের আরম্ভ, কল্পাস্তে ইহার বিনাশ । নৃত্তন কল্পে আবার নূতন সংসার এবং প্রলয়ে ইহার বিনাশ। কেবল পার্থিব জীবেরই যে উৎপত্তি ও বিনাশ তাহা নহে—ইন্দ্র ব্রহ্মাদিও কল্পারম্ভে জন্মগ্রহণ করে-কল্পাস্তে আবার লীন হইয়া থাকে। এইরূপ কল্প-কল্পাস্তরে সংসারের উৎপত্তি ও বিলম্ব হইতেছে। এক এক কল্প কি স্বদীর্ঘ কাল ডাহা কল্পনা করা অসম্ভব । কল্প-পরিমাণ নির্ণয় করিবার জন্ত গোতম কয়েকটি উপমা দিয়াছেন, একটি উপমা এই : লৌহপ্রাচীর-বেষ্টিত একটি নগর ; দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতায় ইহা এক যোজন। ইহা সর্ষপ-বাঁজে পরিপূর্ণ। একজন গোক যদি শতবৎসর পর পর এক-একটি সর্ষপবীজ গ্রহণ করে, এইরূপে কালে নগরের সর্ষপ-কণিকার সংখ্যাও নির্ণীত হইবে, কিন্তু তখনও কল্প শেষ হইবে না। (সংযুক্ত ২৷১৮২, ইং সং ) এই প্রকার শত সহস্ৰ কল্প অতীত হইয়াছে। সংসারও কল্প-কল্প:স্তর চলিয়া আসিতেছে। কে ইহার আরম্ভ কল্পনা করিতে পারে ? সংসার অবিদ্যামূলক এই যে অনাদি সংসার, ইহা কৰ্ম্মমূলক। যে দুধৰ্ম্ম কৰে, তাহার হয় হীন গতি, আর যে সাধু কৰ্ম্ম করে, সে স্বগতি লাভ করে। ব্ৰহ্মাদি দেবগণও কৰ্ম্ম-ফলে নিজ নিজ ক্ষমতা লাভ করিয়াছে। মানবলোক, স্বর্গলোক সমুদ্রায়ই কর্মের ফল। ভারতের প্রায় সমুদায় দর্শন ও ধৰ্ম্ম শাস্ত্রের প্রধান উদ্বেগু—কিসে সংসার হইতে মুক্তি লাভ করা যায়। গোতমের ধৰ্ম্মেরও মুখ্য উদ্বেগু সংসার হইতে মুক্তিলাভ । তাহার ধৰ্ম্মে যাহারা সিদ্ধ হইয়াছেন, তাহার এই পৃথিবীতেই মুক্তি লাভ করিয়াছেন। মৃত্যুর পরে তাহ+ দিগকে আর সংসার-গতি প্রাপ্ত হইতে হইবে না । এ ধৰ্ম্মে যাহার নিয়-সাধক, তাহারাও মুক্তি লাভ করিবে, তবে এ জন্মে নহে। এক মাত্র সিদ্ধ পুরুষই মুক্ত, আর সকলেই বদ্ধ। কেবল মানবই যে বদ্ধ তাহা নহে ; ইন্দ্র, প্রজাপতি, ব্ৰহ্মাদি দেবগণও সংসার-আবৰ্ত্তে ঘূর্ণায়মান হইতেছে। সংসার অবিদ্যা-প্রস্থত। যাহারা সংসারে বিচরণ করিতেছে তাহারা সকলেই অবিদ্যা-গ্রস্ত। এমনকি মহাব্ৰহ্মাও অবিদ্যাকে অতিক্রম করিতে পারেন নাই। তিনিও নিত্য নিত্য বিবেক-বিহীন। তিনিও অনিত্য ও