৩র সংখ্যা } পরভূতিকা ७२१ করিতে লাগিল। খানিক পরে সুবীরকে ভবানীর কোলে ফিরাইয়া দিয়া বলিলেন,"বেহাই মশায়, আপনার পরামর্শই ঠিক। যেীমা খোকাকে নিয়ে কিছুকাল এখন এখানেই থাকুন। ছোট ছেলে, কখন কি দরকার হয়, মফঃস্বলে, সহর হ'লেও সব জিনিব সব সময় পাওয়া যায়না। যত্ব আদরের কোনো ঐটাই এখানে হবেন, তা জানি। আর টাকা যখন দরকার আমাকে জানালেই তারপর দিন পাবেন।” মহেশবাবু বলিলেন, "আর কীট। দিন থেকে ধান না ? থোকার সঙ্গে আলাপ পরিচয় হোক, ভাল ক’রে ” প্রমদাবাবু ক্ষীণ হাসি হালিয়া বলিলেন, "আর মায়ার বন্ধনে জড়াব না নিজেকে। খোকা বেঁচে থাক, ভাল থাক, দুর থেকেই তাকে আশীৰ্ব্বাদ করব। উদয় আসে-টাসে এদিকে ?” মহেশ বাবু বলিলেন, “কৈ না, থোকা যেদিন হল, সেদিন একবার এসেছিল ডাক্তার আর নসর্ণ নিয়ে। তখন আর দরকার নেই শুনে চ’লে গেল, ছেলেকে দেখেও যায়নি।” উদয়ের জ্যাঠামশায় বলিলেন, "ছ" লাখ টাকা হাত ছাড়া হওয়ার দুঃখটা খুবই লেগেছে দেখছি। যেমন বাপ তার তেমন বেট। সারদা আর ঐ লক্ষ্মীছাড়া মিলে যদি যত বদ খেয়াল ক'রে নিজেদের জমিদারীর অংশটা না খোয়াত তাহলে আজ আর ছোড়াকে পরের টাকার প্রত্যাশায় ই ক'রে থাকৃতে হ’ত না। এককালে বাজে খরচ আমরাও কি না করেছি। কিন্তু সময়ে সাম্লেও গেছি।” মাসখানিক কাটিয়া গেল। ভানুমতী আজকাল বেশ সারিয়া উঠিয়াছে। খোকার জন্য নিত্য নূতন গহনা আর পোষাকের ফরমাস করিয়া বাড়ী শুদ্ধ লোককে সে উত্যক্ত করিয়া তুলিয়াছে। মহেশবাবুর কোন পছন্দ নাই বলিয়া তিনি মেয়ের কাছে ক্রমাগত বকুনি খাইতেছেন। ভবানী গাল খাইতেছে অন্ত কারণে। বুড়ে বয়সে তাহার নাকি ভীমরতি হইয়াছে, সে কেবল টাকা জমাইবার চেষ্টা করে। থোকার সিস্কের জাম যদি প্রতি মাসেই ছোট হয়, এবং প্রতি মাগেই করাইতে হয়, তাহাতে ক্ষতি কি ? তাহার কি মাসে দশ বিশ টাক পোযাকে খরচ করিবার যোগ্যতাও নাই ? টাকা কড়ির ভার ইহার পর ভাস্থকে নিজের হাড়েই লইতে হইবে দেখা যাইতেছে। ভবানী স্থাসে, কথা বলেন । এক দিন সন্ধ্যার পর ভবানী কোথা হইতে বেড়াইয়৷ ফিরিল। ভানুমতী বলিল, “কোথায় গিয়েছিলি ? ছেলেট। ভারি চেঁচাচ্ছে, কিছুতেই তাকে রাখতে পারছি না।” ভবানী বলিল, “তোমার ধাত্রী যে চলল গে, তাই একটু তার ওখানে গিয়েছিলুম, দেখা করতে।” ভানুমতী জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাচ্ছে সে? আর আসবেন ?” ভবানী বলিল, “আর আস্বেলা বোধ হয় । বলে, বুড়ো ত হলুম, আর কতকাল খাটুব ? ছেলেপিলেও কিছু নেই। কে তার এক পিসি মরেছে, ওর নামে এক বাড়ী রেখে গেছে গিরিডিতে, সেইখানে গিয়ে ধাকৃবে বললে।” ভানুমতী বলিল, "ওম আমার সঙ্গে আর দেখাই হ’লন। তবে ? বেশ মানুষটা, ঠিক মায়ের মত ক’রে আমায় যত্ন করেছে। খোকার ভাতে তাঁকে সোনার হার দেব ঠিক করেছিলুম, ভাল বেনারসী শাড়ী দেব।” ভবানী বিষন্ন মুখে বলিল, “টাকা পাঠিয়ে দিও মা, তারা সেখান থেকেই খোকাকে আশীৰ্ব্বাদ করবে। সেই ঝি মাগী বসন্ত, তাকেও কিছু দিও, সেও খুব যত্ন ক’রে তোমার কাজ করেছে।” ভাতুমতী বলিল, “তা দেব বৈ কি, সকলকে দেব। তোকে ত থোকা বিয়েই করবে, কাজেই সব চেয়ে বেশী লাভ তোর ” ভবানী হাসিবার চেষ্টা করিল, তারপর ভামুর অলক্ষ্যে চোখ মুছিয়া চলিয়া গেল । (ক্রমশ:)
পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৪
অবয়ব