পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড বলিল যে, মহেশ যুগী লোকটী নিতান্ত নীরস প্রকৃতির, সে কবির মর্য্যাদ। সব সময়ে রাখিতে পারে না। তাহার সহিত বচসা হইলে চণ্ডীর ভাগে যাহা ঘটে, আজও সেইরূপ কিছু হইয়া থাকিবে। আমি নীরবে সেই বাড়ীটির পিছনে দাড়াইয়া শুনিলাম, কবি র্কাদিতে কঁদিতে বলিতেছে— ‘আমি যাব বাপের বাড়ী বাপের বাড়ী গেলে পরেই পায় ধরতে পারি ? ওরে, ও— স্বামীকে সে ইহার পরে যে-সব সম্বোধন করিতে লাগিল, কবিতা হইলেও আমি তাহা শ্রবণ করা অকুচিত মনে করিয়া, চক্ষুর তৃষা অক্ষুণ্ণ রাথিয়া সে-স্থান হইতে প্রস্থান করিলাম । পথের - এপাশেই পড়িল সিংহপাড় ; আমাকে বাতাসীর মার বাড়ীতে প্রবেশ করিতে দেখিয়া মেয়েটি অবাকৃ হইয়া দাড়াইল । আমি তাহাকে বলিলাম, ‘তুমি বাড়ী যাও, আমি এখানে একটু বস্ব। তখন সন্ধ্য হইয়াছে, ঘরের দাওয়ায় শীতল পাট বিছাইয়া আমাকে বসিতে বলিয়া বাতাসীর মা তুলসী-তলায় প্রদীপ দিতে গেল। মেয়েটি ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। বাড়ীতে আর কেহ তখন ছিল না, শুধু মা ও মেয়ে। বাতাসী রায়া-ঘরে কি করিতেছিল, আমাকে দেখিয়৷ নিকটে আসিল ; তাহার মা ফিরিয়া আসিলে সে তেমনি নীরবে চলিয়া গেল। বাতাসীর মা দাওয়ার উপরে দীপ রাখিতে চাহিলে আমি নিষেধ করিলাম। আমি বলিলাম, ‘আজ খুব বেড়িয়েছি, বাতাসীর মা । তবু তোমার বাড়ীর সামনে দিয়ে অম্‌নি চলে যেতে পারুলুম না, এখানেও একবার বেড়াতে এলুম।" সে মান হাসিয়া বলিল, “আমি কখনও ভাবিনি যে, আপনি এ বাড়ীতে আসবেন। দেশে এসেই আমার নামে যে-সব নিন্দে শুনেছেন, তা’তে ক’রে— ‘তোমার নিন্দে। আমি ভাবিয়া বলিলাম, ‘শুনেছি বটে তুমি পুরুষদের একটু-আমি কিন্তু তাতে নিন্দের কিছু দেখতে পাই না। দুইকে ষে দমন করে, বিশেষ মেয়ে হ’য়ে যে একাজ করতে পারে, আমি তার প্রশংসাই করি।” বাতাসীর মা উৎসাহের সহিত বলিল, এইজন্তই ত আমার এত নিৰ্ম্মে হয়, দিদি। আমি বুঝতে পারি না, এই দুটো জাতে এত তফাত হয় কেন ? যদি একটা মেয়ে না বুঝতে পেরে কোনো দোষ ক’রে ফেলে, পাড়া শুদ্ধ সবাই ছুটে আসে তা’কে শাসন করতে ; পুরুষরা যে কত অন্যায় করে, তাতে কেউ কিছু বলে না, তাদের সব দোষ বেমালুম চাপা পড়ে যায়। বিনা দোষেও কত মেয়েকে ভুগতে দেখলুম ; মহা অপরাধ করেও ওরা কেমন বুক ফুলিয়ে বেড়ায়। এইজন্তে ওজাতটার সঙ্গে আমার বিরোধ লেগেই রয়েছে। আমার সাম্নে কেউ কিছু করলে, তা তিনি গায়ের জমিদারই হোন না কেন, আমি তা’কে এমনি শাস্তি দিই, যেন কিছুদিন সে-কথা তার মনে থাকে। দুষ্টদের দমন করলে ভগবান ত তুষ্ট হবেন। মামুষের মুখের কথায় আমার কি ক্ষতি হবে, দিদি ? “সে তো সত্যি ; কিন্তু তুমি এইসব দুষ্টদের দমন যে কি ক’রে কর, আমি তা বুঝতে পার্লুম না, বাতাসীর মা। সাহস থাকৃলেই তো হ’বে না, ওদের সঙ্গে লড়তে হ’লে গায়ের জোরও খুবই দরকার । তোমার অবিখি এত জোর নেই যে, একটা জোয়ান পুরুষকে হারাতে পারে। " “কি যে বল, দিদিঠাকরুণ ] মা কালী শুম্ভ, নিশুম্ভ, আরও অনেক ভীষণ বলবান দৈত্যদের বিনাশ করেছিলেন সে কি শুধু গায়ের জোরে ? এসব কাজে সাহস আর বুদ্ধিরই বেশী দরকার, গায়ের জোর একটু অবিশুি চাই ; ওদের গায়েই বা এমন কি ! জোর ? দেখতেই সব এক-একটা হোমরা চোমর বুনো চেহারা, গায়ে এত কিছু জোর নেই যে, হারাতে পারা যাবে না। আরও একটা মজা দিদি, আমি লড়তে গিয়ে টের পেয়েছি, ওদের সইবার শক্তি একটুও নেই ; যে- । ব্যথা আমি অনায়াসে সইতে পারি, ওরা তাতে একেবারে । অস্থির হয়ে পড়ে! মেয়ের সাহস নেই বলেই ত | মরে, নইলে বুঝে ঘা দিতে পারলে ওরা সহজেই কাবু