৪র্থ সংখ্যা ] জীবনদোলা (to কেবল কাণে শুনিয়া গৌরীর দেহের ব্রাহ্মণ-রক্তধারা অণ্ডচিতার আশঙ্কার শিহরিয়া সরিয়া গিয়াছিল, আজ চোখে তাহার ক্লিষ্ট বেদনাহত মূৰ্ত্তি দেখিয়া সেই মদভাগ্যের প্রতিই গেীরীর অস্তরের ব্রাহ্মণ্য তাহার দাক্ষিণ্য ও করুণা জাগাইয়া তুলিল । কাছে আসিয়া একেবারে অকস্মাৎ চঞ্চলার হাতখানা ধরিয়া গৌরী বলিল, "চঞ্চল, তোমার মুখখান যে, ভাই, একেবারে শুকিয়ে গেছে। তুমি একটু শোও গিয়ে, তোমার কাজগুলো আমি ক’রে দিচ্ছি।” চঞ্চল বিন্মিত হইয়া গেীরার মুখের দিকে তাকাইল। এই গৌরীই না আজ কতদিন তাহাকে এড়াইয়া চলিয়াছে ? অাজ আবার সে এত কাছে আসে কেন ? চঞ্চলা একবার হাতখানা সরাইয়া লইতে গেল, কিন্তু পারিল না। গৌরী তাহাকে গল। জড়াইয়া একেবারে বুকের ভিতর টানির লইয়া বলিল, “ইস্, কি হ’য়ে গেছ । কাল সারারাত ঘুমোও নি, আমি টের পেয়েছি। যাও শীগগির মুখ-হাত ধুয়ে ঘরট। অন্ধকার করে শুয়ে পড় গিয়ে । আমি তোমার খাবার নিয়ে যাব এখন। আর মাসিমাকে বলব যে, তোমার আজ শরীর খারাপ আছে ।” চঞ্চলাকে প্রায় টানিয়া গৌরী দ্বরের বাহির করিয়া দিল । তাহার পর ফিরিয়া অনিমার কাপড়-চোপড় বদলাইয়া চুল আঁচড়াইয়। মুখ ধোওয়া খাওয়া ব্যাণ্ডেজ দেখা ইত্যাদি সারিয়া একটা বাংলা গল্পের বই এক হাতে দিয়া তাহাকে জানালার ধারে বসাইয়া দিল । সারাদিন চঞ্চলার খুঁটি-নাটি সমস্ত কাজ গৌরী করিয়া বেড়াইল । হৈমবতীকে বলিয়া তাহার সমস্ত খাবার ইত্যাদি উপরে পৌছাইয়া দিয়া আসিল ; চঞ্চলাকে মোটে ঘর হইতে বাহির হইতে দিল না । সন্ধ্যায় সঞ্জয় আসিল অমিমাকে একবার দেখিতে এবং নাইট ইস্কুলের ছেলেদের তদারক করিতে। আজ তাহার একলার আলিবার পাল ছিল, কিন্তু সে কোথা হইতে অপূৰ্ব্ব ও সঞ্জয়কে জোগাড় করিয়া দলে বেশ ভারী হইয়া আসিয়াছে। অনিমার হাতটা যেভাবে ভাণ্ডিয়াছে তাহাতে আর একজন ডাক্তার জানিবার যে বিশেষ দরকার ছিল তাহা মনে হয় না ; বাস্তবিক হাভখানা ভাঙেই নাই, শুধু হাড়ট সরিয়া গিয়াছে মাত্র। কিন্তু তবু সঞ্জয় শস্করকে সঙ্গে না করিয়া অনিমার ঘরে ঢুকিল क्र । ঘরের ভিতর কে যে আছে সঞ্জয় হয়ত মুখ তুলিয়া দেখিতই না, যদি না শঙ্কর গৌরীকে দেখিয়া কথা বলিয়া উঠিত। শঙ্কর বলিল, “কি হয়েছে রে, গৌরী, আমন ক’রে পড়ে গেল কি ক’রে, বেচারী ?” গেীরী বলিল, “বৃষ্টিতে সিঁড়িটা বড় পিছল হয়েছিল, তাই—” গৌরীর গলার স্বরে সঞ্জয় চমকিয়া মুখ তুলিয়া তাকাইল । গৌরী দেখিল ঝড় কেবল এক জায়গাতেই বহে নাই, সঞ্জয়ের মুখের সমস্ত দীপ্তি এবং হাসিও তাহ নিভাইয়া দিয়া গিয়াছে। কিন্তু সে ঝড়েতে শুধু সে যে চুইয়া পড়িয়াছে তাহা নয় ; তাহাকে দেখিলে মনে হয় সারারাত্রি সে যেন কোনো দানবের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছে । তাহার মুখের আনন্দ ও উৎসাহের দীপ্তি নিভিয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু চোখে আগুনের হল্কা ফুটিয়া উঠিয়াছে। গৌরী কল্পনায় যে নাট্যলীলার ছবি দেখিয়াছিল, ” সঞ্জয়কে দেখিয় তাহার সত্যতা সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোনো সন্দেহ রহিল না। যৌবনের মাধুর্য্য বাল্যস্থতির রসে মধুরতর হইয়া এই দুইটি মাহুষকে ষে পরস্পরের কাছে টানিয়া আনিতেছিল তাহ! বুঝিতে আর বাকি কি , মাছে ? কিন্তু নিষ্ঠুর ভাগ্যবিধাতা অন্তরালে বসিয়া ষে বজ্ৰ হানিয়াছেন তাহার আঘাত কি ইহার কাটাইয়া উঠিতে পারিযে, না পারিবার কোনো উপায় আছে ? চঞ্চল চপল ও গৌরী মূখন ছেলেদের সঙ্গে এই কাজে নামিয়াছিল তখন গৌরীর বিশ্বাস ছিল কাজে একাগ্রভা ও নিষ্ঠ দেখাইয়া কাজ কাহাকে বলে সে সকলকে দেখাইয়া দিৰে ] কিন্তু চঞ্চলার মত চট, করিয়া সকল কাজেয় হালট আগে আসিয়া ধরিবার ক্ষমতা তাহার ছিল না বলিয়া মনের ইচ্ছা যতই প্রবল হোক এবং কাজে নিষ্ঠ ষতই গভীর হোক, সঞ্জয় ও শঙ্করের চোখে লে চঞ্চলার পিছনে পড়িয়া গিয়াছিল। নিজের আচার নিষ্ঠ বজায় রাধিতে গিয়া কাৰ্য্যক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিম্বের
পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৪
অবয়ব