পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

_ 'ዓኒ8 প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ইহার কারণ পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে—এদেশে সকল বিষয়েই জনসাধারণের রূপরসজ্ঞান অতি নিম্নস্তরে নামিয়াছে স্বতরাং শিল্প কার্যের যাচাই, উপকরণের মূল্য দ্বারাই হইয়া থাকে। মোটামুটি একটা জাতি-বিচারও হয়, তাহ জিনিষটা দেশী ( অর্থাৎ নিকৃষ্ট ) বা বিলাতী ( অর্থাৎ উৎকৃষ্ট ) এই সম্পর্কে । এই প্রবন্ধের প্রথম অংশে (শ্রাবণের প্রবাসীতে) এইরূপ অবস্থার বিচারে বলা হইয়াছে যে, ইহার কারণ এ দেশের শিল্পকলায় সজীব, জাগ্রত ভাবের বা প্রাণের অভাব । বস্তুতঃই চতুর্দশ শতাব্দী হইতে বর্তমান সময় পৰ্য্যস্ত এদেশে অলঙ্কার শিল্পের (ও অন্ত শিল্পেরও) প্রাণ-বিয়োগই ঘটিতেছে । এই সময়ের মধ্যে বিদেশ জাত বা বিদেশী প্রভাবজনিত অনেক কিছু নূতন পদার্থ এদেশে আসিয়াছে । কিন্তু সে সকল নিদর্শনের আসার ফল বিশেষ কিছুই হয় নাই। মুমুঘু রোগীর উপর উত্তেজক (stimulant) প্রয়োগের ফলে সাময়িক বলাধানের ন্যায় সে সকল দ্রব্য এদেশীয় শিল্পীর ক্ষণস্থায়ী আর্থিক উন্নতিমাত্র করিয়াছে। ক্ষণস্থায়ী এই কারণে, যে, বিদেশী দ্রব্যের অন্ধ অমুকরণ মাত্র এদেশে হইয়াছে, তাহার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশী শিল্পীর পরিকল্পনার বা রচনা-কৌশলের মৌলিকত্ব অধিকারের কোনও চেষ্ট হয় নাই । মুঘল বাদশাহদিগের সময়ে পারস্ত, তাতার, আরব ইত্যাদি নানা দেশের গহনা এদেশে প্রচলিত হয়, কিন্তু সেদেশীয় গহন-শিল্পের পরিকল্পনা বা রচনাবৈচিত্র্য এদেশের শিল্পী স্থায়ীভাবে গ্রহণ বা অধিকার করিতে পারে নাই। হুমায়ুন বাদশাহের মহারাণী, ও সাম্রাজ্ঞী নূরজাহান, ইহার বিদেশ হইতে কারিগর অনাইয় গহন নিৰ্ম্মাণ করান। ভারতীয় কারিগর তাঁহা দেখিয়া "দুষ্টং তল্লিখিতং” মতে তাহার অন্ধ অমুকরণ করিয়াছে । সে গহনরি দোষ গুণ বিচার, তাহা কোন প্রথাকুসারে পরিকল্পিত ও রচিত, তাহার রচনায় বৈশিষ্ট্য কোথায়, তাহার উৎকৃষ্টতর নিদর্শন প্রস্তুত করিতে হইলে কিরূপে পরিকল্পনা করা উচিত, বিদেশীয় কারিগরের গহনা নিৰ্ম্মাণ প্রথার মধ্যে গ্রন্থণ বা পরিত্যাগ-যোগ্য কি আছে, এ সকল তত্ত্বের অনুসন্ধান বা ইহাতে অধিকার লাভের চেষ্টা কোনটাই সে করে নাই । ফলে এ দেশের গহনাশিল্পী বিদেশী শিল্পের কয়েকটি নিদর্শন মাত্র পাইয়াছে, বিদেশী শিল্পের প্রভাব বা জ্ঞান কিছুই পায় নাই । * এখন এদেশে সকল শিল্পেই ইয়োরোপীয় আদর্শ, রীতি ও মতবাদের সঙ্ঘর্ষ চলিয়াছে, যাহার ফলে ক্ষীণপ্রাণ হিন্দু শিল্পকলার সম্পূর্ণ নিৰ্ব্বাণ আসন্ন। বিদেশী শিল্প যে তাহার স্থান অধিকার করিতেছে তাহা নহে, কেন না প্রথমতঃ তাহা শিল্পের প্রকৃতিবিরুদ্ধ, তৎপরে দেশীয় শিল্পের ও শিল্পীর এতই অবনতি হইয়াছে যে, বিদেশীয় রীতি বা পদ্ধতি শিক্ষা দূরের কথা, বিদেশীয় নিদর্শনের যথাযথ অনুকরণও তাহাদের পক্ষে অসম্ভব । শিল্প ও শিল্পীর এরূপ অবস্থা হওয়ার প্রধান কারণ এই, যে, এদেশে রূপরসজ্ঞান লুপ্তপ্রায় । শিল্প কল কৌশলের উৎকৃষ্ট নিদর্শন কয়জনের মনে আনন্দ আনে ? উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট, মৌলিক পরিকল্পনা ও অন্ধ অনুকরণ, এই সম্বন্ধে গ্রভেদ বিচার, শিল্পীর পোষক স্থানে র্যাহারা আছেন র্তাহাদের মধ্যে, লক্ষে কয়জনের আছে ? স্থাপত্যকলার অলঙ্কার প্রসঙ্গে রস্কিন বলিয়। গিয়াছেন :–“অলঙ্কারের রম্যতার দুইটি কারণ আছে, প্রথম তাহার রূপ ও গঠনসৌন্দর্য্যরূপী সুক্ষ্ম গুণ, দ্বিতীয় তাহার রচনা ও নিৰ্ম্মাণ ব্যাপারে মানবের যত্ন ও প্রয়াসের পরিচয় ।••••••ইহার নির্মাণ কালে কতবার কত চিন্ত, কত ইচ্ছ, কত ব্যর্থ চেষ্ট ও মৰ্ম্মান্তিক হতাশ, ও সৰ্ব্বশেষে আশা ফলপ্রদ হওয়ায়, কত স্বথ ও আনন্দ, গিয়াছে ও আসিয়াছে, সে সকলের বিবরণ অলঙ্কারের প্রতি অংশে দেখাই তাহার আনন্দদানের প্রকৃত কারণ । বিচক্ষণের চক্ষের সম্মুখে তাহার এই ইতিহাস সহজেই প্রকট হয়। কিন্তু যদিই বা তাহা অজ্ঞাত থাকে, তাহ হইলেও কল্পনসাহায্যে উহা অহুমান করা হয়। কেননা

  • নুরজাহান গহনা-শিল্পের উৎকৰ্ষ সাধন ও নুতন মতাদি প্রবর্তনের চেষ্টা করিয়াছিলেন শোনা যায়। বোধ হয় তিনি অল্প মাত্রায় সঙ্কলও হইয়াছিলেন। কেননা পোষক ও পুরস্কার (Patron) উপর এই শিল্পের উন্নতি বা অবনতি সম্পূর্ণ নির্ভর করে।