পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०७ ।। * অত্যন্ত চঞ্চল—এক দণ্ড বসিয়া থাকিতে চায় না, একটা কিছু করিবার জন্ত বাস্তু। সৰ্ব্বদাই মেয়েদের সঙ্গে ঠাট। করিয়া লিরক্ত করিয়া তাহাদিগকে অস্থির করিয়া রাখিয়াছে । মেয়েরাও তাতাব প্রতি কেবলি তজ্জন করিতেছে, কিন্তু সুধীরকে নহিলে তাঙ্গদের কোনোমতেই চলে না। সার্কাস দেথাক্টতে, জুয়লজিকাল গার্ডনে লইয়া মাইতে, কোনো সথের জিনিস কিনিয়া আনিতে সুধীর সর্বদাক্ট প্রস্তুত । মেয়েদের সঙ্গে স্থপীরের অসঙ্কোচ পদ্যতার ভাব বিনয়ের কাছে অত্যন্ত নূতন এবং বিস্ময়কর ঠেকিল। প্রথমটা সে এইরূপ ব্যবহারকে মনে মনে নিন্দাই করিল কিন্তু সেই নিন্দার সঙ্গে একটু যেন ঈর্ষার ভাব মিশিতে লাগিল । বরদাসুন্দরী কঠিলেন—“মনে হচ্চে আপনাকে যেন দুই একবার সমাজে দেগেচি।" লিনয়ের মনে হঠল যেন তাতার কি একটা অপরাধ ধরা পড়িল । সে অনাবশ্ব)ক লজ্জা প্রকাশ করিয়া কহিল— “হা, আমি কেশব বাবুর বক্তৃতা শুনতে মাঝে মাঝে যাই ।” বরদাসুন্দর জিজ্ঞাসা করিলেন--“আপনি বুঝি কলেজে পড়চেন ?” বিনয় কহিল – “না, এখন হার কলেজে পড়িনে ৷” বরদী কহিলেন—“আপনি কলেজে কতদূর পয্যন্ত পড়েচেন ?" বিনয় কহিল—“এম এ পাস করেচি।” শুনিয়া এই বালকের মত চেহারা সবকের প্রতি বরদাসুন্দরীব শুদ্ধ হইল। তিনি নিঃশ্বাস ফলিয়া পরেশের দিকে চাহিয়া কহিলেন--“আমার মন্তু যদি থাকৃত তবে সেও এতদিনে এম এ পাস করে বের হত ।” বরদার প্রথম সন্তান মনোরঞ্জন নয় বছর বয়সে মারা গেছে। যে কোনো যুবক কোনো বড় পাস করিয়াছে, বা বড় পদ পাইয়াছে, ভাল বই লিথিয়াছে বা কোনো ভাল কাজ করিয়াছে শুনেন, বরদার তখনি মনে হয় মন্ত্র বাচিয় থাকিলে তাহার দ্বারাও ঠিক এইগুলি ঘটিত। যাহা হউক সে যখন নাই তখন বৰ্ত্তমানে জনসমাজে তাহার মেয়ে তিনটির গুণ প্রচারই বরদাসুন্দরীর একটা বিশেষ কৰ্ত্তব্যের মধ্যে ছিল। তাহার মেয়ের যে খুব পড়াশুনা করিতেছে একথা বরদা বিশেষ করিয়া বিনয়কে জানাইলেন ;–মেম প্রবাসী । [ १ब छान्न । তাহার মেয়েদের বুদ্ধি ও গুণপনা সম্বন্ধে কবে কি বলিয়াছিল, তাহাও বিনয়ের অগোচর রহিল না। যখন মেয়ে-ইস্কুলে প্রাইজ দিবার সময় লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর এবং তাহার স্ত্রী আসিয়াছিলেন, তখন তাহাদিগকে তোড়া দিবার জন্ত ইস্কুলের সমস্ত মেয়েদের মধ্যে লাবণ্যকেই বিশেষ করিয়া বাছিয়া লওয়া হইয়াছিল এবং গবর্ণরের স্ত্রী লাবণ্যকে উৎসাহজনক কি একটা মিষ্টবাক্য বলিয়াছিলেন তাহাও বিনয় শুনিল । অবশেষে বরদা লাবণ্যকে বলিলেন, “যে সেলাইটাব জন্তে তুমি প্রাইজ পেয়েছিলে সেইটে নিয়ে এস ত মা !” একটা পশমের সেলাই করা টিয়াপার্থীর মূৰ্ত্তি এই বাড়ির আত্মীয় বন্ধুদের নিকটে বিখ্যাত হইয়া উঠিয়াছিল । মেমের সহযোগিতায় এই জিনিষটা লাবণ্য অনেকদিন হইল রচনা করিয়াছিল--এই রচনায় লাবণ্যের নিজের কৃতিত্ব যে খুব বেশ ছিল তাহাও নহে–কিন্তু নুতন আলাপী মাত্রকেই এটা দেখাষ্টতে হঠলে সে ধরা কথা । পরেশ প্রথম প্রথম আপত্তি করিতেন কিন্তু সম্পূর্ণ নিষ্ফল জানিয়া এখন আর আপত্তিও করেন না। এই পশমের টিয়াপার্থীর রচনানৈপুণ্য লষ্টয়া যখন বিনয় দুই চক্ষু বিস্ময়ে বিস্ফারিত করিয়াছে তথম বেঙ্গার আসিয়া একথানি চিঠি পরেশের হাতে দিল । চিঠি পড়িয়া পরেশ প্রফুল্ল হইয়া উঠিলেন ; কছিলেন “বাবুকে উপরে নিয়ে আয়!" বরদ জিজ্ঞাসা করিলেন--"কে ?” পরেশ কহিলেন—“আমার ছেলেবেলাকার বন্ধু কৃষ্ণদয়াল তার ছেলেকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করবার জন্তে পাঠিয়েচেন ।” হঠাৎ বিনয়ের হৃৎপিণ্ড লাফাইয়া উঠিল এবং তাহার । মুখ বিবৰ্ণ হইয়া গেল। তাহার পরক্ষণেই সে হাত মুঠ করিয়া বেশ একটু শক্ত হইয়া বসিল—যেন কোনো প্রতিকুল পক্ষের বিরুদ্ধে সে নিজেকে দৃঢ় রাখিবার জন্ত প্রস্তুত হইয়া উঠিল। গোরা যে এই পরিবারের লোকদিগকে অশ্রদ্ধার সহিত দেখিবে ও বিচার করিবে ইহা আগে হইতেই বিনয়কে যেন কিছু উত্তেজিত করিয়া তুলিল । 2 o' t খুঞ্চের উপর জলখাবার ও চায়ের সরঞ্জাম সাজাইয়া চাকরের হাতে দিয়া সুচরিতা ছাতে আসিয়া বসিল এবং