পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ను প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । মোটে ৪২৭৭৬ চনার বিদেশী চিনি লইয়াছে ; সিন্ধু বাংলা বিষয়েও কাৰ্য্য করিবার উৎকৃষ্ট পাশ্চাত্য পদ্ধতি আমরা অপেক্ষ চিনি বর্জনে কৃতিত্ব দেখাষ্টয়াছে । ১৯০৭ সালের মার্চ মাসে সকল প্রদেশ অপেক্ষা বাংলায় বিদেশী কাপড় অধিক আমদামি হইয়াছে । ভারতে ১৯০৬ এপ্রেল হইতে ১৯০৭ ফেব্রুয়ারি পর্য্যস্ত ১১ মাসে ৬,৪৩,৩২৬ জোড়া কাপড় বয়ন হইয়াছে, গত পূৰ্ব্ব বৎসর অপেক্ষা ডবল । বম্বে প্রদেশেই অধিক কাপড় প্রস্তুত হইয়াছে । তৎপরে মধ্যপ্রদেশ, তৎপরে যক্ত প্রদেশ ও আজমীঢ় মাড়ো য়ার, তৎপরে বাংলা । আমরা স্বদেশী বলিয়া যতই চীৎকার করি না কেন, উপরের সংগৃহীত তত্ত্ব দেখিয়া স্বীকার করিতেই হইবে, বাংলা এথনো সকল বিষয়ে সকলের পশ্চাতে । বাক্যকৰ্ম্মে সামঞ্জস্ত না করিতে পারিলে আমাদের শুভ নাই । বাংলা সাবধান না হইলে ঘরে পরে কলঙ্কের পসরা মাথায় তুলিয়৷ দিবে। ১৯০৬-৭ সালে বাঙ্গল দেশে পুৰ্ব্ব বৎসর অপেক্ষা ৭ কোটি গজ কম বিলাতী কাপড় আমদানী হইয়াছিল। ইহা সুখের বিষয় । কিন্তু আবার আমদানী বাড়িয়া চলিয়াছে। এখন আমাদিগকে সাবধান হইতে হইবে । বিলাতী লবণের কাটুতিও অনেক কম হইয়াছিল । চিনি কিন্তু বেশী আসিয়াছিল যাহাই হউক, মোটের উপর আমরা কিছুতেই অহঙ্কত বা নিরুৎসাহ না হইয়া যেন স্বদেশী দ্রব্য উৎপাদন এবং বিদেশী দ্রব্য বর্জন, একসঙ্গে করিতে পারি, ইছাই প্রার্থনীয়। স্বদেশীত্ব ও বিদেশীবর্জনের মাত্র। ও প্রকার ভেদ । স্বদেশীত্ব ও বিদেশীবর্জন সম্বন্ধে সমুদয় বাঙ্গালী একমত নছেন । অনেকে স্বদেশীর পক্ষপাতী কিন্তু বিদেশবর্জন চান না । যাহারা স্বদেশী ও বিদেশীবর্জন দুই চান, তাহদের মধ্যেও সামান্ত সামান্ত মতভেদ আছে । আমরা পূৰ্ব্বেও এ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখিয়াছি । বৰ্ত্তমান প্রবন্ধেও কিছু বলিব । প্রথমে ইহা বলা আবশুক যে বিদেশী জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করিবার প্রণালী ও যন্ত্রাদি, এবং অন্তান্ত বজ্জন করিতে পারি না ; করা উচিতও নাই। বিদেশী বিলাসদ্রব্য, মাদকাদি অনিষ্টকর দ্রব্য, অহিতকর ফ্যাশন ও সামাজিক রীতিনীতি, প্রভৃতি সমুদয়ষ্ট বর্জনীয়। ফ্যাশন সম্বন্ধে ও মতভেদ দেখা যায় । কারণ এমন অনেক লোক আছেন র্যাঙ্গর সাহেবী পোষাক পরেন, কিন্তু পোষাক গুলি দেশী উপাদানে প্রস্তুত করাষ্টয়া থাকেন। এ সকল কথা ছাড়িয়া দিয়া কেবল জিনিষ সম্বন্ধে বিচার করিলে বলা ষায় যে, যে সকল জিনিষ ভারতবর্ষে বর্তমান সময়ে উৎপন্ন হয়, বিদেশী সে সকল জিনিয কেন আমাদের উচিত নয়। যে সকল জিনিয ভারতবর্ষে এথন উৎপন্ন হয় না, কিন্তু ভবিষ্যতে চেষ্টা করিলে শুইতে পারে, তৎসমুদয়, বিলাসদ্রব্য হইলে ত্যাগ করা উচিত ; প্রয়োজনীয় দ্রব্য হইলে যতদিন ভারতবর্ষে না হয়, ততদিন বিদেশী ব্যবহার করা যাইতে পারে। এমন অনেক জিনিষ আছে, যাহা ভারতবর্ষে উৎপন্ন বা প্রস্তুত হইতে পারে না । তৎসমুদয় বিলাসদ্রব্য হইলে, বর্জনীয় ; নতুবা ব্যবহার্য্য। কোনটি বিলাসদ্রব্য এবং কোনটি অবশু প্রয়োজনীয় তদ্বিযয়ে অবশু মতভেদ হইবে । ভারতবর্ষে উৎপন্ন বা প্রস্তুত সমুদয় দ্রব্যকেই আমরা স্বদেশী বলিয়া থাকি ; কিন্তু তন্মধ্যেও শ্রেণীবিভাগ আছে। তাহা ক্রমশঃ দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝান যাইতেছে। প্রথমেই ধরুন, লিখিবার ও ছাপিবার কাগজ, কলম, কালী, মুদ্রাযন্ত্র, ইত্যাদি । লিখিবার কাগজ, কলম ও কালী এখন সমস্তই দেশী পাওয়া যায়। তাহার মধ্যে একটু প্রকারভেদ আছে। লিখিবার কাগজের মধ্যে হাতের তৈয়ারী যে সকল অমসৃণ বা খসখসে চিঠির কাগজ আদি পাওয়া যায়, তাহাই সম্পূর্ণ দেশী। বাঙ্গলা দেশে যে সকল কলের কাগজ লিখিবার জন্ত এবং খবরের কাগজ, মাসিক পত্র ও পুস্তক ছাপিবার জন্য অনেকে ব্যবহার করেন, তাহ ঠিক দেশী নহে। উহা ভারতবর্ষে প্রস্তুত হয় বটে, কিন্তু উহার কল বিলাতী, মূলধন ও পরিচালকগণ বিলাতী, প্রধান কারিকরগণ বিলাতী, রাসায়নিক দ্রব্যাদি বিলাতী ; কেবল ঘাস, খড় আদি উপাদান এবং মজুরগণ দেশী। বাঙ্গল দেশে দেশীলোকদের কাগজের কল একটিও নাই। অযোধ্য প্রদেশে লক্ষ্মেীয়ে দেশী লোকদের পরিচালিত একটি কাগজের