পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । ] প্রত্যেক লোকেই তাকার শত্রু । অথচ রাস্তার লোক তাহার গা ঘেষিয় তাহার পাশ দিয়া চলিয়াছে ; আপিসের বাবুর বাহিরে আসিয়া ঠোঙায় করিয়া জল খাইতেছেন, তাহার দিকে কেহ তাকাইতেছেন না ; ময়দানের ধারে অলস পথিক মাথার নীচে হাত রাখিয়া একটা পায়ের উপর আর একটা পা তুলিয়া গাছের তলায় পড়িয়া আছে ; স্তাক্রাগাড়ি ভৰ্ত্তি করিয়া হিন্দুস্থানী মেয়ের কালীঘাটে চলিয়াছে; একজন চাপরাসি একথান চিঠি লইয়া হরলালের সম্মুখে ধরিয়া কছিল, বাবু ঠিকানা পড়িয়া দাও,–যেন তাহার সঙ্গে অন্ত পথিকের কোন প্রভেদ নাই, সেও ঠিকানা هو و **** تهیه ۹" نامه ۹۰۸چه - ** পড়িয়া তাহাক বুঝাইয়া দিল । ক্রমে আফিস বন্ধ হইবার সময় আসিল । বাড়িমুখো গাড়িগুলো আপিস মহলের নানা রাস্ত দিয়া চুটিয়া বাহির হইতে লাগিল। আপিসের বাবুরা ট্র্যাম ভৰ্ত্তি করিয়া থিয়েটারের বিজ্ঞাপন পড়িতে পড়িতে বাসায় ফিরিয়া চলিল। আজ হইতে হরলালের আপিস নাই, আপিসের ছুটি নাই, বাসায় ফিরিয়া যাইবার জন্ত ট্যাম ধরিবার কোন তাড়া নাই । সহরের সমস্ত কাজকৰ্ম্ম, বাড়িঘর, গাড়িজুড়ি, আনাগোনা হরলালের কাছে কখনও বা অত্যন্ত উৎকট সত্যের মত দাত মেলিয়া উঠিতেছে কখন বা একবারে বস্তুহীন স্বপ্নের মত ছায়া হইয়া আসিতেছে । আহার নাই, বিশ্রাম নাই, আশ্রয় নাই, কেমন করিয়া যে হরলালের দিন কাটিয়া গেল তাহ সে জানিতেও পারিল না । রাস্তায় রাস্তায় গ্যাসের আলো জলিল—যেন একটা সতর্ক অন্ধকার দিকে দিকে তাহার সহস্র ক্রুর চক্ষু মেলিয়া শিকারলুদ্ধ দানবের মত চুপ করিয়া রহল । রাত্রি কত হইল সে কথা হরলাল চিন্তাও করিল না । তাহার কপালের শিরা দব, দব, করিতেছে ; মাথা যেন ফাটিয়া যাইতেছে ; সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলিতেছে ; পা আর চলে না । সমস্ত দিন পৰ্য্যায়ক্রমে বেদনার উত্তেজনা ও অবসাদের অসাড়তার মধ্যে মার কথা কেবল মনের মধ্যে যাতায়াত করিয়াছে— কলিকাতার অসংখ্য জনশ্রেণীর মধ্যে কেবল ঐ একটি মাত্র নামই শুষ্ককণ্ঠ ড়েদ করিয়া মুখে উঠিয়াছে—ম, মা, মা । - আর কাহাকেও ডাক্ষিবার नाहे । भtन कब्रिज, ब्रांख्रि यथन নিবিড় হইয়া আসিবে, কোন লোকই যখন এই অতি সামান্ত হরলালকে বিনা অপরাধে অপমান করিবার জন্ত জাগিয়া মাষ্টার মশায় । Ꮌb~Ꮌ থাকিবে না, তখন সে চুপ করিয়া তাহার. মায়ের কোলের কাছে গিয়া গুইয়া পড়িবে—তাহার পরে ঘুম যেন আর না ভাঙে ! পাছে তার মার সম্মুখে পুলিসের লোক বা আর কেহ তাহাকে অপমান করিতে আসে এই ভয়ে সে বাসায় যাইতে পারিতেছিল না । শরীরের ভরে যখন আর বহিতে পারে না এমন সময় হরলুাল একটা ভাড়াটে গাড়ি দেখিয়া তাহাকে ডাকিল। গাড়োয়ান জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাইবে ?” হরলাল কহিল “কোথাও না । থানিকক্ষণ হাওয়া খাইয় বেড়াইব ।” গাড়োয়ান সন্দেহ করিয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই হরলাল তাহার হাতে আগাম ভাড়া একটা টাকা দিল । সে গাড়ি তখন হরলালকে লইয়া ময়দানের রাস্তায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। তখন শ্রান্ত হরলাল তাহার তপ্ত মাথা খোলা জানলার উপর রাখিয়া চোখ বুজিল। একটু একটু করিয়া তাহার সমস্ত বেদন যেন দূর হইয়া আসিল । শরীর শীতল হইল। মনের মধ্যে একটি সুগভীর সুনিবিড় আনন্দপূর্ণ শান্তি ঘনাইয়া আসিতে লাগিল । একটা যেন পরম পরিত্রাণ তাহাকে চারিদিক হইতে আলিঙ্গন করিয়া ধরিল । সে যে সমস্ত-দিন মনে করিয়াছিল কোথাও তাহার কোনো পথ নাই, সহায় নাই, নিস্কৃতি নাই, তাহার অপমানের শেষ নাই, দুঃখের অবধি নাই, সে কথাটা যেন একমুহূর্তেই মিথ্যা হইয় গেল। এখন মনে হইল, সে ত একটা ভয় মা এ, সে ত সত্য নয়। যাহা তাহার জীবনকে লোহার মুঠিতে আঁটিয়া পিষিয় ধরিয়াছিল;হরলাল उॉ९८क ठाॉन्न কিছুমাত্র স্বীকার করিল না ;—মুক্তি অনন্ত আকাশ পূর্ণ করিয়া আছে, শাস্তির কোথাও সীমা নাই। এই অতি সামান্ত হরলালকে বেদনার মধ্যে অপমানের মধ্যে অদ্যায়ের মধ্যে বন্দী করিয়া রাখিতে পারে এমন শক্তি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনো রাজা মহারাজারও নাই। যে আতঙ্কে সে আপনাকে আপনি বাধিয়াছিল তাহ সমস্তই খুলিয়া গেল। তখন হরলাল আপনার বন্ধনমুক্ত হৃদয়ের চারিদিকে অনন্ত আকাশের মধ্যে অনুভব করিতে লাগিল, যেন তাহার সেই দরিদ্র মা দেখিতে দেখিতে বাড়িতে বাড়িতে বিরাট এই ময়দানের রাস্তায়