পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লর্ড কেল্‌ভিন
৮৯

মানুষের প্রাত্যহিক কার্য্যে লাগাইতে যেন ঘৃণা বা অপমান জ্ঞান করিতেন। বড় বড় প্রাচীন বৈজ্ঞানিকগণ তাঁহাদের জীবনের নানা কার্য্যে যে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয় প্রদান করিয়াছেন, তাহা দ্বারা হাতেকলমে কাজ করার কৌশল তাঁহারা অতি সহজেই আয়ত্ত করিতে পারিতেন। সুতরাং ঐ ভাবটা তাঁহাদের বুদ্ধির জড়িমাপ্রসূত নয়। কাজেই স্থানকালপাত্রের এক অদ্ভুত সম্মিলনজাত ঘৃণা বা অপমানবোধকেই তাহার উৎপত্তি বলিতে হয়। কথিত আছে মার্সিলসের (Marcellus) এর নৌবাহিনী সিরাকিউসের বিরুদ্ধে পরিচালিত হইতেছে জানিয়া, সুপ্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক আর্কিমিডিস্ অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সহিত বলিয়াছিলেন, তাঁহার নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের তুলনায় নৌবাহিনীর ব্যবস্থা অতি তুচ্ছ। বলা বাহুল্য আর্কিমিডিসের নৌ-চালনযন্ত্র তখন প্রস্তুতই হয় নাই, কেবল কাগজেকলমে তাহার উপযোগিতা দেখিয়া, তিনি মার্সিলসের নৌবাহিনীকে অকিঞ্চিৎকর সাব্যস্ত করিয়াছিলেন। ইঁহারি অসাধারণ শাস্ত্রজ্ঞানকে কাজে লাগাইবার জন্য রাজা হায়রোকে (Hiero) কত কষ্ট স্বীকার করিতে হইয়াছিল, পাঠক তাহার গল্প অবশ্যই শুনিয়াছেন। ইউডক্সস্ (Eudoxus) ও আকাইটাস্ নামক দুইজন প্রাচীন পণ্ডিত সর্ব্বপ্রথমে জ্যামিতিকে ব্যাবহারিক জ্যামিতিতে পরিণত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। কাজেই জ্যামিতিকে পুঁথির পাতা হইতে বাহির হইয়া মুটে মজুর ও কলকারখানার ভিতরে আসিয়া দাঁড়াইতে হইয়াছিল। জগদ্বিখ্যাত পণ্ডিত প্লেটো তখন জীবিত ছিলেন। এ পর্য্যন্ত যে শাস্ত্র কেবল পণ্ডিতমণ্ডলীরই সম্পত্তি ছিল, তাহার এই দুর্দশা তাঁহার সহ্য হয় নাই। প্লেটো পরুষ ভাষায় ঐ স্বেচ্ছাচারীদিগকে ভর্ৎসনা করিয়াছিলেন। বলা বাহুল্য, আধুনিক বৈজ্ঞানিকদিগের জীবনে এই দুঃসহ পাণ্ডিত্যাভিমান এখন আর মোটেই নাই। ইঁহারা একাধারে কঠোর তপস্বী ও অক্লান্তকর্মী।