পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণিদেহের উত্তাপ
১২৩

পোড়াইতে আরম্ভ করিলে তাহাই জাগ্রত তাপ শক্তিতে পরিণত হইয়া কলকে চালায়। প্রাণিদেহের ভিতরে পড়িয়া ভুক্ত দ্রব্যের সুপ্ত শক্তিও ঠিক সেই প্রকারে জাগিয়া উঠে এবং দেহকে উত্তপ্ত করিয়া ও শরীরের পেশীগুলিকে চালাইয়া উদাহরণের কয়লার শক্তির ন্যায়ই আত্মপরিচয় দিতে আরম্ভ করে। বাষ্পযন্ত্র ও দেহযন্ত্রের আকার প্রকার ও গঠনোপাদানে অসাদৃশ্য অমিল থাকিলেও, বৈজ্ঞানিকের চক্ষে উভয়ই যন্ত্র।

 আমাদের টাকাকড়ির জমাখরচে, জমার অঙ্ক কখন কখন খরচের অঙ্ক অপেক্ষা ছোট হইয়া দাঁড়ায়। প্রকৃতির জমাখরচে এই ফাজিল হিসাবের স্থান নাই। যে শক্তি লইয়া হিসাব পত্তন করা হয়, খরচের খতিয়ানে তাহার কড়াক্রান্তির অমিল দেখা যায় না। পরিমাণ শক্তি কয়লায় সুপ্ত থাকে, পোড়াইবার সময় ঠিক তাহাই তাপ প্রভৃতি প্রত্যক্ষ শক্তিতে পরিণত হয়। জমাখরচে সুপ্ত ও জাগ্রত শক্তির মধ্যে একটুও অমিল দেখা যায় না। কোন ক্ষুদ্র প্রাণীকে তাপপরিমাপক (Calorimeter) যন্ত্রের ভিতরে আবদ্ধ রাখিয়া সেটি ঘণ্টায় কত তাপ উৎপন্ন করিতেছে হিসাব করিতে গেলে দেখা যায়, পরীক্ষাকালে সে যতটা ভুক্ত দ্রব্য হজম করে, তাপের পরিমাণও সেই অনুসারে বাড়িয়া চলে। সুতরাং দেখা যাইতেছে কাঠ বা কয়লাকে কলে ফেলিয়া জ্বালানো ও খাদ্যদ্রব্যকে উদরে ফেলিয়া হজম করা একই ব্যাপার। দাহ্য বস্তুতে যে শক্তি সুপ্তাবস্থায় থাকে, পোড়াইতে গেলে যেমন তাহার অধিক এক কণা শক্তিও প্রকাশ পায় না, তেমনি ভুক্ত দ্রব্যের যে অংশটাকে পরিপাক করা হয় তাহার অন্তর্নিহিত শক্তির অধিক এক কণাও দেহে উৎপন্ন হয় না। কয়লার দহন ও খাদ্যের হজম, এই দুয়ের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য এই যে, দহনে দাহ্য বস্তুর সুপ্তশক্তি অতি অল্পকাল মধ্যে জাগ্রত হইয়া পড়ে, হজমে ভুক্ত দ্রব্যে সেই শক্তি বন্ধনমুক্ত হইতে অধিক সময় লয়। এই জন্যই