পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অমৃত ও গরল
১৬১

 এখন মনে করা যাউক, কোটী কোটী চঞ্চল পরমাণু দ্বারা যে জীব-দেহ গঠিত রহিয়াছে, তাহাতে এমন একটি পদার্থ প্রবেশ করিল, যাহার পরমাণু জীবপরমাণুর সহিত মিলিয়া গেল। বলা বাহুল্য ইহাতে উভয়ের পরমাণুই সাম্যাবস্থায় আসিয়া দাঁড়াইবে—জীবের মৃত্যু হইবে। আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ জীবশরীরে বিষের এই প্রকার কার্য্যই আবিষ্কার করিয়াছেন। বিষ শরীরে প্রবেশ করিলেই দেহের মুক্ত পরমাণুগুলির সহিত স্থায়িভাবে মিলিয়া যায়, কাজেই ইহার পর আর রাসায়নিক কার্য্য চলে না; প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু যাহা সুখাদ্য তাহা দেহে প্রবেশ লাভ করিলে শরীরের পরমাণুর সহিত সে-গুলির ঐপ্রকার স্থায়ী মিলন ঘটে না, কাজেই অমৃতপানে জীবের মৃত্যু হয় না।

 এই প্রসঙ্গে সুপ্রসিদ্ধ জর্ম্মান্ অধ্যাপক এর্‌লিক্‌ (Ehrlich) সাহেব যে এক নূতন সিদ্ধান্ত প্রচার করিয়াছেন, সেটিও উল্লেখযোগ্য মনে হইতেছে। জীবের শরীর কতকগুলি কোষের সমষ্টি ব্যতীত আর কিছুই নয়। একএকটি কোষ যেন একএকটি ক্ষুদ্র কারখানার ঘর, তাহাতে যে কত রাসায়নিক কার্য্যে কত দ্রব্য প্রস্তুত হইতেছে, তাহার ইয়ত্তাই হয় না; তা ছাড়া কোন্ প্রণালীতে ঐসকল কার্য্য চলিতেছে তাহা কল্পনা করা ব্যতীত এখন আমাদের আর অন্য উপায় নাই। এর্‌লিক্ সাহেব বলিতেছেন, প্রত্যেক জীবকোষের গায়ে অদ্ভূতশক্তিসম্পন্ন কতকগুলি অণু আছে। এই অণুগুলির ভিতরে যে-সকল পরমাণু আছে দেগুলি স্থায়িভাবে পরস্পরের সহিত মিলিয়া থাকে না। প্রাণ-রক্তে যে পুষ্টিকর পদার্থ থাকে তাহা টানিয়া লইয়া ইহারা জীবকোষে চালাইয়া দেয়; কোষ তাহা দেহস্থ করিয়া পুষ্টিলাভ করিতে থাকে। কাজেই দাঁড়াইতেছে এই যে, উক্ত অণুগুলিই বাহির হইতে খাদ্য আনিয়া কোষের বৃদ্ধিকার্য্যে সাহায্য করে, এবং ইহাদের ভিতরকার পরমাণুর মধ্যে স্থায়ী বন্ধন নাই বলিয়াই, ক্ষণিকের জন্য পুষ্টিকর জিনিষের