পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মঙ্গলগ্রহ
২৩৭

গ্রহের ভ্রমণপথের মধ্যেকার ব্যবধানকেও ঠিক সেই প্রকার অপরিবর্তূগত দেখা যাইত। গ্রহমাত্রেই এক একটি বৃত্তাভাস, অর্থাৎ ডিম্বাকার (Elliptical) পথ অবলম্বন করিয়া সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করে, এবং সূর্য্য সেই বৃত্তাভাস ক্ষেত্রেরই একটি অধিশ্রয় (Focus) অবলম্বন করিয়া স্থির থাকে। কাজেই পরিভ্রমণপথগুলির পরস্পর ব্যবধান কখনই এক দেখা যায় না। মঙ্গলের তুলনায় পৃথিবী সূর্য্যের নিকটতর। এজন্য পৃথিবী যে বৃত্তাভাসপথে সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করে, তাহা মঙ্গলের পথের ভিতরে থাকিয়া যায়। তা’ছাড়া পথ দুইটির অবস্থান এরূপ বিচিত্র যে, যখন মঙ্গল সূর্য্যের নিকটতম স্থান অধিকার করে, তখন পৃথিবী সূর্য্য হইতে অনেক দূরে পড়িয়া থাকে।

 পৃথিবীর ভ্রমণপথ মঙ্গলের ভ্রমণপথের মধ্যবর্ত্তী হওয়ায়, মঙ্গলের পথের তুলনায় পৃথিবীর পথ কিছু ছোট হইয়া পড়িয়াছে, এবং তা’র উপর আবার পৃথিবীর পরিভ্রমণ বেগ মঙ্গলের বেগের তুলনায় কিঞ্চিৎ দ্রুততর। এই সকল কারণে পৃথিবী যে সময়ে একবার সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করে, মঙ্গলের পূর্ণ প্রদক্ষিণ সে সময়ে শেষ হয় না। কাজেই নিকটবর্ত্তী হইয়া দেখা সাক্ষাৎ করা প্রতি বৎসর ইহাদের ভাগ্যে ঘটিয়া উঠে না। হিসাব করিয়া দেখা গিয়াছে, মঙ্গল ও পৃথিবী তাহাদের নির্দ্দিষ্ট পথে ভ্রমণ করিতে করিতে প্রায় দুই বৎসরে এক একবার পাশাপাশি আসিয়া দাঁড়ায়। আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি, পৃথিবী ও মঙ্গলের ভ্রমণপথের ব্যবধান সকল স্থানে সমান নয়; সুতরাং উভয়ের মিলনকালে ব্যবধানটা যদি খুব ছোট না হয়, তবে পর্য্যবেক্ষণের অত্যন্ত অসুবিধা আসিয়া পড়ে। গ্রহদ্বয়ের ভ্রমণপথের যে দুইটি স্থানের দূরত্ব সর্ব্বাপেক্ষা অল্প, ১৮৯২ সালে এবং গত বৎসরে মঙ্গল ও পৃথিবী সেইস্থানে আসিয়া মিলিয়াছিল। জ্যোতিষিগণ এই দুই বৎসরে মঙ্গললোকের অনেক নূতন তথ্য সংগ্রহ করিবার সুযোগ পাইয়াছিলেন।