পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ডপ্‌লার সাহেবের সিদ্ধান্ত
৬৩

বিবেচনা করিলে দেখা যায়, দণ্ডায়মান লোকটির গায়েই অধিক ঢেউ স্পর্শ করিতেছে। কারণ সন্তরণশীল লোকটি ঢেউয়ের সহিত দ্রুত সাঁতরাইতে আরম্ভ করায় পিছনের ঢেউগুলি বিলম্বে আসিয়া তাহাকে ধাক্কা দিবে। কাজেই ধাক্কার সংখ্যা অল্প হইয়া পড়িবে। দণ্ডায়মান ব্যক্তি যদি দশ মিনিট সময়ে দুই শত ঢেউয়ের ধাক্কা পাইয়া থাকে, তবে এই ক্ষেত্রে সন্তরণকারী লোকটি হয় ত এক শত পঁচাত্তরের অধিক ঢেউয়ের ধাক্কা পাইবে না।

 ঢেউয়ের ধাক্কা পাওয়ার এই যে উদাহরণ দেওয়া হইল, ইহারই সাহায্যে জ্যোতিঃশাস্ত্রের ও শব্দতত্ত্বের যে কত রহস্যের মীমাংসা হইয়াছে সত্যই তাহার ইয়ত্তা করা যায় না। ঈথর, বাতাস বা জল, যে কোন পদার্থে যখন ঢেউ উঠে, তখন তাহাতে মজ্জমান নিশ্চল পদার্থ অপেক্ষা সচল পদার্থ যে, কখন অধিক এবং কখন কম ঢেউয়ের ধাক্কা পায়, ইহা বিজ্ঞানে Doppler’s Principle অর্থাৎ ডপ্‌লার সাহেবের সিদ্ধান্ত বলিয়া প্রসিদ্ধ।

 মনে করা যাউক, একখানি রেলের এঞ্জিন দূরে দাঁড়াইয়া বাঁশি বাজাইতেছে এবং একজন শ্রোতা অদূরে ষ্টেশনের প্লাট্‌ফরমে দাঁড়াইয়া আছে। বাঁশি বাজিবার সময় বাতাসে যে ঢেউ তুলিতেছে তাহা শ্রোতার কর্ণে প্রবেশ করিয়া তাহাতে নিশ্চয়ই একটি শব্দ শুনাইবে। এখন মনে করা যাউক, সেই এঞ্জিনটিই বাঁশি বাজাইতে বাজাইতে ষ্টেশনের দিকে অগ্রসর হইতেছে। পূর্ব্বে দণ্ডায়মান গাড়ির বাঁশির কম্পনে বাতাসে যে প্রকার ঢেউ হইতেছিল, এখনো তাহাই হইবে বটে, কিন্তু গাড়িখানি বাঁশি বাজাইয়া শ্রোতার দিকে ছুটিয়া আসায়, তাহার শ্রবণেন্দ্রিয়ে পূর্ব্বাপেক্ষা অনেক অধিক শব্দতরঙ্গের ধাক্কা লাগিবে। কিন্তু শব্দতরঙ্গের সংখ্যারই উপর সুরের উঁচুনীচু নির্ভর করে। প্রতি সেকেণ্ডে বারো শত বার ধাক্কা পাওয়ায় আমরা যে