পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
প্রাকৃতিকী

আসিয়া প্রবলবেগে ধাক্কা দিলে, প্রথমে আহত স্থান একটি প্রবল চাপ পায়, কিন্তু পর মুহূর্ত্তে পদার্থটি প্রতিহত হইয়া বিপরীত দিকে চলিতে আরম্ভ করিলে, তখন আহত স্থানে আর কোন চাপই থাকে না। লর্ড কেল্‌ভিন্ বলিতেছেন, কেন্দ্রাভিমুখী পরমাণুগুলির ঘাত-প্রতিঘাতে, কেন্দ্রের নিকটবর্ত্তী স্থানের চাপ কিছুকাল ধরিয়া ঠিক্ পূর্ব্বোক্ত প্রকারে তালে তালে বাড়িয়া কমিয়া চলিয়াছিল। পৃথিবীর অভ্যন্তরের এই চঞ্চলতা কত দিন ছিল ঠিক্ বলা যায় না। সম্ভবতঃ পুরমাণুগুলি কালক্রমে অণুতে পরিণত হইয়া পড়িলে পৃথিবীর ঐ অস্থিরতার অবসান হইয়াছিল। লর্ড কেল্‌ভিন্ বলেন, এই অবস্থায় পৃথিবী তরল পদার্থময় ছিল, এবং এইখানেই সৃষ্টির আরম্ভ। পৃথিবী সেই সময় সূর্য্যের ন্যায় উজ্জল ছিল, এবং তাপ বিকিরণ করিতে করিতে ইহার বহুকাল পরে ভূপৃষ্ঠের উপরটা এক কঠিন আবরণে আবৃত হইয়া পড়িয়াছিল।

 কোন জিনিষকে সঙ্কুচিত করিলে, তাহা দ্বারা জিনিষটিতে তাপের উৎপত্তি হয়। এজন্য পৃথিবীর উপরিভাগ কঠিন আবরণে আচ্ছন্ন হওয়া সত্ত্বেও, তাহার ভিতরের তাপ সহসা কমে নাই। সঙ্কুচনের প্রভাবে ভিতরের উষ্ণতা বরং বহুকাল ধরিয়া বাড়িয়াই চলিয়াছিল; এবং পরে তাপের মাত্রা চরম হইয়া দাঁড়াইলে, উপরের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর ভিতরটাও শীতল হইতে আরম্ভ করিয়াছিল।

 তরল পদার্থের উপরের অংশ জমাট বাঁধিয়া ঘনতর ও ভারি হইয়া পড়িলে, উপরকার ভারি জিনিষগুলি ভাঙ্গিয়া চুরিয়া নীচে নামিয়া পড়ে। কেল্‌ভিন্ অনুমান করিতেছেন, পৃথিবীর কঠিন আবরণের ঐ প্রকার ভাঙ্গাচোরা এককালে পৃথিবীতে বহুদিন ধরিয়া চলিয়াছিল, এবং ইহাতে পৃষ্ঠদেশ হইতে আগত বৃহৎ বৃহৎ কঠিন স্তূপগুলি ভিতরকার উত্তপ্ত তরল পদার্থে সঞ্চিত হইতে আরম্ভ করিয়াছিল। লর্ড কেল্‌ভিন এই সকল অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া বলিতেছেন,