পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
প্রাকৃতিকী

করিয়াছেন। ইনি বলিয়াছেন, কালক্রমে পৃথিবীর কঠিন আবরণটি খুব গভীর হইয়া পড়িয়াছে বটে, কিন্তু তাহার ভাঙ্গাচোরার কাজ এখনো পূর্ব্বের ন্যায়ই চলিতেছে। কাজেই ভূপৃষ্ঠের গভীর অংশের মাটিপাথর যখন ভাঙ্গিয়া ভূগর্ভস্থ দ্রবপদার্থে ডুবিতে আরম্ভ করে, তখন সেই দ্রবপদার্থ উছলিয়া বহির্গত হইবার জন্য ছিদ্র অন্বেষণ করে। আগ্নেয়গিরির গহ্বরগুলি ভূগর্ভের খুব গভীর অংশ পর্য্যন্ত বিস্তৃত থাকে। কাজেই ঐ সকল ছিদ্রপথে সেই উচ্ছ্বলিত গলিত ধাতু যে, বাহির হইয়া ভূপৃষ্ঠকে প্লাবিত করিবে তাহাতে আশ্চর্য্য কি? ইহাই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুদ্গম। লর্ড কেল্‌ভিন্ ভূ-কম্পনকেও ঐ আভ্যন্তরীণ আন্দোলনের কার্য্য বলিয়া স্থির করিয়াছেন। কারণ ভূপৃষ্ঠের গভীর স্থানের মৃত্তিকাপ্রস্তরাদি যখন ভাঙ্গিয়া চুরিয়া ভূগর্ভে পতিত হইতে আরম্ভ করে, তখন সেই আন্দোলনে পৃথিবী কম্পিত না হইয়া থাকিতে পারে না।

 পৃথিবী কালক্রমে শীতল হইয়া পড়িতেছে, কাজেই উহার ভিতরকার দ্রবপদার্থ যে, শীতল হইয়া এককালে কঠিন হইয়া পড়িবে, তাহা নিশ্চয়। এখন প্রশ্ন হইতে পারে, দূরভবিষ্যতে পৃথিবীর সমস্তটা জমাট বাঁধিয়া গেলে, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও ভূ-কম্পন কি বন্ধ হইয়া যাইবে?

 লর্ড কেল্‌ভিন্ এ প্রশ্নের মীমাংসা করিয়াছেন। তাঁহার মতে ভবিষ্যতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুদ্গিরণ নিশ্চয়ই লোপ পাইবে। অতি প্রাচীনকালে ভূপৃষ্ঠে অনেক বড় বড় আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু পৃথিবী শীতল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলিতে আর বড় অগ্নির চিহ্ন দেখা যায় না। সুতরাং বিসুভিয়স্ প্রভৃতি যে কয়েকটি সজীব আগ্নেয়গিরি আছে, তাহারাও যে কালক্রমে নির্ব্বাপিত হইয়া যাইবে, তাহা আমরা বেশ অনুমান করিতে পারি। ভূমিকম্পের লোপ-সম্বন্ধে কিন্তু লর্ড কেল্‌ভিন বিশেষ আশ্বাস প্রদান করিতেছেন না। এ সম্বন্ধে তাঁহার