স্মৃতির পরবর্তীকালে দেখা গেল যে, সংসারযাত্রার নানা সংশয়স্থলে নানা স্মৃতির তুলনা করিয়া আশ্রয় না নিলে এবং নানা প্রমাণ একত্র করিয়া বিচার না করিলে সব সময় ঠিক চলে না। এইজন্য পরবর্তী যুগে হইল সব ধর্মনিবন্ধের উদয়। বাংলাদেশের যেমন রঘুনন্দন নানাশাস্ত্র সংকলিত করিয়া যুক্তি ও বিচার করিয়া তাঁহার অষ্টবিংশতিতত্ত্বসমন্বিত নিবন্ধ রচনা করিয়াছেন, তেমনি ভারতের নানা স্থানে নানা যুগে সব নিবন্ধকারদের উদয় হইয়াছে। বাংলা দেশে প্রধানত রঘুনন্দনেরই সমাদর। অন্যান্য বহু প্রদেশে চলে বিজ্ঞানেশ্বর-কৃত মিতাক্ষরা। তাহা যাজ্ঞবল্ক্যের ব্যবহারকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। পরাশর-সংহিতায় ব্যবহার-কাণ্ডের উপর রচিত হইল মাধবভাষ্য। মিথিলাতে চণ্ডেশ্বর ঠক্কুরের বিবাদ-রত্নাকর ও উড়িষ্যার প্রতাপরুদ্রের সরস্বতীবিলাস সমাদৃত। দক্ষিণভারতে বরদারাজ-কৃত ব্যবহারনির্ণয়, দেবণ্ণভট্টের স্মৃতিচন্দ্রিকা এবং মাধবাচার্যের ব্যবহার-মাধবীয়ই সমধিক আদৃত।
দায়াদি বিষয়ে নারীদের অধিকারের কথা প্রাচীন নানা নিবন্ধেই আলোচিত হইয়াছে। তবে ব্যবহার নির্ণয় এই বিষয়ে যেমন উদারভাবে দেখিয়াছেন তেমন সকলে দেখেন নাই। পূর্বপূর্ববর্তী শাস্ত্রকারদের এই বিষয়ে কোনো সংকীর্ণতা থাকিলেও তিনি তাঁহার প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যের বলে সেই সব নিরসন করিয়াছেন। তাঁহার মতামত অতিশয় স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল। কাজেই নারীদের দায়বিচারে এই গ্রন্থখানির ভালোরূপ আলোচনা প্রয়োজন।
দক্ষিণদেশে এই গ্রন্থের প্রভূত সমাদর। সপ্তদশ শতাব্দীতে মালয়ালম্ দেশে ব্যবহার-মালা নামে ইহার একটি সংক্ষিপ্তসার রচিত হইয়াছিল। তাঞ্জোরাধিপতি মহারাজা সরফোজীর (১৭৯৮-১৮৩৩) নামে সংকলিত ব্যবহার-প্রকাশের মূলভিত্তি ও বরদারাজ-কৃত ব্যবহারনির্ণয়। পরব্রহ্মশাস্ত্রীর ব্যবহারদর্পণও এই ব্যবহারনির্ণয়েরই সংক্ষিপ্ত-রূপ। এইসবই বরদরাজ-কৃত গ্রন্থের সমাদরের প্রমাণ।
মীমাংসা ও ন্যায়শাস্ত্রে বরদরাজের প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য ছিল। তাঁহার যুক্তি ও বিচারও ছিল খুব গভীর অথচ স্বাধীন। তাঁহার বুঝিবার ও বুঝাইবার রীতি অনন্যসাধারণ। ‘ব্যবহার-মাতৃকা’ ও ব্যবহারের বিষয়ে আইনের মূলনীতি ও আইনের বিধি সম্বন্ধে তিনি খুব বিশদভাবে আলোচনা করিয়াছেন। ব্যবহার বিষয়ে তাঁহার ব্যবহারনির্ণয় গ্রন্থখানি স্বতন্ত্র এবং সম্পূর্ণ। এই গ্রন্থে বিদ্যা