98 ংশ-পরিচয় স্থির হইল যে, গুলির ছিন্নাংশগুলি মহারাজের হাতে ও বুকের ভিতরে বিধিয়া রহিয়াছে। ডাক্তারের ক্লোরোফরম-সাহায্যে মহারাজের দেহে অস্ত্ৰোপচার করিয়া সেইগুলি বাহির করিয়া দিলেন ; কিন্তু তঁহার দেহের শোণিতে বিষ-ক্রিয়ার লক্ষণ দেখা গেল। চিকিৎসা দ্বারা যতদূর চেষ্টা করা যাইতে পারে তাহ করা হইল, কিন্তু মহারাজা রক্ষা পাইলেন। না ; ১৯১২ খ্ৰীষ্টাব্দের ২২শে জানুযারী প্ৰাতঃকালে তঁহার মৃত্যু হইল। অবশ্য গুলির আঘাতের পরবর্তী ক্রিয়ার ফলেই যে তঁহার মৃত্যু ঘটিল, তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই । মহারাজা শ্ৰীরামচন্দ্রের মৃত্যু শোচনীয় বটে, কিন্তু তিনি বীরের মতই এই মৃত্যুকে বরণ করিয়াছিলেন। মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পৰ্য্যন্ত জ্ঞান অক্ষুন্ন ছিল। বিষক্রিয়ার ফলে তঁহার যে অসহ্যু যন্ত্রণা হইতেছিল তাহা তিনি বীরোচিত সহিষ্ণুতার সহিত সহ্য করিয়াছিলেন, একটীবারও কোনও প্ৰকার কাতরোক্তি করেন নাই । তিনি অশ্রুপাত করেন নাই, ভাগ্যের প্রতিকুল একটি অভিযোগও করেন নাই। তিনি হাসিমুখে এই জগৎ হইতে বিদায় গ্ৰহণ করিয়াছিলেন । মৃত্যুর কয়েক মিনিট পূর্বে দেওয়ান তাহার নিকটে আগমন করেন। মুমূর্ষু মহারাজ তখনও মৃদু হাসিয়া তাহাকে অভ্যর্থনা করেন ; সেই সময়ে তাহার বাকশক্তি লুপ্ত হইয়াছিল। মৃত্যুর পরে তঁহাকে যাহারা দেখিয়াছিলেন তাহারা বুঝিতেই পারেন নাই যে, মহারাজের মৃত্যু হইয়াছে। কারণ যে মিষ্ট হাসি। তঁহার স্বভাবসিদ্ধ ছিল, সেই মিষ্ট হাসি তখনও তাহার মুখে লাগিয়াছিল । মহারাজা শ্ৰীরামচন্দ্ৰ ভঞ্জদেবের এই শোচনীয় মৃত্যুতে সমগ্র ময়ুরভঞ্জ রাজ্য শোকাচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। তিনি প্ৰকৃতই প্ৰজাগণের পরম হিতৈষী ছিলেন। সেইজন্য তাহার পরলোক-গমনে প্ৰজাবৃন্দ অত্যন্ত মৰ্ম্মাহত হইয়াছিল।