পাতা:বংশ-পরিচয় (নবম খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দাহিরমহিষী SSVO সিন্ধুপতি যে বিনা যুদ্ধে আপন রাজ্য বিদেশীর করে অৰ্পণ করিয়া দৌৰ্ব্বল্যের পরিচয় দেন নাই, এই গৌরবময়ী বাৰ্ত্ত চতুর্দিকে বিঘোষিত হইতে লাগিল । দুঃখের বিষয়, দাহিরের ভীত পুত্র রাজধানী আলোর পরিত্যাগ পূর্বক অন্যত্ৰ পলায়ন করিলেন। এ সংবাদ দাহির-মহিষীর কর্ণে পৌছিবামাত্র তিনি নিদারুণ পতি-শোক বিস্মৃত হইলেন, কাপুরুষ পুত্রের কথাও ভুলিয়া গেলেন, নিজে রণরঙ্গিণী বেশে আলোর রাজপথ আলোকিত করিয়া বহিৰ্গত হইলেন। দেখিতে দেখিতে তাহার সৈন্যসামন্তগণ র্তাহার সঙ্গে মিলিত হইল। দাহির-পত্নীর সেই প্ৰলয়ঙ্করী, ভীমা, ভয়ঙ্করী মূৰ্ত্তি-দর্শনে মহম্মদ বিন কাশিমও ক্ষণকালের জন্য বিস্মিত স্তম্ভিত এবং কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইল ; কিন্তু পরীক্ষণেই তাহারা প্ৰবল পরাক্রমে যুদ্ধ আরম্ভ করিল। দাহির-মহিষীর সৈন্যগণ জীবনের শেষ মুহূৰ্ত্ত পৰ্য্যন্ত প্ৰাণপণে যুদ্ধ করিতে লাগিল ; কিন্তু অবশেষে ভারতের সৌভাগ্য-রবি অস্তমিত হওয়ায় সিন্ধুবীরগণ একে একে ধরাশয্যা গ্ৰহণ করিল। দাহির-পত্নী তখন পুরু-মহিলাদের লইয়া উন্মুক্ত কৃপাণহন্তে পুরী রক্ষা করিতে লাগিলেন। কিন্তু যখন ক্ৰমে ক্ৰমে আহাৰ্য্য নিঃশেষ হইয়া একেবারে ভাণ্ডার শূন্য হইল, তখন পুরমহিলাদের-ক্ষত্রিয় রমণীগণের সতীত্ব ও মান-মৰ্য্যাদা অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য নগরের মধ্যস্থলে একটি প্ৰকাণ্ড অগ্নিকুণ্ড প্ৰজ্বলিত করা হইল ; সহরের যাবতীয় ক্ষত্ৰিয়বালা তাহাতে হাসিমুখে ঝাম্প প্ৰদান করিয়া ধৰ্ম্ম রক্ষা করিয়াছিলেন । ভারত-নারী যে প্ৰবল শত্রুর মুখে ছাই দিয়া স্বধৰ্ম্ম রক্ষা করিতে পারেন, এই পথ প্ৰথমে দাহির-মহিষীই প্ৰদৰ্শন করিয়াছিলেন ।