পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘটে। এই মুক্তিটুকুই পরমলাভ। ইহাকে মনের গ্রন্থি-মোচনই বলা চলে। ইহার ফলে আমাকেই দেখিবার আশ্চর্য সুযোগ বা সুবিধাটা আমার আসিয়া যায়। বর্তমানের আমি-র চোখে অতীতের আমি-কে দেখিবার এই সুযোগটাকেই আমি মস্তবড় সুবিধা বলিয়া মনে করি। অবশ্য মনে রাখিতে হইবে যে, আঠারো বছরের আগের আমি ও আজিকার আমি—এই দুই আমি এক হইয়াও কিন্তু এক নহে। ভূমিকা এই পর্যন্তই, অর্থাৎ অলম্—


 জেলে আসিয়াছি ছয় মাসও ভালো করিয়া পার হয় নাই, কিন্তু একটা কথা বেশ পরিষ্কার বুঝিয়া ফেলিলাম এবং একেবারে নিশ্চিন্ত হইয়া গেলাম। কথাটা এই—ছয় কোটি বাঙালীর মধ্য হইতে যাঁহারা আমাদিগকে খুঁজিয়া বাহির করিতে পারিয়াছেন এবং এত সমাদরে জেলের খাঁচায় আনিয়া আবদ্ধ করিয়াছেন, খুব সহজে তাঁহারা আমাদিগকে রেহাই দিবেন না। যদি কোনদিন ছাড়িয়া দিতেই হয়, তবে তার আগে আমাদিগকেও যথাসাধ্য শায়েস্তা করিয়া লইবেন, ইংরেজ গভর্নমেণ্ট সম্বন্ধে আমাদের কারো মনে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ বা অবিশ্বাস ছিল না। প্রত্যুত্তরে “জেল জেলই সই” বলিয়া আমরাও প্রস্তুত হইয়া গেলাম। যদি বাঁচিয়া থাকি, ছাড়া একদিন পাইবই; আর, যদি মরিয়া যাই, তখনও ইংরেজের জেল হইতে ছাড়া পাইব। যেদিক দিয়াই দেখি, হিসাব আমাদের মিলিয়া গেল। অর্থাৎ, দেশের মুক্তি আসার বহু আগেই আমাদের অনেকেরই মানসিক মুক্তি হিসাবের খাতায় জমা হইয়া গেল।

 বরাতের জোর ছিল, তাই ছয়মাসের মধ্যেই তিন তিনটা জেল দেখা হইয়া গেল— প্রথম মাদারীপুর জেল, দ্বিতীয় ফরিদপুর জেল এবং তৃতীয় সিউড়ী জেল। এদেশে জন্মিয়াও এদেশ দেখিবার সৌভাগ্য আমাদের মত লোকের খুব বেশী ছিল না। ভাগ্যের উপর রাজদৃষ্টি নিপতিত হইয়াছিল, তাই পদ্মাপাড়ের বাঙাল হইয়াও সরকারের কাঁধে চড়িয়া একেবারে বীরভূমের রাঙ্গামাটির দেশে