পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রোমাঞ্চকর কাহিনী বাঙলার বিপ্লবী ইতিহাসের একটি বিশিষ্ট অধ্যায় নিশ্চয় গ্রহণ করিতে পারে। একক বীরেনদার হাতে কম করিয়াও ১৮টি পুলিশ কর্মচারী ও গোয়েন্দা নিহত হইয়াছে, এদিক দিয়া বাঙলার বিপ্লবীদের মধ্যে ইঁহার জুড়ি নাই। আর ডাকাতি, এদিক দিয়াও বীরেনদার জুড়ি বিপ্লবীদের মধ্যে তো নাইই, পেশাদার ডাকাতদের মধ্যেও আছে বলিয়া মনে হয় না, থাকিলেও খুব বেশী নাই।

 বীরেনদার একটি কীর্তি শ্রবণ করুন। ১৯১৪ সালের ডিসেম্বর, সার্কুলার রোডে গীয়ারপার্কে (অধুনা লেডীস পার্ক) সন্ধ্যার সময়ে নরেন সেনের নেতৃত্বে অনুশীলন-পার্টির একটি গোপন জমায়েত হয়। কিছুক্ষণ পরেই সন্দেহজনক ব্যক্তিদের পার্কের বাইরে ঘুরাফেরা করিতে দেখা গেল। যে যেভাবে পারে সরিয়া পড়িবার অনুমতি পাইল। বীরেনদা রেলিং টপকাইয়া পার্কের দক্ষিণদিকের গলিতে পড়িতেই এক গোয়েন্দা কর্মচারী তাঁহাকে বাহু-বন্ধনে বুকে বাঁধিয়া লইল। এই অপ্রত্যাশিত প্রেমালিঙ্গন ধীরেনদার আদৌ আরামপ্রদ বোধ হইল না। কোথা হইতে এক আপদ আসিয়া উপস্থিত। বয়সটা তখন তরুণ, শরীরে তখন অসুরের শক্তি, তদুপরি লাঠি খেলা, কুস্তি ইত্যাদিতে বেশ একটু অধিকার অর্জিত, সুতরাং এক ঝটকায় এই প্রণয়বন্ধন মুক্ত করিয়া বীরেনদা অন্ধকারে সরিয়া পড়িলেন।

 কিন্তু মনে তখন চিন্তা, আসলে দুশ্চিন্তা মাথা ধরার মত চাপিয়া আছে যে, বন্ধুদের কি হইল। পার্শিবাগান গলি দিয়া বীরেনদা আবার সার্কুলার রোডে ফিরিয়া আসিলেন। দেখিলেন, দলের নেতা নরেন সেনকে ধরিয়া পুলিশ দারোগার দল মারধর করিতেছে। নিরপরাধ ব্যক্তির উপর অত্যাচার পথচারী বীরেন চ্যাটার্জী সমর্থন করিতে পারিলেন না।

 আগাইয়া দিয়া প্রশ্ন করিলেন, “ক্যা হুয়া, এই ভদ্রলোককে তোমরা মারতে হ্যায় কাহে। চোর হ্যায়, না ডাকু হ্যায়?”

১২৯