পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছাড়িয়া ল্যাঙ্গোটি-আঁটা নগ্ন সজ্জায় ছুটিয়া আসিলেন, আসিয়াই লোহার গরাদ-দেওয়া আবদ্ধ দরজাটা দুই হাতে ধরিয়া এমন ঝাঁকানিই দিয়াছিলেন যে, জেল-কর্মচারী বোমা-খাওয়া মানুষের মত দূরে ছিটকাইয়া পড়িলেন, ভাবিলেন দরজাটা ভাঙ্গিয়া দানবসদৃশ সন্তোষ দত্ত নির্গত হইলেন বলিয়া। তাই উঠিয়া মরি-কি-বাঁচি করিয়া দৌড় দিলেন এবং জেলগেটে উপস্থিত হইয়া তবে তিনি থামিলেন। সন্তোষবাবুর লজ্জার কারণ এই যে, ঐ লৌহ দরজা ভাঙ্গা দ্বাপরের ভীম অথবা ত্রেতার মহাবীর কারো পক্ষে সম্ভব নহে, অথচ কলির ভীমের এ হুঁশ ছিল না। তাই নিষ্ফল আক্রোশে লৌহ গরাদের উপরই তিনি শক্তিটা নিরর্থক ব্যয় করিয়া ফেলিয়াছিলেন। সন্তোষবাবুকে এই আখ্যায়িকায় পরে অন্ততঃ আর একবার আপনারা দেখিতে পাইবেন।

 জাহাজের গায়ে জালি-বোটের নায় সন্তোষবাবুর গা ঘেঁষিয়া যে বেঁটে ক্ষীণকায় ব্যক্তিকে দেখিয়া আপনি ভাবিতেছেন যে, ইনি নিশ্চয় কোন গ্রাম্য কবিরাজের কম্পাউণ্ডার, তাঁহার নাম যতীন রায়। চেহারায় আপনি আকৃষ্ট হন নাই। নাম শুনিয়াও আপনি বিশেষ কিছু আকৃষ্ট হইয়াছেন বলিয়া মনে হইতেছে না। কিন্তু পোষাকী নামের খাপ হহতে যদি এঁর আটপৌরে নামটা টানিয়া বাহির করিয়া দেখাই, তবে আপনাকেও সচকিত হইতে হইবে। ইনি বরিশালের ফেগু রায়, ওরফে ফেগু ডাকাত। এই নাম শ্রবনে বরিশাল জেলার এক সময়ে হিন্দু-মুসলমান কোন গৃহস্থই রাত্রিবেলা ঘরের বাহির হইত না, ঘরের মধ্যে হাঁড়ি-মালসাতেই নৈশকৃত্য সারিয়া রাখিত। বরিশাল জেলার বৃদ্ধদের জিজ্ঞাসা করিলে ফেগু ডাকাতের খবর আপনারা পাইতে পারেন। ইনি চা, পান, সিগারেট কোন নেশাই করেন না, অপরে যে করে তাহাও পছন্দ করেন না। যাঁর নামে গ্রামবাসীদের মনে এত আতঙ্ক সঞ্চারিত হইত, তাঁর নিজের মনটি অদ্ভুত। বন্দিশিবিরে দেখিয়াছি যে, যে দলের যে কেহই রোগে পড়িয়াছে, ফেগু রায় তার শিররে রাত জাগিয়া শুশ্রুষা করিতেছেন। খাদশূন্য ব্যক্তি, চরিত্রে নিষ্পাপ। জীবনে কথার খেলাপ ইনি করেন নাই। দধীচির হাড়ের খবর

১৩৪