পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই সুযোগে অরুণবাবুর বন্ধুর পরিচয়ও সারিয়া রাখা যাইতেছে। যে কয়জন ব্যক্তির পড়াশুনা খুব বেশী বলিয়া জেলে খ্যাতি ছিল, ভূপেনবাবু তাঁহাদেরই একজন। ভূপেনবাবু ছাত্রহিসেবে খ্যাতিসম্পন্ন ছিলেন, ইংরেজী ভালো লিখিতে পারেন বলিয়া বন্দিমতলে স্বীকৃত। ভূপেনবাবুকে দেখিলেই আমার মনে স্বল্পবাক ও স্মিতহাস্যমণ্ডিত এক তেজস্বী মূর্তি উদ্ভাসিত হইত। ভূপেনবাবু সত্যিকার তেজস্বী ব্যক্তি, তাঁহাকে ভাঙা চলে কিন্তু নোয়ানো চলে না। তেজ, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন দিকের সংমিশ্রণে ভূপেনবাবুর যে-চরিত্র গঠিত হইয়াছে, তাহাতে অনায়াসে বিপ্লব আন্দোলনের নেতৃত্ব তিনি গ্রহণ করিতে পারিতেন। কিন্তু ভূপেনবাবু স্বভাবে লাজুক। এই শক্তিমান পুরুষ ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতে কি অংশ গ্রহণ করিবেন, বক্সা ক্যাম্পে বহুবার এই কথা আমার মনে জাগ্রত হইয়াছে।

 তাঁহার পাশেই দীর্ঘনাসা বেঁটে-খাটো যে-ভদ্রলোক ফতুয়া গায়ে বিড়িমুখে দাঁড়াইয়া আছেন, তিনিই জীবনবাবু (চ্যাটার্জি)। মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলে বিপ্লবের গুপ্তকেন্দ্রগুলি বহুলাংশে ইঁহারই সৃষ্টি। ইনি নিরভিমান, সত্যিকার ত্যাগী, ধন-যশ-ক্ষমতার লোভ ইঁহার মনে স্থান লইতে পারে নাই। আদর্শ চরিত্রের জন্য জীবনবাবুকে শ্রদ্ধা আমরা সকলেই জানাইতে বাধ্য। দরদ ও সহানুভূতিতে হৃদয় এঁর পূর্ণ। অনলস কর্মশক্তি দিয়া ভগবান এঁকে পাঠাইয়াছিলেন, কিন্তু কারাজীবন-যাপনে এঁর স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। জীবনবাবুকে যদি নাম দিতে হয়, তবে আশুতোষ বা ভোলানাথ নামই তাঁহার উপযুক্ত। অল্পেই ইনি সন্তুষ্ট এবং স্বভাবে ইনি বৈরাগী।

 পরিচয়ের পালা এখনও শেষ হয় নাই, আপনাদের একটু কষ্ট করিয়া আরও কয়েকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে হইবে।

 ঐ যে ঢিলা ও লম্বা হাফসার্ট গায়ে হৃষ্টপুষ্ট বয়স্ক ভদ্রলোক দাঁড়াইয়া আছেন, তাঁহাকে একটু বিশেষভাবে লক্ষ্য করিবেন, তাঁহার নাম হেমচন্দ্র ঘোষ। নিজে কুস্তিতে ওস্তাদ এবং ইতিহাস-অধ্যয়নেই এঁর বিশেষ আসক্তি। নিজের একক

১৩৮