পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হইয়া থাকেন। জানি প্রশ্ন করিবার জন্য আকুলি বিকুলি করিতেছেন যে, কেমন করিয়া জানিলাম, ইহার প্রমাণ কি? ক্ষমা করিবেন, যতটুকু বলিয়াছি, তার অধিক কিছু আমার আর এ-বিষয়ে বক্তব্য নাই। আমি মনে করি, শুধু তাহাই নহে, রবীন্দ্রনাথ আমি জানি, সমাধিবান পুরুষ। গান্ধীজী রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’ বলিতেন, ইহা রীতিরক্ষা নহে, ইহা সত্য সম্ভাষণ। এই সত্য অজানা থাকিলে গান্ধীজীকে আর ভারতবর্ষের ‘মহাত্মা’ হওয়া চলিত না। ভারতবর্ষের মহাত্মা যাঁহাকে ‘গুরুদেব’ বলিয়া ডাকিয়া গিয়াছেন, তিনি প্রকৃতই গুরুস্থানীয় ছিলেন।

 রবীন্দ্র-জয়ন্তীর আয়োজন চলিতে লাগিল। এই উৎসবের সমস্ত ব্যবস্তা ও আয়োজনের মূলে ছিলেন ভূপেনবাবু (রক্ষিত)। ভবেশবাবু (নন্দী) ছিলেন আমাদের সাহিত্যসভা ও লাইব্রেরীর সেক্রেটারী। তাঁহাকে লইয়া আমার যতদূর মনে পড়ে অনিলবাবুও (রায়) সঙ্গে ছিলেন, ভূপেনবাবু তিন নম্বর ব্যারাকের বারান্দায় আমার কম্বলের ঘরে প্রবেশ করিলেন। ইহাই ছিল আমার অধ্যয়নগৃহ।

 ভূপেনবাবু বলিলেন, সকলের ইচ্ছা যে, অভিনন্দনপত্রটি আমি রচনা করি। প্রস্তাব শুনিয়াই মন লোভী হইয়া উঠিল। বিপ্লবী-বন্দীদের পক্ষ হইতে কবিগুরুকে অভিনন্দন জানাইবার অধিকার, এই সৌভাগ্যকে প্রত্যাখ্যান করিবার মত নির্লোভ আমি ছিলাম না। ‘আচ্ছা’ বলিয়া আমি সম্মত হইলাম। আমার জীবনে ইহাকে ভাগ্যের শ্রেষ্ঠতম একটি দান বলিয়াই আমি মনে করি। মুখে বলিলাম না কিন্তু মনে মনে বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিলাম।

 ভারতীয় রীতিতে মঞ্চটি সুসজ্জিত হইল। মঞ্চের সম্মুখে দুই ধারে কদলীবৃক্ষ ও আলপনা-দেওয়া মঙ্গলঘট স্থাপিত হইল। সম্মুখের দিকে এক সারি প্রদীপমালা। প্রথমে ঐক্যতান, তৎপর অভিনন্দনপত্র পাঠ করিয়া মঞ্চোপরি রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতির পাদমূলে স্থাপিত হয়। সবশেষে ‘জনগণ-মন-অধিনায়ক’ সঙ্গীতে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। পরে কবিগুরুর ‘বিসর্জন’ নাটকটি অভিনীত হয়। নাটকের পৌরোহিত্য করেন বন্ধুবর ভূপেন রক্ষিত।

১৫০