পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তখন আমি পাঁচ-নম্বর ব্যারাকের বাসিন্দা, পরে তিন নম্বরে আসিয়াছিলাম, আমার পাশের সীটে আছেন শরৎবাবু, যিনি সিউড়ী হইতে এতাবৎ জোঁকের মত আমার সঙ্গে লাগিয়াই ছিলেন। বিকালের দিকে বিছানায় চীৎ হইয়া একটা বিদেশী উপন্যাস পাঠ করিতেছিলাম, বেশ জমিয়া গিয়াছিলাম। কিন্তু রসভঙ্গ-দূতের অভাব কোনকালে কোথাও হয় না, এ-ক্ষেত্রেও হইল না।

 শরৎবাবুর সীটে বসিয়া ডাঃ জ্যোতির্ময় শর্মা শরৎবাবুকে ‘কম্যুনিজম্‌’ বুঝাইতেছিলেন। থাকিয়া থাকিয়া কানে আসিতেছিল, ‘ক্লাশলেস্ সোসাইটি।’ মন বিগড়াইয়া গেল। রস-ভোগে বা সম্ভোগে যারা বাধা দেয়, তাদের সম্বন্ধেই তো আদি-কবির শাশ্বত অভিশাপ, ‘মা নিষাদ—।’ আমিও অভিশাপ প্রদান করিলাম।

 আধুনিককালের ভাষায় চিরকালের অভিশাপকে তর্জমা করিয়া অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা মানে রূপ দিলাম — “Your classless Society is an Utopia.”

 অর্থাৎ শ্রেণীহীন সমাজ শুধু আকাশ-কুসুমই নহে, সেই খ-পুষ্পেরই স্বপ্ন তাহা।

 ব্যস্, শুরু হইয়া গেল, যাকে বলে তর্ক-যুদ্ধ। যুদ্ধের দর্শকসংখ্যা ক্রমে ক্রমে বুদ্ধি পাইল এবং যুযুধান ব্যক্তিরাও দুইভাগ হইয়া দুইপক্ষে যোগ দিলেন। লড়াইটা প্রথম দিনে শেষ হইল না, পরদিন আবার বিকালে টিফিন শেষে এইখানেই তর্কসভা বসিবে, সাব্যস্ত হইল। পর পর চারদিন এই তর্কসভার অধিবেশন হয়, পরে ইহা পরিত্যক্ত হয়।

 ডাঃ শর্মার পক্ষে যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণ করিলেন কালীমোহন সেন, করাচীর বুখারী, মণি সিং, রেজাক সাহেব——ইঁহারা সকলেই কমরেড। আমার পক্ষে যোগ দিলেন সন্তোষ গাঙ্গুলী ও সুরপতি চক্রবর্তী। নেতারাও আসিয়া আসরে আসন গ্রহণ করিতেন, কিন্তু যুদ্ধে যোগ দিতেন না।

 ইহার পরেই ক্যাম্পে কম্যুনিস্ট-সাহিত্য চর্চার ধূম পড়িয়া যায়। নিত্য মোটা মোটা ইংরেজী বই ক্যাম্পে আসিতে লাগিল। এবারকার বন্দীশালাতেই বাঙলার

১৬৫