পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —“কম উঁচুতে তো উঠিনি। দূরবীন হলে আরও পরিষ্কার বোঝা যেত, ঢেউ পর্যন্ত দেখতে পারতে।”

 শশাঙ্ক অবাক হইয়া কহিল—“বে-অব-বেঙ্গলের কোন সাইড এটা? চাঁটগা, না মেদিনীপুর?”

 বীরেনদা কহিলেন, “না, চাঁটগার দিক নয়, এটা ডায়মণ্ডহারবারের সাইড।”

 শশাঙ্ক দৌড়াইয়া উপরে উঠিয়া গেল, বন্ধুদের ডাকিয়া আনিল সাগর দেখাইবার জন্য। শশাঙ্ক চলিয়া যাইতেই আশেপাশের যারা কোনমতে এতক্ষণ হাসি চাপিয়া রাখিয়াছিলেন, তাঁরা চাপা হাসিকে বাঁধমুক্ত করিয়া দিলেন।

 ক্ষিতীশ ব্যানার্জী মোটা ভুঁড়ি ও মোটা গোঁফ লইয়া আগাইয়া আসিলেন, মহারাজকে (ত্রৈলোক্য চক্রবর্তী) কহিলেন—“শুনলেন কথা? জিওগ্রাফি শেখাচ্ছেন।”

 মহারাজ মৃদু হাসিয়া বলিলেন—“পট্টিপাট্টা কমিটির প্রেসিডেণ্ট যে।”

 কয়েক মিনিটের মধ্যেই পট্টিপাট্টা কমিটির সেক্রোটারী নৃপেন মজুমদার ও তাঁর সহযোগীদের মুখে মুখে প্রচারিত বুলেটিনে সংবাদটা ব্যারাকে ব্যারাকে দাবানলের মত ছড়াইয়া পড়িল। শশাঙ্ক দক্ষিণের প্রান্তরে নীল রং দেখিয়া বয়স্ক ও শ্রদ্ধেয় বীরেনদাকে বিশ্বাস করিয়াছিল, এজন্য বেচারা কয়েকদিন লজ্জিত হইয়াই ছিল।

 প্রান্তরে যে শুধু নীল রংয়েরই খেলা হইত, তা নয়। প্রকৃতির ভাণ্ডারে যত রং আছে, একে একে সবগুলিই সে সারাদিনের মধ্যে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া ঐ ভূভাগের উপর বুলাইয়া দিত। সবচেয়ে ভালো লাগিত, যখন সারি সারি ঢেউয়ের মত মেঘ স্তরে স্তরে উপরে উঠিয়া আসিত নানারংয়ের পোষাক পরিয়া। সে মেঘকে দেশে থাকিতে উপরের দিকে মাথা তুলিয়া বহু ঊর্ধ্বে আকাশে দেখিতে হইত, সেই মেঘেরাই আমাদের গা ঠেলিয়া চলিয়াছে, প্রথমটা তো রোমাঞ্চই লাগিয়া গিয়াছিল।

 স্থান সম্বন্ধে আর একটি বিষয় উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বকসাতে বৃষ্টির কোন

৬৬