পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“, কপালকুণ্ডল৷ কি প্রকারে ভুলিব ? অার দুই দিন থাকিয়া তুমি কেনই ব| চরিতার্থনা করিবে ? ম। সুখে কার অসাধ? সাধ্য হইলে আমি কেন যাইব ? কিন্তু আমি পরের অধীন, কি প্রকারে থাকিব ? মেহে । আমার প্রতি তোমার ভালবাসা আর নাই, থাকিলে তুমি কোনমতে রহিয়া যাইতে আসি য়াছ ত রহিতে পার না কেন ? ম। আমি ত সকল কথাই বলিয়াছি । আমার সহোদর মোগলসৈন্তে মন্সবদার—তিনি উড়িষ্যার পাঠানদিগের সহিত যুদ্ধে আহত হইয়া সঙ্কটাপন্ন হইয়াছিলেন । আমি তাহারই বিপৎসংবাদ পাইয়া বেগমের অনুমতি লইয়া তাহাকে দেখিতে আসিয়াছিলাম । উড়িষ্যায় অনেক বিলম্ব করিয়াছি, এক্ষণে আর বিলম্ব করা উচিত নহে। তোমার সহিত অনেক দিন দেখা হয় নাই, এই জন্য দুই দিন রহিয়৷ গেলাম । মেহে । বেগমের নিকট কোন দিন পৌছিষার কথ। স্বীকার করিয়া আসিয়াছ ? মতি বুঝিলেন, মেহের-উল্লিস ব্যঙ্গ করিতেছেন । মার্জিত অথচ মৰ্ম্মভেদী ব্যঙ্গে মেহের-উন্নিসা যেরূপ নিপুণ, মতি সেরূপ নহেন । কিন্তু অপ্রতিভ হইবার লোকও নহেন । তিনি উত্তর করিলেন, “দিন নিশ্চিত করিয়া তিন মাসের পথ যাতায়াত করা কি সস্তবে ? কিন্তু অনেক কাল বিলম্ব করিয়াছি ; আরও বিলম্বে অসন্তোষের কারণ জন্মিতে পারে ।” মেহের-উন্নিসা নিজ ভুবনমোহন হাসি হাসিয়া কহিলেন, “কাহার অসন্তোষের আশঙ্কা করিতেছ ; যুবরাজের না তাহার মহিষীর ?” মতি কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইয়া কহিলেন, “এ লজ্জF হীনাকে কেন লজ্জা দিতে চাও? উভয়েরই অসন্তোষ হইতে পারে । মে। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি—তুমি স্বয়ং বেগম নাম ধারণ করিতেছ না কেন ? শুনিয়াছিলাম, কুমার সেলিম তোমাকে বিবাহ করিয়া খাসবেগম করিবেন ; তাহার কত দূর ? ম। আমি ত সহজেই পরাধীন । যে কিছু স্বাধীনতা আছে, তাহা কেন নষ্ট করিব ? বেগমের সঙ্কচারিণী বলিয়া অনায়াসে উড়িষ্যায় আসিতে পারিলাম, সেলিমের বেগম হইলে কি উড়িষ্যায় আসিতে পারিতাম ? মে। যে দিল্লীশ্বরের প্রধান মহিষী হুইবে, তাহার উড়িষ্যায় আসিবার প্রয়োজন ? مة -

ম। সেলিমের প্রধান মহিষী হইব, এমন কখন করি না । এ হিন্দুস্থান দেশে কেবল মেহের-" উন্নিসাই দিল্লীশ্বরের প্রাণেশ্বরী হইবার উপযুক্ত । মেহের-উন্নিসা মুখ নত করিলেন । ক্ষণেক নিরুত্তর থাকিয়া কহিলেন, “ভগিনি ! আমি এমত মনে করি না যে, তুমি আমাকে পীড়া দিবার জন্য এ কথা বলিলে, কি আমার মন জানিবার জন্ত বলিলে । কিন্তু তোমার নিকট আমার এই ভিক্ষা, بية هذه

يمتر

আমি যে শের আফিগানের বনিত, আমি যে কায় মনোবাক্যে শের আফগানের দাসী, তাহা তুমি বিস্তৃত হইয়া কথা কহিও না ।” লজ্জাহীন মতি এ তিরস্কারে অপ্রতিভ হইলেন । না ; বরং আরও সুযোগ পাইলেন । কহিলেন, “তুমি যে পতিগভপ্রাণ, তাহা আমি বিলক্ষণ জানি ; সেই জন্যই ছলক্রমে এ কথা তোমার সম্মুখে পাড়িতে সাহস g করিয়াছি r সেলিম যে এ পর্য্যন্ত তোমার সৌন্দর্য্যের । মোহ ভুলিতে পারেন নাই, এই কথা বলা আমার । উদ্দেশু। সাবধান থাকিও।” মে ; এখন বুঝিলাম । কিন্তু কিসের আশঙ্ক ? . মতি কিঞ্চিৎ ই স্তস্ততঃ করিয়| কহিলেন, “বৈধব্যের আশঙ্ক৷ ” এই কথ। বলিয়। মতি মেহের-উন্নিসার মুখপানে তীক্ষুদৃষ্টি করিয়া রছিলেন, কিন্তু ভয় বা আহলাদের কোন চিহ্ন তথায় দেখিতে পাইলেন না । মেহেরউন্নিস সদৰ্পে কহিলেন, “বৈধব্যের আশঙ্কা ! শের আফগান আত্মরক্ষায় অক্ষম নহে। বিশেষ আকৃবর বাদশাহের রাজ্যমধ্যে র্তাহার পুল্লও বিনাদোষে পরপ্রাণ নষ্ট করিয়া নিস্তার পাইবেন না।” ম। সত্য কথা, কিন্তু সম্প্রতিকার আগ্রার সংবাদ এই যে,—আকৃবর শাহ গত হইয়াছেন । সেলিম সিংহাসনারূঢ় হইয়াছেন । দিল্লীশ্বরকে কে দমন করিবে ? মেহেরউন্নিসা আর কিছু শুনিলেন না । তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ শিহরিয়৷ কঁাপিতে লাগিল । আবার মুখ নত করিলেন, লোচনযুগলে অশ্রদ্ধারা বহিতে লাগিল । মতি জিজ্ঞাসা করিলেন, “র্কদ কেন ?” মেহের-উন্নিসা নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “সেলিম ভারতবর্ষের সিংহাসনে, আমি কোথায় ?” মতির মনস্কাম সিদ্ধ হইল । তিনি কহিলেন, “তুমি আজিও যুবরাজকে একেবারে বিস্কৃত হইতে পার নাই ?” মেহের-উন্নিসা গদগদম্বরে কহিলেন, “কাহাকে বিস্তৃত হইব ? আত্মজীবন বিস্মৃত হইব, তথাপি যুবরাজকে