سواني
মেয়েমানুষ হইয়৷ ডাকাইতি করে ? প্রকাণ্ডে জিজ্ঞাসা করিল, “এই ষে তাহার সঙ্গে কথা কহিতেছিলাম— তিনি কোথায় ?”
সুন্দরী বলিল, “তোমাকে আসিতে অনুমতি দিয়া তিনি শুইতে গিয়াছেন । রাণীকে তোমার কি প্রয়োজন ?”
ব্র । তুমি কে ? সুন্দরী । তোমার মুনিব । “আমার মুনিব ?” সুন্দরী । জান না, এইমাত্র তোমাকে এক কড়া কাণ কড়ি দিয়া কিনিয়াছি ? ব্র । সত্য বটে। তা আশীৰ্ব্বাদ করিব ?
সুন্দরী । আশীৰ্ব্বাদের কি ?
ব্র । স্ত্রীলোকের পক্ষে আছে । সধবাকে এক রকম আশীৰ্ব্বাদ করিতে হয়,—বিধবাকে অন্তরূপ । পুত্রবতীকে —
সুন্দরী । আশীৰ্ব্বাদ কর ।
ত্র । সে আশীৰ্ব্বাদ আমি কাহাকেও করি না । তোমার একশ তিন বছর পরমায়ু হৌক ।
সুন্দরী। অামার বয়স পচিশ বৎসর । আটাত্তর বৎসর ধরিয়া তুমি আমার ভাত রাধিবে ?
ব্র । আগে এক দিন ত রাধি । খেতে পার ত না হয় আটাত্তর বৎসর রাধিব ।
মুন্দরী । তবে বসো—কেমন রাধিতে জান, পরিচয় দাও ।
ব্ৰজেশ্বর তখন সেই কোমল গালিচার উপর
তোমাকে কি বলিয়া
রকম আছে না
আমাকে “শীগগির মর” বলিয়া
বসিল । সুন্দরী জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার নাম কি *"
ব্র । তা ত তোমরা সকলেই জান, দেখিতেছি ।
আমার নাম ব্রজেশ্বর । তোমার নাম কি ? গল। অত
মোটা করিয়া কথা কহিতেছ কেন ? তুমি কি চেন। মানুষ ?
সুন্দরী । আমি তোমার মুনিব—আমাকে
‘আপনি "মশাই’ আর ‘আজ্ঞে বলিবে ।
ব্র । আজ্ঞে, তাই হবে, আপনার নাম ? স্বন্দরী । আমার নাম পাঁচকড়ি । কিন্তু তুমি আমার তৃত্য, আমার নাম ধরিতে পারিবে না। বরং বল ত আমিও তোমার নাম ধরিব না ।
ব্র । তবে কি বলিয়া ডাকিলে আমি “আজ্ঞা” বলিব ?
বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী
পাচকড়ি। আমি "রামধন” বলিয়া তোমাকে ডাকিব, তুমি আমাকে “মুনিবঠাকুরুণ” বলিও । এখন তোমার পরিচয় দাও—বাড়ী কোথায় ?
ব্র । এক কড়ায় কিনিয়াছ—অত পরিচয়ের প্রয়োজন কি ?
পাচ । ভাল, সে কথা নাই বলিলে । রঙ্গরাজকে জিজ্ঞাসা করিলে জানিতে পারিব । রাঢ়ী, না বারেন্দ্র, না বৈদিক ?
ব্র । হাতের ভাত ত খাইবেন—ষাই হই না । পাচ । তুমি যদি আমার স্বশ্রেণী না হও— তাহা হইলে তোমাকে অন্ত কাজে দিব ।
ব্ৰ । অন্ত কি কাজ ? পাচ । জল তুলিবে—কাঠ কাটিবে—কাজের অভাব কি ?
ব্র । আমি রাঢ়ী । - পাচ । তবে তোমায় জল তুলিতে, কাঠ কাটিতে হইবে । আমি বারেন্দ্র । তুমি রাঢ়ী-কুলীন না বংশজ ?
ব্র । এ কথা ত বিবাহের সম্বন্ধের জন্যই প্রয়োজন হয় । সম্বন্ধ যুটিবে কি ? আমি কৃতদার।
পাচ । কৃতদার ? কয় সংসার করিয়াছ ? ব্র । জল তুলিতে হয়—জল তুলিব—অত পরিচয় দিব না ।
তখন পাঁচকড়ি দেবীরাণীকে ডাকিয় বলিল, “রাণীজি ! বামুন ঠাকুর বড় অবাধ্য । কথার উত্তর দেয় না ।”
নিশি অপর কক্ষ হইতে উত্তর করিল, “বেত লাগাও ”
তখন দেবীর এক জন পরিচারিক শপাৎ করিয়া এক গাছ লিকুলিকে সরু বেত পাচকড়ির বিছানায় ফেলিয়৷ দিয়া চলিয়া গেল। পাচকড়ি বেত পাইয়া ঢাকাই রুমালের ভিতর মধুর অধর চারু দন্তে টিপিয়া বিছানায় বার দুই বেতগাছ আছড়াইল । ব্ৰজেশ্বরকে বলিল, “দেখিয়াছ *"
ব্ৰজেশ্বর হাসিল । বলিল, “আপনার সব পারেন । কি বলিতে হইবে, বলিতেছি।”
পাঁচ। তোমার পরিচয় চাই না—পরিচয় লইয়া কি হইবে ? তোমার রান্না ত খাইব না। তুমি আর কি কাজ করিতে পার বল ? ত্র । হুকুম করুন । পাচ । জল তুলিতে জান ? ত্র । না । পাচ । কাঠ কাটিতে জান ?
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৩২
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
