পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R8

  • : গীত গায়িতে গায়িত্তে বিমল জানিতে পারিকেন যে, তাহার অঞ্চলে বিষম টান পড়িয়াছে ; পশ্চাৎ ফিরিয়া দেখিলেন, গজপতি একেবারে তাহার গায়ের উপর আসিয়া পড়িষাছেন ; প্রাণপণে র্তাহার অঞ্চল ধরিয়াছেন । বিমলা বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিলেন, —“কি হইয়াছে ? আবার ভূত না কি ?”

ব্ৰাহ্মণের বাক্য সরে না, কেবল অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া দেখাইলেন,—“ঐ ” বিমলা নিস্তব্ধ হুইয়। সেট দিকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন । ঘন ঘন প্রবল নিশ্বাস শব্দ তাহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল এবং নির্দিষ্ট দিকে পথপাশ্বে একট। পদার্থ দেখিতে পাইলেন । সাহসে নির্ভর করিয়া নিকটে গিয়া বিমলা দেখিলেন—একটি সুগঠন সুসজ্জীভূত অশ্ব মুতু্যস্বাতনায় পড়িয়া নিশ্বাস ত্যাগ করিতেছে । বিমলা পথ বাহন করিতে লাগিলেন । সুসজ্জীভূত সৈনিক অশ্ব পথিমধ্যে মুমূদ্র অবস্থায় দেখিয়া তিনি চিন্তামগ্ন হইলেন । অনেকক্ষণ কথা কহিলেন না । প্রায় অৰ্দ্ধ ক্রোশ অতিবাহিত করিলে গজপতি আবার তাহার অঞ্চল ধরা টানিলেন । বিমল বলিলেন, “কি ?” গজপতি একটি দ্রব্য লইয়া দেখাইলেন, বিমলা দেখিয়া বলিলেন,—“এ সিপাহীর পাগ উী ।" বিমলা পুনৰ্ব্বার চিন্তায় মগ্ন হষ্টলেন, আপন আপনি কহিতে লাগিলেন, “ষারই ঘোড়, তারই পাগড়া ? না, এ ত পদাতিকের পাগড়া " কিয়ৎক্ষণ পরে চন্দ্রোদয় হইল । বিমলা অধিকতর অন্তমনা হইলেন । অনেকক্ষণ পরে গজপতি সাহস করিয়া জিজ্ঞাস করিলেন,—“সুন্দরি, আর কথা কহ না ষে ?” বিমলা কঠিলেন,-“পথে কিছু চিহ্ন দেখিতেছ?” গজপতি বিশেষ মনে যাগের সহিত পথ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিয়া কহিলেন,--“দেখিতেছি, অনেক ঘোড়ার পায়ের চিঙ্গ " বি । বুদ্ধিমান—কিছু বুঝিতে পারিলে ? দি । না } বি । ওখানে মরা ঘোড়া, সেখানে সিপাঠীর পাগড়ী, এখানে এত বোড়ার পায়ের চিহ্ন, এতে কিছু বুঝিতে পারিলে না ?-কারেই বা বলি ! দি । কি ? বি । এখনই বহুতর সেন এই পথে গিয়াছে । গজপতি ভীত হইয়া কহিলেন,-“তবে একটু আস্তে হাট, তারা খুব আগু হইয়া ষাকৃ ” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী বিমল হাস্ত করিয়া বলিলেন, “মুর্থ ! তাহারা আগু হইবে কি ? কোন দিকে ঘোড়ার খুরের সন্মুখ, দেখিতেছ না ? এ দেন গড় মানদারণে গিয়াছে।” —বলিয়া বিমল বিমর্ষ হইয়া রহিলেন । অচিরাৎ শৈলেশ্বরের মন্দিরের ধবল-শ্ৰী নিকটে দেখিতে পাইলেন । বিমলা ভাবিলেন যে, রাজপুত্রের সহিত ব্ৰাহ্মণের সাক্ষাতের কোন প্রয়োজন নাই, বরং তাহাতে অনিষ্ট আছে । অতএব কি প্রকারে তাহাকে বিদায় দিবেন, চিস্তা করিতেছিলেন । গজপতি নিজেই তাঁহার স্বচনা করিয়া দিলেন। ব্রাহ্মণ পুনৰ্ব্বার বিমলার পৃষ্ঠের নিকট আসিয়া অঞ্চল ধরিয়াছেন, বিমলা জিজ্ঞাসা করিলেন,— “আবার কি ?” ব্রাহ্মণ অঙ্কুটস্বরে কহিলেন, “সে কত দূর ?” বি । কি কত দূর ? দি । সেই বটগাছ ? বি । কোন বটগাছ ? দি । যেখানে তোমরা সে দিন দেখিয়াছিলে ? বি ; কি দেখিয়াছিলাম ? :ি ; রাত্রিকালে নাম করিতে নাই । বিমল বুঝিতে পারিয়া সুযোগ পাইলেন । গম্ভীরস্বরে বলিলেন,—“ইঃ !” ব্রাহ্মণ অধিকতর ভীত হইয়। কহিলেন, “কি sii o বিমলা অস্ফুটস্বরে শৈলেশ্বর নিকটস্থ বটবৃক্ষের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া কছিলেন,—“সে ঐ বটতলা ।” দিগগজ আর নড়িলেন না । অশ্বথপত্রের হ্যায় কঁাপিতে লাগিলেন । বিমল বলিলেন, “আইস ।" রাহ্মণ কঁাপিতে কঁাপিতে কহিলে,--“আমি আর যাইহে পারিব ন৷ ” বিমলা কহিলেন, “আমার ও ভয় করিতেছে ।” ব্রাহ্মণ এই শুনিয়া পা ফিরাইয়। পলায়নোদ্যত হষ্টলেন । বিমল বৃক্ষপানে দৃষ্টি করিয়া দেখিলেন, বৃক্ষমূলে একটা ধবলাকার কি পদার্থ রহিয়াছে । তিনি জানিতেন যে, বৃক্ষমূলে শৈলেশ্বরের র্যাড় গুইয়া থাকে ; কিন্তু গজপতিকে কহিলেন, “গজপতি ! ইষ্টদেবের নাম জপ, বৃক্ষমূলে কি দেখিতেছ?” “ওগো—বাবা গে।—“বলিয়াই দিগগজ একেবারে চম্পট । দীর্ঘ দীর্ঘ চরণ—ভিলাৰ্দ্ধমধ্যে অৰ্দ্ধ ক্রোশ পার হইয়া গেলেন । গতিশক্তিরহিত