পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

多

  • )ჭს

সেই দিন প্রদোষকালে অভিরাম স্বামী কক্ষাস্তরে "ীপের আলোকে বসিয়া পুতি পড়িতেছিলেন; "রাজপুল তথায় গিয়া সবিনয়ে কহিলেন, “মহাশয়, আমার এক নিবেদন, তিলোত্তম এক্ষণে স্থানান্তর গমনের কষ্ট সহ করিতে পরিবেন, অতএব আর এ ভগ্নগৃহে কষ্ট পাইবার প্রয়োজন কি ? কাল যদি মন্দ দিন ন হয়, তবে গড়মান্দারণে লষ্টয় চলুন । আর ধদি আপনার অনভিমত না হয়, তবে অম্বরের বংশে দৌহিত্রী সম্প্রদান করিয়৷ আমাকে ক্লতাৰ্থ করুন ।" অভিরাম স্বামী পুতি ফেলিয়| উঠিয়া রাজপুল্লকে গাঢ় আলিঙ্গন করিলেন : পুতির উপর যে প। দিয়! দাড়াইয়াছেন, তাহা জ্ঞান নাই । যখন রাজপুত্র স্বামীর নিকট আইসেন, তথম ভাব বুঝিয় বিমলা আর আশ মান শনৈঃ শনৈঃ রাজপুত্রের পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিয়াছিলেন ; বাহিরে থাকিয়া সকল শুনিয়াছিলেন । রাজপুত্র বাহিরে আসিয়া দেখেন যে, বিমলার অকস্মাৎ পূৰ্ব্বভাব প্রাপ্তি ; অনবরত হাসিতেছেন, আর আশ মানীর চুল ছিড়িতেছেন ও কিল মারিতেছেন । আশমানী মারপিট তৃণজ্ঞান করিয়া, বিমলার নিকট নৃত্যের পরীক্ষা দিতেছে । রাজকুমার এক পাশ দিয়৷ সিরিয়া গেলেন । দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ সমাপ্তি ফুল ফুটিল । অভিরাম স্বাৰ্মা গড়মান্দারণে গমন করিয়া মহাসমারোহের সহিত দৌহিত্রীকে জগতসিংহের পাণিগ্রহিত্রী করিলেন । উৎসবাদির জন্য জগতসিংহ নিজ সহচরবর্গকে জাহ। নাবাদ হইতে নিমন্ত্ৰণ করিয়| আনাইয়াছিলেন । তিলোত্তমার পিতৃ বন্ধুও অনেকে আহবান প্রাপ্ত হইয়। আনন্দকার্ষে আসিয়া আমোদ-আহ্লাদ করিলেন । আয়েষার প্রার্থনামতে জগতসিংহ তাহাকে ও সংবাদ করিয়াছিলেন । আয়েস। নিজ কিশোরবয়স্ক সহোদরকে সঙ্গে লইয়। এবং আর আর পৌরবর্গে বেষ্টিত হইয়া আসিয়াছিলেন । আয়েষ যবনী হইয়াও তিলোত্তম। আর জগৎ সিংহের অধিক স্নেহবশতঃ সহচরীবর্গের সহিত দুর্গান্তঃপুরবাসিনী-হইলেন। পাঠক মনেকরিতে পারেন যে, জায়েষ। তাপিত হৃদয়ে বিবাহের উৎসবে উৎসব করিতে পারেন নাই ; বস্তুতঃ তাহা নহে। আয়েয। নিজ সহর্ষ চিত্তের প্রফুল্লতায় সকলকেই প্রফুল্ল করিতে লাগিলেন ; বঙ্কিমচক্সের গ্রন্থাবলী প্রস্ফুট শারদ সরসীরুহের মন্দান্দোলনস্বরূপ সেই মৃদুমধুর হাসিতে সৰ্ব্বত্র ঐসম্পাদন করিতে লাগিলেন। বিবাহকার্য্য নিশীথে সমাপ্ত হইল। আয়েষ৷ তখন সহচরগণ সহিত প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ করিলেন ; হাসিয়া বিমলার নিকট বিদায় লইলেন । বিমলা কিছুই জানেন না, হাসিয়া কহিলেন, “নবাবজাদী ! আবার আপনার শুভ-কার্যে। আমরা নিমন্ত্রিত হইব ।” বিমলার নিকট হইতে আসিয়া আয়েষ। তিলেক্তমাকে ডাকিয় এক নিভৃত কক্ষে আনিলেন । তিলোক্তমার করধারণ করিয়া কহিলেন, “ভগিনি ! আমি চলিলাম কায়মনোবাক আশীৰ্ব্বাদ করিয়া যাইতেছি, তুমি অক্ষয় সুখে কালযাপন কর " তিলোত্তম কহিলেন, “আবার কত দিলে আপনার সাক্ষাৎ পাইব ?” আয়েযা কহিলেন, “সাক্ষাতের ভরস। কিরূপে করিব ?” তিলোত্তম বিষঃ হইলেন । উভয়ে নীরব হুইয়। রহিলেন । ক্ষণকাল পরে আয়েষ কহিলেন, “সাক্ষাৎ হউক বা না হউক, তুমি আয়েযাকে ভুলিয়। যাইবে না ?” তিলোত্তম। হাসিয়া কহিলেন, “আয়েষাকে ভুলিলে যুবরাজ আমার মুখ দেখিবেন না ।" আয়েয। গাম্ভীৰ্য্য সহকারে কহিলেন, “এ কথায় আমি সন্তুষ্ট কইলাম না । তুমি আমার কথ। কখন সুবরাজের নিকট তুলিও না । এ কথ। অঙ্গীকার কর ।” আয়েষ বুঝিয়াছিলেন যে, জগৎসিংহের জন্য আয়েম যে এ জন্মের সুখে জলাঞ্জলি দিয়াছেন, এ কথা জগতসিংহের হৃদয়ে শেলস্বরূপ বিদ্ধ রহিয়াছে । আয়েসার প্রসঙ্গমাত্রও তাতার অম্লতাপকর হইতে পারে । * তিলোত্তম। অঙ্গীকার করিলেন । আয়েষা কহিলেন, “অথচ বিস্মৃতও তইও না, স্মরণার্থ যে চিহ্ন দিই, তাহা ত্যাগ করিও না ।" এই বলিয়। আয়েম। দাসীকে ডাকিয়া আজ্ঞা দিলেন । আজ্ঞামত দাসী গজদন্তুনিৰ্ম্মিত পাত্রমধ্যস্ত রত্নালঙ্কার অনিয়া দিল । আয়েষা দাসীকে বিদায় দিয়া সেই সকল অলঙ্কার স্বহস্তে তিলোত্তমার অঙ্গে পরাইতে লাগিলেন । তিলোত্তম ধনাঢ্য ভূস্বামিকন্যা ; তথাপি সে অলঙ্কাররাশির অদ্ভুত শিল্প-রচনা এবং তন্মধ্যবৰ্ত্তী বহুমূল্য হীরকাদি রত্নরাজির অসাধারণ তীব্র দীপ্তি দেখিয়া চমৎকৃত হইলেন । বস্তুতঃ আয়েষ৷ পিতৃদত্ত নিজ অঙ্গভূষণরাশি নষ্ট করিয়া তিলোত্তমার