পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী । বিস্মিত হইলেন ; বলিলেন, “মদ ] কি জন্ত রাখিব ?” হীরালাল মদ নাই জানিয়া, বিজ্ঞের স্থায় বলিল, “সাবধান করিয়া দিবার জন্য বলুছিলাম। এখন ভদ্রলোকের সঙ্গে কুটুম্বিতা করিতে চলিলে, ওগুলা যেন না থাকে ৷” কথাটা পিতার বড় ভাল লাগিল না । তিনি চুপ করিয়া রছিলেন। হীরালাল না বিবাহে, না মদে, কোন দিকেই দেশের উন্নভির একজাম্পল সেট করিতে না পারিয়া ক্ষুঃমনে বিদায় হইল । sammatemasa » ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ বিবাহের দিন অতি নিকট হইল—আর এক দিনমাত্র বিলম্ব আছে । উপায় নাই । নিস্কৃতি নাই । চারিদিক্ হইতে উচ্ছ্বসিত বারিরাশি গর্জিয়৷ আসিতেছে—নিশ্চিত ডুবিব । - তখন লজ্জায় জলাঞ্জলি দিয়া, মাতার পায়ে আছড়াইয়া কঁদিতে লাগিলাম—যোড়হাত করিয়া বলিলাম, “আমার বিবাহ দিও না—আমি আইবুড়ে৷ থাকিব ।” মা বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ? কেন ?” তাহার উত্তর দিতে পারিলাম না। কেবল ষোড় হাত করিতে লাগিলাম—কেবল কাদিতে লাগিলাম । মাতা বিরক্ত হইলেন, রাগিয়া উঠিলেন, গালি দিলেন । শেষে পিতাকে বলিয়া দিলেন । পিতাও গালি দিয়া মারিতে আসিলেন । আর কিছু বলিতে পারিলাম না । উপায় নাই। নিস্কৃতি নাই । ডুবিলাম । সেই দিন বৈকালে কেবল গৃহে আমি এক ছিলাম--পিতা বিবাহের খরচসংগ্রহে গিয়াছিলেন – মাতা দ্রব্যসামগ্রী কিনিতে গিয়াছিলেন । এ সব যে সময়ে হয়, সে সময়ে আমি দ্বার দিয়া থাকিতাম, না হয় বামাচরণ আমার কাছে বসিয়া থাকিত । বামাচরণ এই দিন বসিয়াছিল। এক জন কে দ্বার ঠেলিয়া গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল । চেনা পায়ের শব্দ নহে । জিজ্ঞাসা করিলাম, "কে গ৷ ” উত্তর, “তোমার ষম ।” কথা কোপযুক্ত বটে, কিন্তু স্বর স্ত্রীলোকের । ভয় পাইলাম না। হাসিয়া বলিলাম,—“আমার কি ষম আছে ? তবে এত দিন কোথায় ছিলে ?” স্ত্রীলোকটির রাগ-শাস্তি হইল না। "এখন জানুবি । বড় বিয়ের সাধ । পোড়ারমুখী ! আৰাগী !” ইত্যাদি e8 Σ Σ গালির ছড়া আরম্ভ হইল । গালি সমাগুে সেই মধুরভাষিণী বলিলেন, “ছ দেখ, কাণি, যদি আমার স্বামীর সঙ্গে তোর বিয়ে হয়, তবে ষে দিন তুই স্বর করিতে যাইবি, সেই দিন তোকে বিষ খাওয়াইয়া মারিব।” বুঝিলাম, চাপ খোদ । আদর করিয়া বসিতে বলিলাম । বলিলাম, “গুন, তোমার সঙ্গে কথা আছে ।" এত গালির উত্তরে সাদর-সম্ভাষণ দেখিয়া চাপ। একটু শীতল হইয়া বসিল । - আমি বলিলাম, “শুন, এ বিবাহে তুমি যেমন বিরক্ত, আমিও তেমনি । আমার এ বিবাহ যাহাতে, না হয়, আমি তাহাই করিতে রাজি আছি । কিসে বিবাহ বন্ধ হয়, তাহার উপায় বলিতে পার ?” চাপা বিস্মিত হইল । বলিল, “ভা ভোষার বাপ-মাকে বল না কেন ?” আমি বলিলাম, “হাজারবার বলিয়াছি । কিছুই হয় নাই ।” চাপা । বাবুদের বাড়ীতে গিয় তাহাদের হাতে পায়ে ধর না কেন ? আমি । তাতেও কিছু হয় নাই । চাপ একটু ভাবিয়া বলিল, “তবে এক কাজ করিবি ?” আমি ! কি ? চাপ। দুই দিন লুকাইয়া থাকিবি ? আমি । কোথায় লুকাইব ? অামার স্থান কোথায় আছে ? চাপা আবার একটু ভাবিল। বলিল, “আমার বাপের বাড়ী গিয়া থাকিবি ?” ভাবিলাম, মন কি ? আর ত উদ্ধারের কোন উপায় দেখি না । বলিলাম, “আমি কাণ, নুতন স্থানে আমাকে কে পথ চিনাইয়া লইয়া যাইবে ? তাহারাই বা স্থান দিবে কেন ?” - চাপা আমার সর্বনাশিনী কুপ্রবৃত্তি মূৰ্ত্তিমতী হইয়া আসিয়াছিল ; সে বলিল, “তোর তা ভাবিতে হুইবে না। সে সব বন্দোবস্ত আমি করিব । আমি । সঙ্গে লোক দিব, আমি তাদের বলিয়া পাঠাইব । তুই যাস ত বল ?” মজ্জনোমুখের সমীপবৰ্ত্তী কাঠফলকবৎ এই প্রবৃত্তি আমার চক্ষে একমাত্র রক্ষার উপায় বলিয়া বোধ হইল। আমি সম্মত হইলাম । চাপা বলিল, “আচ্ছা, তবে তুই ঠিক থাকিস । রাত্রে সবাই ঘুমাইলে আমি আসিয়া দ্বারে টোকা মারিব, বাহির হইয়া আসিস।” o