পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ջ8 লোকের কঙ্ক, কিন্তু তাহাকে দেখিয়াই বোধ হয় যে, সে ইতরপ্রকৃতিবিশিষ্ট নহে। ইতর লোক ভিন্ন তাহার অন্যত্র বিবাহের সম্ভাবনা নাই। ইতর লোকের সঙ্গেও এতকালে বিবাহ ঘটে নাই। দরিদ্রের ভাৰ্য্যা গৃহকৰ্ম্মের জন্য । যে ভাৰ্য্যার অন্ধতানিবন্ধন গৃহকৰ্ম্মের সাহায্য হইবে না-তাহাকে কোন দরিদ্র বিবাহ করিবে ? কিন্তু ইতর লোক ভিন্ন এই ইতরবৃত্তি-পরায়ণ কায়স্থের কন্যাকে কে বিবাহ করিবে ? তাহাতে আবার এ অন্ধ । এরূপ স্বামীর সহবাসে রজনীর দুঃখ ভিন্ন সুখের সম্ভাবনা নাই । দুশ্চেষ্ঠ কণ্টককাননমধ্যে যত্নপালনীয় উদ্যান-পুষ্পের জন্মের ন্যায় এই রজনীর পুষ্পবিক্রেতার গৃহে জন্ম ঘটিয়াছে। কণ্টকাৰ্বত হইয়াই ইহাকে মরিতে হইবে । তবে আমি গোপালের সঙ্গে ইহার বিবাহ দিবার জন্য এত ব্যস্ত কেন ? ঠিক জানি না। তবে ছোটমার দৌরাত্ম্য বড় ; তাহারই উত্তেজনাতে ইহার বিবাহ দিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম। আর বলিতে কি, বাহাকে স্বয়ং বিবাহ করিতে না পারি, তাহার বিবাহ দিতে ইচ্ছা করে । এ কথা শুনিয়া অনেক সুন্দরী মধুর হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিতে পারেন, তোমার মনে মনে রজনীকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা আছে কি ? না, সে ইচ্ছা নাই । রজনী মুন্দরী হইলেও অন্ধ, রজনী পুষ্পবিক্রেতার কন্যা এবং রজনী অশিক্ষিতা। রজনীকে আমি বিবাহ করিতে পারি না; ইচ্ছাও নাই। আমার বিবাহে অনিচ্ছাও নাই। তবে মনোমত কন্যা পাই না। আমি যাহাকে বিবাহ করিব, সে রজনীর মত সুন্দরী হইবে, অথচ বিদ্যুৎকটাক্ষবষিণী হুইবে ; বংশমর্য্যাদায় শাহ আলমের বা মহলাররাও হুঙ্কারের প্রপরাপ-সং পৌত্রী হইবে, বিদ্যায় লীলাবতী বা শাপভ্রষ্ট সরস্বতী হুইবে এবং পতিভক্তিতে সাবিত্রী - হুইবে ; চরিত্রে লক্ষ্মী, রন্ধনে দ্রৌপদী, অাদরে সত্যভামা এবং গৃহকৰ্ম্মে গদার মা । আমি পান খাইবার সময়ে পানের লবঙ্গ খুলিয়া দিবে, তামাকু খাইবার সময়ে ছকায় কলিকা আছে কি না, বলিয়া দিবে, আহারের সময়ে মাছের কাটা বাছিয়া দিবে এবং স্নানের পর গা মুছিয়াছি কি না, তদারক কৱিৰে । আমি চ খাইবার সময়ে দোয়াতের ভিতর চামচে পুরিয়া চার অনুসন্ধান না করি এবং কালির অনুসন্ধানে চার পাত্রমধ্যে কলম না দিই, তদ্বিবয়ে সভঞ্জ থাকিৰে ; পিক্‌দানীতে টাকা রাখিয়া বাক্সের ভিতর ছেপ না ফেলি, তাহার খবরদারী করিবে । ৰজুকে পত্র লিখিয় আপনার নামে শিরোনামা দিলে, বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ংশোধন করাইয়া লইবে, পয়সা দিতে টাকা দিতেছি কি না, খবর লইবে ; নোটের পিঠে দোকানের চিঠি কাটিতেছি কি না দেখিবে, এবং তামাসা করিবার সময়ে বিজ্ঞানের নামের পরিবর্তে ভক্তিমতী প্রতিবাসিনীর নাম করিলে ভুল সংশোধন করিয়া লইবে। ঔষধ খাইতে ফুলেল তৈল না খাই, চাকরাণীর নাম করিয়া ডাকিতে হোঁসের সাহেবের মেমের নাম না ধরি, এ সকল বিযয়ে সৰ্ব্বদা সতর্ক থাকিবে । এমন কন্যা পাই, তবে বিবাহ করি। আপনার ষে ইনি ওঁকে টিপিয়া হাসিতেছেন, আপনাদের মধ্যে যদি কেহ অবিবাহিতা এবং এই সকল গুণে গুণবতী থাকেন, তবে বলুন, আমি পুরোহিত ডাকি । তৃতীয় পরিচ্ছেদ শেষে রাজচন্দ্র দাসের কাছে শুনিতে পাইলাম যে, রজনীকে পাওয়া গিয়াছে, কিন্তু রাজচন্দ্র দাস এ বিষয়ে আমাদিগের সঙ্গে বড় চমৎকার ব্যবহার করিতে লাগিল। রজনীকে কোথায় পাওয়া গেল, কি প্রকারে পাওয়া গেল, তাহ কিছুই বলিল না। আমরা অনেক জিজ্ঞাসা করিলাম, কিছুতেই কোন কথা বাহির করিতে পারিলাম না । সে কেনই বা গৃহত্যাগ করিয়া গিয়াছিল, তাছাও জিজ্ঞাসাবাদ করিলাম,—তাহাও বলিল না । তাহার স্ত্রীও ঐরূপ —ছোট মা সুচির ন্যায় লোকের মনের ভিতর প্রবেশ করেন, কিন্তু তাহার কাছ হইতে কোন কথাই বাহির করিতে পারিলেন না। রজনী স্বয়ং আর আমাদের বাড়ীতে আসিত না । কেন আসিত না, তাহাও কিছু জানিতে পারিলাম না । শেষে রাজচন্দ্র ও তাহার স্ত্রীও আমাদিগের বাড়ী আসা পরিত্যাগ করিল। ছোট মা কিছু দুঃখিত হইয় তাহাদিগের অমুসন্ধানে লোক পাঠাইলেন । লোক ফিরিয়া আসিয়া বলিল যে, উহারা সপরিবারে অন্যত্র উঠিয়া গিয়াছে, সাবেক বাড়ীতে আর নাই । কোথায় গিয়াছে, তাহার কোন ঠিকানা করিতে পারিলাম না। ইহার এক মাস পরে এক জন ভদ্রলোক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন। তিনি আসিয়াই আপনি আত্মপরিচয় দিলেন । “আমার নিবাস কলিকাতায় নহে । আমার নাম অমরনাথ ঘোষ, অামার নিবাস শাস্তিপুর ” তখন আমি তাহার সঙ্গে কথোপকথনে নিযুক্ত হইলাম । কি জন্য তিনি আসিয়াছিলেন, আমি