পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী জামি । এখনও স্থির ? রজনীর রজনী অামাকে দিতেছে । অ ! আমি রজনীকে বিবাহ করিব—বিষয় বিবাহ করিব না । অামি । বিষয়ের জন্যই ত রজনীকে বিবাহ করিতে চাহিয়াছিলে ? অ ! স্ত্রীলোকের মন এমনই কদৰ্য্য । আমি । আমাদের উপর এত অভক্তি কত দিন ? অ । অভক্তি নাই—তাকা হইলে বিবাহ করিতে চাহিতাম না । আমি । কিন্তু বাছিয়া বাছিয়া অন্ধকন্তীতে এত অনুরাগ কেন ? তাই বিষয়ের কথা বলিতেছিলাম । অ ! তুমি বুদ্ধতে এত অনুরক্ত কেন ? বিষয়ের छछ कि ? আমি কাহারও সাক্ষাতে তাহার স্বামীকে বুড়া বলিতে নাই । আমার সঙ্গে রাগীরাগি কেন ? তুমি কি মুখরা স্ত্রীলোকের মুখকে ভয় কর না ? ( কিন্তু রাগীরাগি আমার আন্তরিক বাসনা ) অমরনাথ বলিল, “ভয় করি বৈ কি ? রাগের কথা কিছু বলি নাই । তুমি যেমন মিত্ৰজাকে ভালবাস, আমিও রজনীকে তেমনি ভালবাসি।” আমি । কটাক্ষের গুণে না কি ? অ ! না । কটাক্ষ নাই বলিয়া । তুমিও কাণ৷ হইলে আরও সুন্দর হইতে । অামি । সে কথা মিরেজাকে জিজ্ঞাসা করিব, তোমাকে নহে । সম্প্রতি, তুমিও যেমন রজনীকে ভালবাস, আমিও রজনীকে তেমনি ভালবাসি । অ ! তুমি রজনীকে বিবাহ করিতে চাও না কি ? অামি । প্রায় । আমি নিজে তাহাকে বিবাহ না করি, তাহার ভাল বিবাহ দিতে চাই । তোমার সঙ্গে তাহার বিবাহ হইতে দিব না । অ। আমি সুপাত্র । রজনীর এরূপ আর জুটিতেছে না । আমি । তুমি কুপাত্র, আমি সুপাত্র জোটাইয়৷ দিব । অ ! আমি কুপাত্র কিসে? আমি । কামিজটা খুলিয়৷ পিঠ বাহির কর দেখি ? অমরনাথের মুখ শুকাইয়া কাল হইয়া গেল ! অতি দুঃখিতভাবে বলিল, “ছি । লবঙ্গ !” আমার দুঃখ হইল, কিন্তু দুঃখ দেখিয়া ভুলিলাম না । বলিলাম, একটি গল্প বলিব, শুনিবে ?” বিষয় ভ ૭૧ আমি কথা চাপা দিতেছি মনে করিয়া অমরনাথ বলিল, “শুনিব ,o আমি তখন বলিতে লাগিলাম, "প্রথম যৌবমকালে লোকে আমাকে রূপবতী বলিত ।” অ । এটা যদি গল্প, তবে সভ্য কোম্ কথা ? অামি । পরে শোন। সেই রূপ দেখিয়া এক চোর মুগ্ধ হইয়া, আমার পিত্রালয়ে ষে ঘরে আমি এক পরিচারিকার সঙ্গে শয়ন করিয়া ছিলাম, সেই ঘরে সিদ্ধ দিল । এই কথা বলিতে আরম্ভ করায় অমরনাথ গলদঘৰ্ম্ম হইয়া উঠিল । বলিল, “ক্ষম কর।” আমি বলিতে লাগিলাম, “সেই চোর সিদ্ধ-পথে আমার কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিল । ঘরে অালো জলিতেছিল—আমি চোরকে চিনিলাম, ভীত হইয়া পরিচারিকাকে উঠাইলাম । সে চোরকে চিনিত না । আমি তখন অগত্যা চোরকে আদর করিয়া আশ্বস্ত করিয়া পালঙ্কে বসাইলাম।” অমর | ক্ষমা কর, সে ত সকলই জানি । অামি । তবু একবার স্মরণ করাইয়া দেওয়া ভাল । ক্ষণেক পরে চোরের অলক্ষ্যে অামার সঙ্কেতামুসারে পরিচারিক বাহিরে গিয়া দ্বারবানকে ডাকিয় লইয়৷ সি দমুখে দাড়াইয়া রহিল । আমিও সময় বুঝিয়া, বাহিরের প্রয়োজন ছলনা করিয়া নিৰ্গত হইয়া, বাহির হইতে একমাত্র স্বারের শৃঙ্খল বদ্ধ করিলাম । মন্দ করিয়াছিলাম ? অমরনাথ বলিল, “এ সকল কথা কেন ?” আমি । পরে চোর নির্গত হুইল কি প্রকারে, বল দেখি ? ডাকিয়া পাড়ার লোক জমা করিলাম । বড় বড় বলবান আসিয়া চোরকে ধরিল । চোর লজ্জায় মুখে কাপড় দিয়া রহিল । আমি দয়া করিয়া তাহার মুখের কাপড় খুলাইলাম না, কিন্তু স্বহস্তে লোহার শলা তপ্ত করিয়া তাহার পিঠে লিখিয়াছিলাম— جو پوجام ده আমর বাবু, অতি গ্রীষ্মেও কি আপনি গায়ের জামা খুলিয়া শয়ন করেন না ? অ ! না । অামি । লবঙ্গলতার হস্তাক্ষর মুছিবার নহে ৷ আমি রজনীকে ডাকিয়া এই গল্প শুনাইয়া যাই, ইচ্ছা ছিল, কিন্তু শুনাইব না, তুমি রজনীর যোগ্য নহ, রজনীকে বিবাহ করিতে চেষ্টা পাইও না । যদি ক্ষাস্ত না-হও, তবে সুতরাং গুনাইতে বাধ্য হইব ।