8e অপ্রসল্প-ভাবাপন্ন হইলেন, এমন আমার বোধ হইল, কিন্তু কথায় কিছু প্রকাশ পাইল না । নিশ্চয় বুঝিলাম, এটি সন্ন্যাসীর কীৰ্ত্তি । তিনি এক্ষণে স্থানান্তরে গিয়াছিলেন, অল্প দিনে আসিবার কথা ছিল। র্তাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম । কিন্তু তাহাও মনে ভাবিতে লাগিলাম যে, তিনিই ব৷ কি করিবেন ? আমি নিৰ্ব্বোধ দুরাকাঙ্ক্ষাপরবশ স্ত্রীলোক-ধনের লোভে অগ্রপশ্চাৎ না ভাবিয়া আপনিই এই বিপত্তি উপস্থিত করিয়াছি । তখন মনে জানিতাম যে, রজনীকে নিশ্চয়ই পুত্রবধু করিব । তখন কে জ্ঞানে যে, কাণ ফুলওয়ালীও জুল্লভ হইবে ? কে জানে যে, সন্ন্যাসীর মন্ত্রেীষধে হিতে বিপরীত হইবে ? স্ত্রীলোকের বুদ্ধি অতি ক্ষুদ্র, তাহা জনিতাম না ; আপনার বুদ্ধির অহঙ্কারে আপনি মজিলাম । আমার এমন বুদ্ধি হইবার আগে আমি মরিলাম না কেন ? এখন ইচ্ছা হইতেছে মরি, কিন্তু শচীন্দ্র বাবুর আরোগ্য না দেখিয়া মরিতে পারিতেছি না । কিছু দিন পরে কোথা হইতে সেই পূৰ্ব্বপরিচিত সন্ন্যাসী আসিয়া উপস্থিত হইলেন । তিনি বলিলেন, তিনি শচীন্দ্রের পীড়া শুনিয়! দেখিতে আসিয়াছেন, কে তাহাকে শচীন্দ্রের পীড়ার সংবাদ দিল, তাহ কিছুই বলিলেন না । শচীন্দ্রের পীড়ার বৃত্তান্ত আদ্যোপাস্ত শুনিলেন, পরে শচীন্দ্রের কাছে বসিয়া নানা প্রকার কথোপকখন করিতে লাগিলেন। তৎপরে প্রণাম করিবার জন্য আমি তাহাকে ডাকিয় পাঠাইলাম । প্রণাম করিয়া মঙ্গল-জিজ্ঞাসার পর বলিলাম, “মহাশয় সৰ্ব্বজ্ঞ ; না জানেন, এমন তত্ত্বই নাই । শচীন্দ্রের কি রোগ আপনি আবশ্ব জানেন ।” তিনি বলিলেন, “উহ। বায়ুরোগ । অতি দুশ্চিকিৎস্ত ।” অামি বলিলাম, “তবে শচীন্দ্ৰ সৰ্ব্বদা রজনীর নাম করে কেন ?” সন্ন্যাসী বলিলেন, कि ?” ( কি সৰ্ব্বনাশ, আমি বালিকা, আমি শচীর भां !) "এই রোগের এক গতি এই ষে, হৃদয়স্থ লুক্কায়িত এবং অপরিচিত ভাব বা প্রবৃত্ত্বি সকল প্রকাশিত হইয়া পড়ে এবং অত্যন্ত বলবান হষ্টয় উঠে । শচীন্দ্র কদাচিৎ আমাদিগের দৈববিদ্যা সকলের পরীক্ষার্থী হইলে আমি কোন তান্ত্রিক অনুষ্ঠান করিলাম । “তুমি বালিকা, বুঝিবে বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী * তাহাতে যে র্তাহাকে আস্তরিক ভালবাসে, তিনি তাহাকে স্বপ্নে দেখিবেন । শচীন্দ্র রাত্ৰিযোগে রজনীকে স্বপ্ন দেখিলেন । স্বাভাবিক নিয়ম এই ষে, ষে আমাদিগকে ভালবাসে বুঝিতে পারি, আমরা তাহার প্রতি অনুরক্ত হই । অতএব সেই রাত্রে শচীঞ্জের মনে রজনীর প্রতি অনুরাগের বীজ গোপনে সমারোপিত হইল। কিন্তু রজনী অন্ধ এবং ইতর লোকের কন্যা ইত্যাদি কারণে সে অনুরাগ পরিস্ফুট হইতে পারে নাই। অনুরাগের লক্ষণ স্বহৃদয়ে কিছু দেখিতে পাইলেও শচীন্দ্র তৎপ্রতি বিশ্বাস করেন নাই । ক্রমে ঘোরতর দারিদ্র্যদুঃখের আশঙ্কা তোমাদিগকে পীড়িত করিতে লাগিল । সৰ্ব্বাপেক্ষা শচীন্দ্রই তাহাতে গুরুতর ব্যথা পাইলেন । অঙ্গমনে, দারিদ্র্যদুঃখ ভুলিবার জন্য শচীন্দ্র অধ্যয়নে মন দিলেন । অন্যমন হইয়া বিদ্যালোচনা করিতে লাগিলেন । সেই বিদ্যালোচনার আধিক্যহেতু চিত্ত উদ্ভান্ত হইয়া উঠিল । তাহাতেই এই মানসিক রোগের স্বষ্টি । সেই মানসিক রোগকে অবলম্বন করিয়া রজনীর প্রতি সেই বিলুপ্তপ্রায় অনুরাগ পুনঃ প্রস্ফুটিত হইল। এখন আর শচীন্দ্রের সে মানসিক শক্তি ছিল না যে, তদ্বারা তিনি সেই অবিহিত অনুরাগকে প্রশমিত করেন । বিশেষ পূর্বেই বলিয়াছি যে, এই সকল মানসিক পীড়ার কারণ যে, যে গুপ্ত মানসিক ভাব বিকসিত হয়, তাহা অপ্রাকৃত হইয় উঠে । তখন তাহা বিকারের স্বরূপ প্রতীয়মান হয় । শচীন্দ্রের সেইরূপ এ বিকার ” আমি তখন কাতর হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম যে, “ইহার প্রতীকারের কি উপায় হইবে ?” সন্ন্যাসী বলিলেন, “আমি ডাক্তারী শাস্ত্রের কিছুই জানি না । ডাক্তারদিগের দ্বারা এ রোগ উপশম হইতে পারে কি না, তাহা বিশেষ বলিতে পারি না, কিন্তু ডাক্তারেরা কখনও এ সকল রোগের প্রতীকার করিয়াছে, এমন আমি গুনি নাই ।” আমি বলিলাম ষে, “অনেক ডাক্তার দেখান হুইয়াছে, কোন উপকার হয় নাই ।” স। সচরাচর বৈদ্যচিকিৎসকের দ্বারাও কোন উপকার হইবে না । আমি । তবে কি কোন উপায় নাই ? স। যদি বল, তবে অামি ঔষধ দিই । অামি । আপনার ঔষধের অপেক্ষা কাহার ঔষধ ? আপনিই আমাদের রক্ষাকৰ্ত্তা, আপনিই ঔষধ দিন । স। তুমি বাড়ীর গৃহিণী। তুমি বলিলেই ঔষধ দিতে পারি। শচীন্দ্ৰও তোমার বাধ্য। তুমি