পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দীনবন্ধু-জীবনী । G অপদস্থ হইয়াছিলেন । ইহার ইংরেজি অনুবাদ করিয়া মাইকেল মধুসুদন দত্ত গোপনে তিরস্কৃত ও অবমানিত হইয়াছিলেন এবং শুনিয়াছি শেষে তাহার জীবন নিৰ্বাহের উপায় সুপ্রীম কোটের চাকুরি। পৰ্য্যন্ত ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। গ্ৰন্থকীৰ্ত্তা নিজে কারাবদ্ধ কি কৰ্ম্মচু্যত হয়েন নাই বটে, কিন্তু তিনি ততোধিক বিপদগ্ৰস্ত হইয়াছিলেন । এক দিন রাত্ৰে নীল-দৰ্পণ লিখিতে লিখিতে দীনবন্ধু মেঘনা পার হইতেছিলেন । কুল হইতে প্ৰায় দুই ক্রোশ দূরে গেলে নৌকা হঠাৎ জলমগ্ন হইতে লাগিল। দাড়ী, মাঙ্গী সকলেই সন্তরণ আরম্ভ করিল ; দীনবন্ধু তাহাতে আ ক্ষম । দীনবন্ধু নীল-দৰ্পণ হস্তে করিয়া জলম জনোমুখ নৌকায় নিস্তব্ধে বসিয়া রহিলেন । এমন সময়ে হঠাৎ একজন সন্তরণকারীর পদ মুত্তিক স্পর্শ করিবায় সে সকলকে ডাকিয়া বলিল, “ভয় নাই, এখানে জল অল্প, নিকটে অবশ্য চর আছে।” বাস্তবিক নিকটে চর ছিল, তথায় নৌকা আনীত হইয়া চারালগ্ন হইলে দীনবন্ধু উঠিয়া নৌকার ছাদের উপর বসিয়া রহিলেন । তখন ও সেই আদ্র নীল-দৰ্পণ। তাহার হস্তে রহিয়াছে। এই সময়ে মেঘনায় ভাটা বহিতেছিল,সম্বরেই জোয়ার আসিয়া এই চর ডুবিয়া যাইবে এবং সেই সঙ্গে এই জলপূৰ্ণ ভগ্ন তৈরি ভাসিয়া যাইবে, তখন জীবন রক্ষার উপায় কি হইবে, এই ভাবনা দাড়ী,মাঝি সকলেই ভাবিতেছিল, দীনবন্ধু ও ভাবিতেছিলেন । তখন রাত্ৰি গভীর, আবার ঘোর অন্ধকার, চারিদিকে বেগবতীর বিষম স্রোতধবনি, কচিং মধ্যে মধ্যে নিশাচর পক্ষীদিগের চীৎকার। জীবন রক্ষার কোন উপায় না দেখিয়া দীনবন্ধু একেবারে নিরাশ্বাস হইতেছিলেন, এমন সময় দূরে দাড়ের শব্দ শুনা গেল। সকলেই উচ্চৈঃস্বরে পুনঃ পুনঃ ডাকি বায় দূরবর্তী নৌকারোহীরা উত্তর দিল, এবং স্বত্বরে আসিয়া দীনবন্ধু ও তৎসমভি ব্যাহারী দিগকে উদ্ধার করিল। ঢাকা বিভাগ হইতে, দীনবন্ধু পুনৰ্ব্বার নদীয়া প্ৰত্যাগমন করেন । ফলতঃ নদীয়া বিভাগেই তিনি অধিককাল নিযুক্ত ছিলেন ; বিশেষ কাৰ্য্য-নিৰ্বাহ জন্য তিনি ঢাকা বা অন্যত্র প্রেরিত হইতেন । ঢাকা বিভাগ হইতে প্ৰত্যাগমন পরে দীনবন্ধু “নবীন তপস্বিনী” প্ৰণয়ন করেন। উহা কৃষ্ণনগরে মুদ্রিত হয়। ঐ মুদ্রাযন্ত্রটা দীনবন্ধু প্রভৃতি কয়েক জন কৃতবিদ্যের উদ্যোগে স্থাপিত হইয়াছিল, কিন্তু স্থায়ী হয় নাই । দীনবন্ধু নদীয়া বিভাগ হইতে পুনৰ্ব্বার ঢাকা বিভাগে প্রেরিত হয়েন। আবার ফিরিয়া আসিয়া উড়িষ্যা বিভাগে প্রেরিত হয়েন । পুনৰ্ব্বার নদীয়া