পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দীনবন্ধু-জীবনী। Sto মনুষ্যমাত্রেরই অহঙ্কার আছে ;-দীনবন্ধুর ছিল না । মনুষ্যমাত্রেরই রাগ আছে ;-দীনবন্ধুর ছিল না । দীনবন্ধুর কোন কথা আমার কাছে গোপন ছিল না, আমি কখন তঁহার রাগ দেখি নাই। অনেক সময়ে তাহার ক্রোধাভাব দেখিয়া তঁহাকে অনুযোগ করিয়াছি, তিনি রাগ করিতে পারিলেন না বলিয়া অপ্ৰতিভ হইয়াছেন। অথবা ক্রুদ্ধ হইবার জন্য যত্ন করিয়া, শেষে নিস্ফল হইয়া বলিয়াছেন “কই, রাগ যে হয় না।” তাহার যে কিছু ক্রোধের চিহ্ন পাওয়া যায়,তাহী জমাই-বারিকের “ভোতা রাম ভাটের” উপরে। যেমন অনেকে দীনবন্ধুর গ্রন্থের প্রশংসা করিতেন, তেমনি কতকগুলি লোক তঁহার গ্রন্থের নিন্দক ছিল । যেখানে যশ সেই খানেই নিন্দা, সংসারের ইহা নিয়ম । পৃথিবীতে যিনি যশস্বী হইয়াছেন, তিনিই সম্প্রদায় বিশেষ কর্তৃক নিন্দিত হইয়াছেন । ইহার অনেক কারণ আছে। প্ৰথম, দোষ শূন্য মনুষ্য জন্মে না ; যিনি বহু গুণবিশিষ্ট, তঁহার দোষগুলি, গুণসান্নিধ্য হেতু, কিছু অধিকতর স্পষ্ট হয়, সুতরাং লোকে তৎকীৰ্ত্তনে প্ৰবৃত্ত হয়। দ্বিতীয়, গুণের সঙ্গে দোষের চিরবিরোধ, দোষযুক্ত ব্যক্তিগণ গুণশালী ব্যক্তির সুতরাং শক্ৰ হইয়া পড়ে। তৃতীয়, কৰ্ম্মক্ষেত্রে প্রবৃত্ত হইলে কাৰ্য্যের গতিকে অনেক শক্রি হয় ; শক্ৰেগণ অন্য প্রকারে শক্ৰতা সাধনে অসমর্থ হইলে নিন্দার দ্বারা শক্ৰতা সাধে। চতুর্থ, অনেক মানুষ্যের স্বভাবই এই, প্ৰশংসা অপেক্ষা নিন্দ করিতে ও শুনিতে ভালবাসে ; সামান্য ব্যক্তির নিন্দার অপেক্ষ যশস্বী ব্যক্তির নিন্দা বক্তা ও শ্রোতার সুখদায়ক । পঞ্চম, ঈৰ্ষা মানুষ্যের স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম ; অনেকে পরের যশে অত্যন্ত কাতর হইয়া যশস্বীর নিন্দ করিতে প্ৰবৃত্ত হয়েন । এই শ্রেণীর নিন্দকই অনেক, বিশেষ বঙ্গদেশে । দীনবন্ধু স্বয়ং নিৰ্ব্বিরোধ, নিরহস্কার এবং ক্ৰোধ-শূন্য হইলেও এই সকল কারণে তাহার অনেকগুলি নিন্দক হইয়া উঠিয়াছিল। প্রথমাবস্থায় কেহ তঁহার নিন্দক ছিল না, কেননা প্রথমাবস্থাতে তিনি তাদৃশ যশস্বী হয়েন নাই। যখন “নবীন তপস্বিনী” প্রচারের পর তাহার যশের মাত্ৰা পূর্ণ হইতে লাগিল, তখন নিন্দকশ্রেণী মাথা তুলিতে লাগিল। দীনবন্ধুর গ্রন্থে যথার্থই অনেক দোষ আছে,-কেহ কেহ কেবল সেই জন্যই নিন্দ করিতেন। তাহাতে কাহারও আপত্তি নাই ; তবে তাহারা যে দোষের ভাগের সঙ্গে গুণের ভাগ বিবেচনা করেন না, এই জন্যই তঁহাদিগকে নিন্দক বলি । অনেকে দীনবন্ধুর নিকট চাকরীর উমেদারী করিয়া নিস্ফল হইয়া সেই