পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RVt9 পরিশিষ্ট । যাহারা ছবি তুলিতে জানেন, ছবি কি তাহা বুঝেন, তাহারা খেয়ালের বশবত্তা হইয়া যে কোনও দৃশ্য তুলিবার জন্যই “ক্যামেরা” পাতেন না। আমরা কোনও জিনিস সুন্দর দেখি কেন, সে তত্ত্বের একটা আলোচনা না করিলেও, এই সহজ কথাটা সকলেই বুঝিতে পারি, যেগুলি মনুষ্যত্বের কল্যাণময় বিকাশের ফল, তাহা আমাদের চক্ষে পরম সুন্দর-আকৃত্ৰিম স্নেহ সুন্দর, অচল ভক্তি সুন্দর, আত্মবিস্মৃত প্ৰণয় সুন্দর, নিঃশ্বাৰ্থ হিতৈষণা সুন্দর। কৃত্রিমতা, চপলতা, নীচতা ও স্বার্থপরতায় যেখানে ডুবিয়া থাকি, সেখানে কবি-সৃষ্ট সৌন্দৰ্য্য সংস্করণ ও উদ্ধারের কাৰ্য্য সাধন করে। কবির সেই আদর্শসৃষ্টি একটা খেয়ালের ফলে নয় ; যাহা সুন্দর, তাহাই সম্ভোগ্য ও হিতকর বলিয়া সে আদর্শ উপস্থাপিত হয় । কাহারও মনে যদি কোনও সমাজ-সংস্কারের প্রবৃত্তি জাগিয়া উঠে, তবে তিনি যাহা অকল্যাণকর ও অসুন্দর, তাহার পরিবর্তে যাহা জীবনপ্রদ ও সুন্দর, তাহাই স্থাপন করিতে চাহেন। সেই উদ্দেশ্যটাই যখন সুন্দর, তখন কাব্য-কৌশলের অভাব না থাকিলে সে উদ্দিষ্ঠ সৌন্দৰ্য্য কেন যে সুন্দর করিয়াই প্ৰদৰ্শন করা যাইবে না, তাহা বুঝিতে পারি না । দুঃখপ্ৰপীড়িত পথভ্রান্ত মানবের পরমকল্যাণকামনায় ভগবান বুদ্ধদেব যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা উদান গ্রন্থে পাই ; উদানে যে সৌন্দর্য্যের স্বষ্টি, জগতের কোন সাহিত্যে তাহা আছে ? নিঃস্বাৰ্থ মঙ্গলকামনার মত সুন্দর যখন কিছুই নাই, এবং সংস্করণের উদ্দেশু যখন তাহাই, তখন সে উদেখতে কাব্য-সৌন্দর্য্য-স্থইর পরিপন্থী বলিয়া কল্পনা করিতে পারি না। যদি শিল্প-চাতুৰ্য্য না থাকে, তবে খেয়ালেই হউক, উদ্দেশ্য লইয়াই হউক, কিছুতেই কাব্যের সৌন্দৰ্য্যবিধান সম্ভব হয় না | নীলকরেরা যে ভীষণ অত্যাচারে বাঙ্গালার প্রজাবৰ্গকে পিষিয়া মারিতে ছিল, দীনবন্ধু যে তাহার প্রকৃতি ছবি আঁকিয়াছেন, এ কথা বঙ্কিম বাবু স্বীকার করেন । তিনি স্বীকার করেন যে, পল্লীচিত্র ও চাষার জীবনের সহিত দীনবন্ধুর মত অল্প লোকই সুপরিচিত ছিলেন, এবং দীনবন্ধু “ক্ষেত্রমণির মত গ্ৰাম্য বর্ষীয়সীর ও তোরাপের মত গ্ৰাম্য প্ৰজার নাড়ী নক্ষত্ৰ জানিতেন।” তাহা হইলে, নীলদর্পণে উপস্থাপিত চিত্রগুলি যে প্ৰকৃতির মুখের উপর দর্পণ ঘরিয়া অঙ্কিত, তাহাতে সন্দেহ রহিল না । তবে ঐ ছবিগুলি কাব্যের উপযোগী হইয়া চিত্রিত হইয়াছে কি না, তাহা দ্রষ্টব্য ।