পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম মা, নৰলা বিদ্যাসাগর প্রভৃতি মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত থাকিতে আমরা ন্যায়রত্ন মহাশয়কে এই সম্প্রদায়ের মািখপাত্রস্বরপ গ্ৰহণ করিলাম, ইহাতে সংস্কৃতবাদীদিগের প্রতি কিছু অবিচার হয়, ইহা আমরা স্বীকার করি। ন্যায়রত্ন মহাশয় সংস্কৃতে সশিক্ষিত, কিন্তু ইংরেজি জানেন না-পাশ্চাত্ত্য সাহিত্য তাঁহার নিকট পরিচিতৃ নহে। তাঁহার প্রণীত বাঙ্গালা সাহিত্যবিষয়ক প্রস্তাবে ইংরেজি বিদ্যার একটি পরিচয় দিতে গিয়া ন্যায়রত্ন মহাশয় কিছ লোক হাসাইয়াছেন।* আমরা সেই গ্রন্থ হইতে সিদ্ধ করিতেছি যে, পাশ্চাত্ত্য সাহিত্যের অনশীলনে যে সফল জন্মে, ন্যায়রত্ন মহাশয় তাহাতে বাঁশ্চিত। যিনি এই সফলে বঞ্চিত, বিচাষ্য বিষয়ে তাঁহার মত তাঁহার নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যেই যে অধিক গৌরব প্রাপ্ত হইবে, এমত বোধ হয়। কিন্তু দভাগ্যবশতঃ যে সকল সংস্কৃতবাদী পণ্ডিতদিগের মত অধিকতর আদরণীয়, তাঁহারা কেহই সেই মত, সর্বপ্রণীত কোন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখেন নাই। সতরাং তাঁহাদের কাহারও নাম উল্লেখ করিতে আমরা সক্ষম হইলাম না। ন্যায়রত্ন মহাশয় সর্বপ্রণীত উক্ত সাহিত্যবিষয়ক প্রস্তাবে আপনার মতগলি লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছেন। এই জন্যই তাঁহাকে এ সম্প্রদায়ের মািখপাত্ৰসম্বরপ ধরিতে হইল। তিনি “আলালের ঘরের দালাল” হইতে কিয়দংশ উদ্ধত করিয়া লিখিয়াছেন যে, “এক্ষণে জিজ্ঞাস্য এই যে, সব্বাবিধ গ্ৰন্থরচনায় এইরূপে ভাষা আদর্শস্বরূপ হইতে পারে কি না ?—আমাদের বিবেচনায় কখনই না। আলালের ঘরের দালাল বল, হতোমপেচা বল, মণিালিনী বল-পত্নী বা পাঁচ জন বয়স্যের সহিত পাঠ করিয়া আমোদ করিতে পারি-কিন্তু পিতাপত্রে একত্র বসিয়া অসংকুচিতম খে। কখনই ও সকল পড়িতে পারি না। বর্ণনীয় বিষয়ের লডজাজনকতা উহা পড়িতে না পারিবার কারণ নহে, ঐ ভাষারই কেমন একরােপ ভঙ্গী আছে, যাহা গরােজনসমক্ষে উচ্চারণ করিতে লজা বোধ হয়। পাঠকগণ! যদি আপনাদের উপর বিদ্যালয়ের পস্তকনিক্সবাচনের ভার হয়, আপনার আলালী ভাষায় লিখিত কোন পস্তককে পাঠ্যরাপে নিন্দেশ করিতে পরিবেন। কি ?--বোধ হয়, পরিবেন না। কেন পরিবেন না ?-ইহার উত্তরে অবশ্য এই কথা বলবেন। যে, ওরােপ ভাষা বিশেষ শিক্ষাপ্রদ নয়, এবং উহা সৰ্ব্বসমক্ষে পাঠ করিতে লতাজা বোধ হয়। অতএব বলিতে হইবে যে, আলালী ভাষা সম্প্রদায়বিশেষের বিশেষ মনোরঞ্জিকা হইলেও, উহা সকবাবিধ পাঠকের পক্ষে উপযক্ত নহে। যদি তাহা না হইল, তবে আবার জিজ্ঞাস্য হইতেছে যে, ঐরােপ ভাষায় গ্ৰন্থরচনা করা উচিত কি না ? আমাদের বোধে অবশ্য উচিত। যেমন ফলারে বসিয়া অনবরত মিঠাই মন্ডা খাইলে জিহবা একরােপ বিকৃত হইয়া যায়-মধ্যে মধ্যে আদার কুচি ও কামড়ার খাট্টা মাখে না দিলে সে বিকৃতির নিবারণ হয় না, সেইরােপ কেবল বিদ্যাসাগরী রচনা শ্ৰবণে কর্ণের যে একরােপ ভাব জন্মে, তাহার পরিবত্তন করণার্থ মধ্যে মধ্যে অপরবিধ রচনা শ্রবণ করা পাঠকদিগের আবশ্যক।” আমরা ইহাতে বঝিতেছি যে, প্রচলিত ভাষা ব্যবহারের পক্ষে ন্যায়রত্ন মহাশয়ের প্রধান আপত্তি যে, পিতা পত্রে একত্রে বসিয়া এরপ ভাষা ব্যবহার করিতে পারে না। বঝিলাম যে, ন্যায়রত্ন মহাশয়ের বিবেচনায় পিতা পত্রে বড় বড় সংস্কৃত শব্দে কথোপকথন করা কত্তব্য ; প্রচলিত ভাষায় কথাবাত্তা হইতে পারে না। এই আইন চলিলে বোধ হয়, ইহার পর শনিব যে, শিশ্য মাতার কাছে খাবার চাহিবার সময় বলিবে, “হে মাতঃ খাদ্যং দেহি মে” এবং ছেলে বাপের সকলের সম্মখে সরল ভাষা ব্যবহার করিতে লজা বোধ করেন, এবং সেই ভাষাকে শিক্ষাপ্ৰদ বিবেচনা করেন না, ইহা শনিয়া তাঁহার ছাত্রদিগের জন্য আমরা বড় দঃখিত হইলাম। বোধ হয়, তিনি সর্বীয় ছাত্রগণকে উপদেশ দিবার সময়ে লজ্জাজাবশতঃ দেড়গজী সমাসপরম্পরা বিন্যাসে তাহাদিগের মাথা ঘরাইয়া দেন। তাহারা যে এবংবিধ শিক্ষায় অধিক বিদ্যা উপাত্তজন করে,

  • যে, যে গ্রন্থ পড়ে নাই, যাহাতে যাহার বিদ্যা নাই, সেই গ্রন্থে ও সেই বিদ্যায় বিদ্যাবত্তা দেখান, বাঙ্গালী লেখকদিগের মধ্যে একটি সংক্ৰামক রোগের স্বরপ হইয়াছে। যিনি একছত্র সংস্কৃত কখন পড়েন নাই, তিনি ঝাড়ি ঝড়ি সংস্কৃত কবিতা তুলিয়া সর্বীয় প্রবন্ধ উত্তজবল করিতে চাহেন; যিনি এক BiB BDBD DDBB DS DD BBD DDBD DDBB DBBD BDBB DBDBD BD DDD BDuY গ্রন্থ ভিন্ন পড়েন নাই-তিনি বড় বড় গ্রন্থ হইতে অসংলগ্ন কোটেশ্যন করিয়া হাড় জবালান। এ সকল নিতান্ত কুরুচির ফল।

OGO