পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कुकीछ হয় কৈ? বোধ করি, এইরূপ ভাবিয়া চিন্তিয়া তাঁহারা, কৃষ্ণের হাস্য ও নিম্ফান্তির মধ্যে একটা বিশ্বরপঃপ্রকাশ প্রক্ষিপ্ত कौननाशन। এই মহাভারতের ভীষ্মমপকেবাের ভগবশগীতা-পৰিবাধ্যায়ে (তাহা প্রক্ষিপ্ত হউক বা না হউক) আর একবার বিশ্বরপেপ্রদর্শন বর্ণিত আছে। সেই বিশ্বরপবৰ্ণনায় আর এই বর্ণনায় কি বিস্ময়কর প্রভেদ ! গীতার একাদশের বিশ্বরপবৰ্ণনা প্রথম শ্রেণীর কবির রচনা; সাহিত্য-জগৎ খাজিয়া বেড়াইলে তেমন আর কিছ পাওয়া দলভ। আর ভগবদ যান-পৰ্ব্বব্যাধ্যায়ে এই বিশ্বরপবর্ণনা যাঁহার রচিত, কাব্যরচনা। তাঁহার পক্ষে বিড়ািবনা মাত্র। ভগবদগীতার একাদশে পড়ি যে, ভগবান অজ্ঞজনকে বলিতেছেন, “তোমা ব্যতিরেকে আর কেহই ইহা পন্ডেব নিরীক্ষণ করে নাই।” কিন্তু তৎপর্বেই এখানে দায্যোধনাদি কৌরব সভাস্থ সকল লোকেই বিশ্বরপ নিরীক্ষণ করিল। ভগবান গীতার একাদশে, আরও বলিতেছেন, “তোমা ব্যতিরেকে মনষ্যিলোকে আর কেহই বেদাধ্যয়ন, যজ্ঞানপীঠান, দান, ক্রিয়াকলাপ, লয় ও অতি কঠোর তপস্যা দ্বারা আমার ঈদশ রােপ অবলোকন করিতে সমর্থ হয় না।” কিন্তু কুকবির হাতে পড়িয়া, এখানে বিশ্বরপ, যার তার প্রত্যক্ষীভূত হইল। গীতায় আরও কথিত হইয়াছে, “অনন্যসাধারণ ভক্তি প্ৰদৰ্শন করিলেই আমাদের এইরূপে জ্ঞাত হইতে পারে, এবং আমারে দশন ও আমাতে প্রবেশ করিতে সমর্থ হয়।” কিন্তু এখানে দম্প্রকৃতকারী পাপাত্মা ভক্তিশান্য শত্রগণও তাহা নিরীক্ষণ করিল। নিম্প্রয়োজনে কোন কৰ্ম্মম মািখও করে না, যিনি বিশ্বরপী, তাঁহার ত কথাই নাই। এখানে বিশ্বরপ প্রকাশের কিছমাত্র প্রয়োজন হয় নাই। দায্যোধনাদি বলপ্রয়োগের পরামর্শ করিতেছিল, বলপ্রয়োগের কোন উদ্যম করে নাই। পিতা ও পিতৃব্য কর্তৃক তিরস্কৃত হইয়া দায্যোধন নিরািত্তর হইয়াছিল। বলপ্রকাশের কোন উদ্যম করিলেও, সে বল নিশ্চিত ব্যর্থ হইত, ইহা কৃষ্ণের অগোচর ছিল না। তিনি সস্বয়ং এতাদশ বলশালী যে, বল দ্বারা কেহ তাঁহার নিগ্ৰহ করিতে পারে না। ধন্তরাষ্ট্ৰ ইহা বলিলেন, বিদার বলিলেন, এবং কৃষ্ণ নিজেও বলিলেন। কৃষ্ণের নিজের বল আত্মরক্ষায় প্রচুর না হইলেও কোন শঙ্কা ছিল না, কেন না, সাতকি কৃতবৰ্ম্মা প্রভৃতি মহাবলপরাক্রান্ত বৃষ্ণিবংশীয়েরা তাঁহার সাহায্য জন্য উপস্থিত ছিলেন। তাহাদিগের সৈন্যও রাজদ্বারে যোজিত ছিল। দৰ্য্যোধনের সৈন্য উপস্থিত থাকার কথা কিছ দেখা যায় না। অতএব বলদ্বারা নিগ্রহের চেন্টা ফলবতী হইবার কোন সম্ভাবনা ছিল না। সম্ভাবনার অভাবেও ভীত হন, কৃষ্ণ এরােপ কাপরােষ নহেন। যিনি বিশ্বরপ, তাঁহার এরূপ ভয়ের সম্ভাবনা নাই। অতএব বিশ্বরপ প্রকাশের কোন কারণ ছিল না। এ অবস্থায় কুদ্ধ বা দাম্ভিক ব্যক্তি ভিন্ন শত্রকে ভয় দেখাইবার চেষ্টা করে না। যিনি বিশ্বরপ, তিনি ক্রোধশান্য এবং দম্ভশান্য। অতএব, এখানে বিশ্বরপের কথাটা কুকবির প্রণীত অলীক উপন্যাস বলিয়া ত্যাগ করাই বিধেয়। আমি পািনঃ পািনঃ দেখাইয়াছি, মানষী, শক্তি অবলম্বন করিয়া কৃষ্ণ কৰ্ম্ম করেন, ঐশী শক্তি দ্বারা নহে। এখানে তাহার ব্যতিক্রম হইয়াছিল, এরপ বিবেচনা করিবার কোন কারণ নাই। কুর হইতে কৃষ্ণ কুন্তীসম্ভাষণে গেলেন। সেখান হইতে তিনি উপপ্লব্য নগরে, যেখানে পান্ডবেরা অবস্থান করিতেছিলেন, তথায় যাত্রা করিলেন। যাত্রাকালে কণাকে আপনার রথে তুলিয়া লইলেন। যাহারা কৃষ্ণকে নিগ্ৰহ করিবার জন্য পরামর্শ করিতেছিল, কণা তাহার মধ্যে। তবে কণাকে কৃষ্ণ স্বরথে আরোহণ করাইয়া চলিলেন কেন, তাহা পরপরিচ্ছেদে বলিব। সে কথায় কৃষ্ণচরিত্র পরিস্ফাট হয়। সাম ও দণ্ডনীতিতে কৃষ্ণের নীতিজ্ঞতা দেখিয়াছি। এক্ষণে ভেদ নীতিতে তাঁহার পারদশিতা দেখিব। সেই সঙ্গে ইহাও দেখিব যে, কৃষ্ণ আদশ পরিষ বটে, কেন না, তাঁহার দয়া, জীবের হিতকামনা, এবং বদ্ধি, সকলই লোকাতীত। অস্টম পরিচ্ছেদ-কৃষ্ণ-কণা সংবাদ কৃষ্ণ সব্বভূতে দয়াময়। এই মহাযান্ধজনিত যে অসংখ্য প্রাণিক্ষয় হইবে, তাহাতে আর কোন ক্ষত্ৰিয় ব্যথিত নহে, কেবল কৃষ্ণই ব্যথিত। যখন প্রথম বিরাট নগরে বন্ধের প্রস্তাব হয়, তখন কৃষ্ণ যন্ধের বিরুদ্ধে মত দিয়াছিলেন। অর্জন তাঁহাকে যদুদ্ধে বরণ করিতে গেলে, কৃষ্ণ এ বন্ধে অস্ত্র ধরিবেন না ও যাদ্ধ করবেন না প্রতিজ্ঞা করিলেন। কিন্তু তাহাতেও যন্ধ বন্ধ GO