পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীত অতিবাহিত হইয়াছে। তথাপি এখন আমার মনে হইতেছে, বঝি আমার কৰ্ত্তব্য কিছই করা হয় নাই, অথচ আর আমি কি করিব, নিণয় করিতে পারিতেছি না। এই জন্য মন অতিশয় ব্যাকুল হইয়াছো-অশান্ত মনে সমদ্রতীরে আসিয়াছি-দেব! কোথায় আমার কত্তব্যের ত্রটি হইয়াছে, আরও আমার কি কত্তব্য বাকি আছে, নিদ্দেশ করিয়া আমার এই অশান্ত মনে শান্তি প্রদান করন। “ধৰ্ম্মেমর প্রধান অবলম্পবন ভক্তি জগতে প্রচার কর”-এই উপদেশ দিযা দেবষি অন্তহিত হইলেন । কথিত আছে যে, ব্যাসদেব তখন ভাগবত ও ভগবদগীতা প্রণযন করেন, আরও দই একখানি পরাণে ভক্তের আদশ অঙ্কন করেন। এই কারণে কেহ কেহ মহাভারত গীতার পকেব রচিত হইয়াছিল, অনমান করেন। গীতাও ভাগবত ভক্তিপ্রধান গ্রন্থ। ব্যাসদেব বঝিয়াছিলেন, ভক্তি জীবনের চরম উদ্দেশ্য, পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। কি কথাটা হইতেছিল, এক্ষণে এক বার স্মরণ করা কত্তব্য। ভগবান অজ্ঞজনকে জ্ঞানযোগ বঝাইয়া, “এষা তেহভিহিতা সাংখ্যে” ইত্যাদি বাক্যে বলিলেন যে, এখন তোমাকে কম্পমাযোগ শনাইব। তখন কম্পমাযোগের কিছ প্রশংসা করিয়া, প্রথমতঃ একটা সাধারণ প্রচলিত ভ্ৰান্তির নির্যাসে প্রবত্ত হইলেন। সে ভ্রান্তি এই যে, বেদোক্ত কাম্য কৰ্ম্মম সকলেই লোকের চিত্ত নিবিচাট, তােদশ লোক ঈশ্বরে একাগ্রাঁচিত্ত হইতে পারে না। তাই ভগবান অজ্ঞজনকে বলিলেন যে, বেদ সকল “ত্ৰৈগণ্যবিষয়,” তুমি নিস্ত্রৈগণ্য হও বা বেদবিষয়কে অতিক্রম কর। কেন না, যেমন সব্বত্র জলপ্লাবিত হইলে বাপী কাপ তাড়াগাদিতে কাহারও প্রয়োজন হয় না, তেমনি যে ব্ৰহ্মীনিন্ঠ, বেদে আর তাহার প্রয়োজন হয় না। কলমযোগের সহিত বৈদিক কম্পেমর সম্পবিন্ধ রাহিত্য এইরুপে প্রতিপাদনা করিয়া ভগবান এক্ষণে কলমযোগ কহিতেছেন :- কমণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষ কদাচন। মা কৰ্ম্মফলহেতুভূমা তে সঙ্গোহসত্বকম্পমণি ৷৷ ৪৭ ৷৷ কম্মেম তোমার অধিকার, কিন্তু ফলে কদাচি (অধিকার) না হউক। তুমি কম্পমফলহেতু হইও না; অকৰ্ম্মেম তোমার আসক্তি না হউক ৷৷ ৪৭ ৷৷ এই শ্লোক বঝিতে গেলে, “কলম” কি, “কম্পমফলহেতু” কি, “অকস্মা" কি, বঝা চাই। * কৰ্ম্মম কি” বঝিলে, আর দইটা বঝা গেল। কম্পমফল যাহার প্রবত্তি হেতু, সেই “কৰ্ম্মফলহেতু”। কমশন্যতাই অকৰ্ম্মম।। কৰ্ম্মম কি, তাহা পরে বলিতেছি। অতএব শ্লোকের অর্থ এই যে, কম্পমা করিও, কিন্তু কৰ্ম্মফল কামনা করিও না। কম্পমফলপ্ৰাপ্তিই যেন তোমার কম্মেম প্রবত্তির হেতু না হয়। কিন্তু কম্পেমর ফলের প্রত্যাশা না থাকিলে কেহ কাম করিতে প্রবত্ত হইবার সম্ভাবনা নাই, এই জন্য শ্লোকশেষে তাহাও নিষিদ্ধ হইতেছে। বলা হইতেছে, ফল চাহি না বলিয়া কম্মে বিরত হইও না। অর্থাৎ কৰ্ম্ম অবশ্য করবে, কিন্তু ফল কামনা করিয়া কৰ্ম্মম করিবে না। বোধ হয় এক্ষণে শ্লোকের অর্থ বঝা গিয়াছে। ইহাই সবিখ্যাত নিস্কাম কৰ্ম্মতত্ত্ব। এরপ উন্নত, পবিত্র এবং মনষ্যের মঙ্গলকর মহামহিমময় ধৰ্ম্মোক্তি জগতে আর প্রচারিত হয় নাই। কেবল ভগবৎপ্রসাদাৎই হিন্দ, এরপ পবিত্র ধৰ্ম্মমতত্ত্ব লাভ করিতে পারিয়াছে । কিন্তু লাভ করিয়াও হিন্দরে পক্ষে ইহার বিশেষ ফলোপধ্যায়িতা ঘটে নাই। তাহার কারণ, এমন কথাতেও আমাদের বদ্ধিবিভ্ৰংশাবশতঃ অনেক গোলযোগ ঘটিয়াছে। আমরা আজিও ভাল করিষা ইহা বঝিতে পারি নাই। আমি এমন বলিতেছি না যে, আমি ইহা সক্ষপণেরপে বঝিয়াছি বা পাঠককে সম্পণেরপে বাঝাইতে পারিব। ভগবান, যাঁহাকে তােদশ অনগ্ৰহ করিবেন, তিনিই ইহা বঝিতে পরিবেন। তবে যতটুকু পারি, বাবাইতে চেন্টা করায় বোধ হয় ক্ষতি নাই। ইহার প্রথম গোলযোগ কম্পমা শব্দের অর্থ সম্পবন্ধে। যাহা করা যায় বা করিতে হয়, তাহাই কম্পমা, কম্পমা শব্দের এই প্রচলিত অৰ্থ। কিন্তু কতকগলি হিন্দ শাস্ত্রকার বা হিন্দ শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকার ইহাতে একটা গোলযোগ উপস্থিত করিয়া রাখিয়াছেন। তাঁহাদের কৃপায় এ সকল স্থলে বঝিতে হয়, কৰ্ম্ম অর্থে বেদোক্ত যজ্ঞাদি। কৰ্ম্ম মাত্ৰই কৰ্ম্ম নহে-বেদোক্ত অথবা শাস্ত্রোক্ত যজ্ঞই কম্পম । a