পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবতত্ত্ব ও হিন্দধৰ্ম্ম-হিন্দ কি জড়োপাসক ? ধন্মের প্রথমাবস্থা জড় প্রশংসা, মধ্যকালে চৈতন্যবাদ, এবং পরিণতি একেশ্বরবাদে অতএব সক্তের তাৎপৰ্য্য বঝিয়া তাহার সময় নিন্দেশ করা যায়। এক্ষণে ‘প্রচারের দ্বিতীয় সংখ্যা হইতে এ পৰ্য্যন্ত বৈদিক দেবতাতত্ত্ব সম্পবন্ধে যাহা বলিলাম পাঠক তাহা সমরণ করান। তাহার স্থলে তাৎপৰ্য্য এইঃ ১। ইন্দ্রাদি বৈদিক দেবতা আকাশ, সােয্য, অগ্নি, বায় প্রভৃতি জড়ের বিকাশ ভিন্ন কোন লোকোত্তর চৈতন্য নহে। ২। এই সকল দেবতাদিগের উপাসনা যেমন বেদে আছে, সেইরূপ ভারতবর্ষ ভিন্ন অন্যান্য দেশে ছিল বা আছে। ৩ । তাহার কারণ এই যে, প্রথমাবস্থায় মনষ্যে জড়ে চৈতন্য আরোপণ করিয়া তাহার শক্তি, হিতকারিতা, বা সৌন্দৰ্য্য অনসারে তাহার উপাসনা করে। ৪ । এই উপাসনা গোড়ায় কেবল শক্তিমান, সন্দর বা উপকারী জড়পদার্থের প্রশংসা বা আদর মাত্র। কালে লোকে সে কথা ভুলিয়া গেলে, ইহা ইতর দেবতার উপাসনায় পরিণত হয়। হিন্দধম্মেম ইতর দেবোপাসনা এই অবস্থায় পরিণত হইয়াছে। ঈদশ উপাসনা অনিষ্টকর এবং উপধৰ্ম্মম। কিন্তু ইহার মািল অনিন্টিকর নহে। জড়শক্তিও ঈশ্বরেব শক্তি। সে সকলের আলোচনার দ্বারা ঈশ্বরের মহিমা এবং কৃপা অনভূত করা এবং তদ্দ্বারা চিত্তরঞ্জিনী বত্তি সকলের অনশীলন করা বিধেয় বটে। বৈদিক ধমের এই স্থলে তাৎপৰ্য্য। আধনিক হিন্দধমেও সেই সকল বৈদিক দেবতারা উপাসিত। অতএব এখনকার হিন্দধমের সংস্কারে সেই কথা আমাদের মনে রাখা উচিত। জড়ের শক্তির চিন্তার দ্বারা জ্ঞানাজ্ঞজনী এবং চিত্তরঞ্জিনীবত্তি সকলের অনশীলন করিব, এবং ঈশ্বরের মহিমা বঝিবার চেষ্টা করিব, কিন্তু জড়ের উপাসনা করিব না। ইহাই হিন্দধমের একটি স্থল কথা। এক্ষণে বৈদিক তত্ত্বান্তগত দেবতাতত্ত্ব সমাপ্ত করিয়া, আমরা বৈদিক তত্ত্বাস্তগত ঈশ্বরতত্ত্বের সমালোচনায় প্রবত্ত হইতে পারি। হিন্দধমের এই ব্যাখ্যার প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত করিলাম।-- ‘প্রচার, ১ম বিষ, প. ৩৯৭-৪o৭ ৷৷ श्मि, कि ऊटgाथानक ? যতক্ষণ আমার অঙ্গালিটি আমা হইতে বিচ্ছিন্ন নহে ততক্ষণ ঐ অঙ্গালিটি চেতনাময়, কিন্তু অঙ্গলিটি কাটিয়া ফেলিলে, উহা আমা হইতে বিচ্ছিন্ন হইলে, উহাতে আর চেতনা থাকে না, তখন উহা অচেতন জড় পদাৰ্থ । এই সমগ্র বিশ্ব চৈতন্যময় এক পরিষের দেহ। ভিন্ন ভিন্ন প্রকার শক্তির আধার সকল, অর্থাৎ অগ্নি বায় ইত্যাদি পদার্থ সকল সেই দেবতার অঙ্গবিশেষ। অগ্নিকে যদি সেই এক চৈতন্যময় পরিষের অঙ্গ বলিয়া জানি, অগ্নিকে যদি সেই চৈতন্যময় পরষ হইতে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখি, তবে অগ্নির চেতনা আছে বলিয়া বঝিব। আর যিনি অগ্নির সহিত সেই চৈতন্যময়ের কোন সম্পবিন্ধ দেখিতে পান না। তাঁহার কাছেই অগ্নি জড় পদাৰ্থ । আজকালকার পাশ্চাত্ত্য পশিডতগণ অগ্নিকে (Igneous principle) জড় বলিয়া জানেন কিন্তু প্রাচীন হিন্দগণ অগ্নির সহিত চৈতন্যের সম্প্ৰবন্ধ বঝিয়া উহাকে চেতন বলিয়া বঝিতেন। আজকালকার পাশচাত্ত্যগণ অগ্নিগত শক্তিকেই (Heat) জগতের আদি শক্তি বলিয়া প্ৰতিপন্ন করিতে চেস্টা করিতেছেন। হিন্দ ঋষিগণও এই অগ্নিকে জগতের আদি শক্তি বলিয়া স্থির করিয়াছিলেন, তবে প্রভেদ এই পাশ্চাত্ত্য পন্ডিতদিগের অগ্নি জড়শক্তি, প্রাচীন হিন্দ ঋষিদের ऊर्धाभ ८ष्ठ्भायख्र । প্রণব মন্ত্র হইতে এই জগতের সন্টি স্থিতি লয় কাৰ্য্য চলিতেছে। এই প্রণব মন্ত্রের দেবতা অগ্নি। হিন্দরা বঝিয়াছিলেন যে, এই অগ্নিগত শক্তি হইতেই এই জগৎচক্ৰ ঘারিতেছে। কিন্তু এই অগ্নিগত শক্তি যে চৈতন্য সম্পবিন্ধ রহিত ইহা তাঁহারা কখনও ভাবিতেন না। হিন্দদের কাছে প্রণব মন্ত্রের লক্ষ্য অগ্নিগত শক্তি ব্ৰহ্মচৈতন্যে চেতনাযািক্ত। ওঁকারস্য ব্ৰহ্মঋষিঃ গায়ন্ত্রীচ্ছন্দোহগ্নিদেবতা সব্বকৰ্ম্মারম্ভে বিনিয়োগঃ। YSO