পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

ৰঙ্কিম রচনাবলী

শ্রেষ্ঠ মনে করেন, তাঁহাদের ভাগ্যেও ঘটে না। যাঁহাদের প্রতিভার এক অংশ উজ্জল, অপরাংশ প্লান, কখন ভস্মাচ্ছন্ন কখন প্রদীপ্ত, তাঁহাদের ভাগ্যেও ঘটে না; কেন না অন্ধকার কাটিয়া দীপ্তির প্ৰকাশ পাইতে দিন লাগে। | ইহার মধ্যে কোন কারণে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁহার জীবিতকালে, বাঙ্গালা সাহিত্যসভায় তাঁহার উপযুক্ত আসন প্রাপ্ত হয়েন নাই, তাহা এ জীবনী পাঠে পাঠক বুঝিতে পারেন। কিন্তু তিনি যে এ পর্যন্ত বাঙ্গালা সাহিত্যে আপনার উপযুক্ত আসন প্রাপ্ত হয়েন নাই, তাহা যিনিই তাঁহার গ্রন্থগুলি যত্নপৰ্ব্বক পাঠ করিবেন, তিনি স্বীকার করিবেন। কালে সে আসন প্রাপ্ত হইবেন। আমি বা চন্দ্রনাথবাব, এক এক কলম লিখিয়া, তাঁহাকে এক্ষণে সে স্থান দিতে পারিব, এমন ভরসায় আমি উপস্থিত কর্মে ব্রতী হই নাই। তবে আমাদের এক অতি বলবান, সহায় আছে। কাল, আমাদের সহায়। কালক্রমে ইহা অবশ্য ঘটিবে। আমরাও কালের অনুচর; তাই কালসাপেক্ষ কার্যের সত্রপাতে এক্ষণে প্রবত্ত হইয়াছি।

সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমার সহােদর। আমি ভ্রাতৃস্নেহবশতঃ তাঁহার জীবনী লিখিতে প্রবৃত্ত হই নাই। আমি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, দীনবন্ধু মিত্র, এবং প্যারীচাঁদ মিত্রের জন্য যাহা করিয়াছি, আমার অগ্রজের জন্য তাহাই করিতেছি। তবে ভ্রাতৃস্নেহসলভ পক্ষপাতের পরিবাদ ভয়ে তাঁহার গ্রন্থ সমালােচনার ভার আমি গ্রহণ করিলাম না। সৌভাগ্যক্রমে তাঁহার ও আমার পরমসহৃদ, বিখ্যাত সমালােচক বাবু, চন্দ্রনাথ বস, এই ভার গ্রহণ করিয়া আমাকে ও পাঠকবর্গকে বাধিত করিয়াছেন। জীবনী লিখিবারও আমি উপযুক্ত পাত্র নহি। যাঁহার জীবনী লেখা যায়, তাঁহার দোষ গণ উভয়ই কীৰ্ত্তন না করিলে, জীবনী লােকশিক্ষার উপযােগী হয় না—জীবনী লেখার উদ্দেশ্য সফল হয় না। সকল মানুষেরই দোষ গুণে দুই-ই থাকে; আমার অগ্রজেরও ছিল। কিন্তু তাঁহার দোষ কীৰ্ত্তনে আমার প্রবত্তি হইতে পারে না; আমি তাঁহার গণকীৰ্ত্তন করিলে লোকে বিশ্বাস করিবে না, ভ্রাতৃস্নেহজনিত পক্ষপাতের ভিতর ফেলিবে। কিন্তু তাঁহার জীবনের ঘটনা সকল আমি ভিন্ন আর কেহ সবিশেষ জানে না-সুতরাং আমিই লিখিতে বাধ্য।

লিখিতে গেলে তাঁহার দোষ গুণের কথা কিছুই বলিব না, এমন প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা যায় , কেন না কিছু কিছু দোষ গুণের কথা না বলিলে ঘটনাগলি বঝান যায় না। যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা অন্ততঃ কিয়ৎ পরিমাণে তাঁহার দোষে, বা তাঁহার পণে ঘটিয়াছে। কি দোষে কি গুণে ঘটিয়াছিল, তাহা বলিতে হইবে। তবে যাহাতে গণ দোষের কথা খুব কম বলিতে হয়, সে চেষ্টা করিব।

অবসাথী গঙ্গানন্দ চট্টোপাধ্যায় এক শ্রেণীর ফলিয়া কুলীনদিগের পপেরষ। তাঁহার বাস ছিল হুগলী জেলার অন্তঃপাতী দেশমখাে। তাঁহার বংশীয় রামজীবন চট্টোপাধ্যায় গঙ্গার পর্বতীরস্থ কাঁটালপাড়া গ্রাম নিবাসী রঘুদেব ঘোেষালের কন্যা বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহার পত্র রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের বিষয় প্রাপ্ত হইয়া কাঁটালপাড়ায় বাস করিতে লাগিলেন। সেই অবধি রামহরি চট্টোপাধ্যায়ের বংশীয় সকলেই কাঁটালপাড়ায় বাস করিতেছেন। এই ক্ষুদ্র লেখকই কেবল স্থানান্তরবাসী।

সেই কাঁটালপাড়া, সঞ্জীবচন্দ্রের জন্মভূমি। তিনি কথিত রামহরি চট্টোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র ; পরমারাধ্য যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের পত্র। ১৭৫৬ শকে বৈশাখ মাসে ইহার জন্ম। যাহারা জ্যোতিষ শাস্ত্রের আলােচনায় প্রবত্ত তাহাদের কৌতহল নিবারণাৰ্থ ইহা লেখা আবশ্যক,

  • ইহার প্রকৃত নাম সঞ্জীবনচন্দ্র, কিন্তু সংক্ষেপানরােধে সঞ্জীবচন্দ্র নামই ব্যবহৃত হইত। প্রকৃত নামের আশ্রয় লইয়াই এই সংগ্রহের নাম দিয়াছি, সঞ্জীবনী সুধা।

জীবনী লিখিবার অনুরােধে, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকেও কেবল সঞ্জীবচন্দ্র বলিয়া লিখিতে বাধ্য হইতেছি। প্রথাটা অত্যন্ত ইংরাজি রকমের, কিন্তু যখন আমার পরম সহদ, পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত বাবু, রামায় চট্টোপাধ্যায় এই প্রথা প্রবর্তিত করিয়াছেন, তখন মহাজনন যেন গতঃ স পদ্ধ। বিশেষ তিনি আমারই শাদা মহাশয়, কিন্তু পাঠকের কাছে সঞ্জীবচন্দ্র মাত্র। অতএব দাদা মহাশয়, দাদা মহাশয়, পুনঃ পুন পাঠকের রুচিকর না হইতে পারে। ৮৬৪