পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

क्रुश्क८ख्ठद्ध छेव् নবম পরিচ্ছেদ গহে ফিরিয়া আসিয়া গোবিন্দলাল ভৃত্যুবগকে নিষেধ করিলেন, “কেহ উপরে আসিও না।” ওস্তাদজী বাসায় গিয়াছিল। গোবিন্দলাল রোহিণীকে লইয়া নিভৃত শয়নকক্ষে প্রবেশ করিয়া দবার রন্ধ করিলেন। রোহিণী, সম্মখে নদীস্রোতোবিকশিপতা বেতসীর ন্যায় দাঁড়াইয়া কাঁপিতে লাগিল। গোবিন্দলাল মাদাসম্বরে বলিল, “রোহিণী !” রোহিণী বলিল, “কেন ?” গো । তোমার সঙ্গে গোটাকতক কথা আছে। রো। কি ? গো। তুমি আমার কে ? রো। কেহ নহি, যত দিন পায়ে রাখেন তত দিন দাসী । নহিলে কেহ নাই। গো। পায়ে ছেড়ে তোমায় মাথায় রাখিয়াছিলাম। রাজার ন্যায় ঐশবষ্য, রাজার অধিক সম্পদ, অকলঙক চরিত্র, অত্যাজ্য ধৰ্ম্ম, সব তোমার জন্য ত্যাগ করিয়াছি। তুমি কি রোহিণি, যে তোমার জন্য এ সকল পরিত্যাগ করিয়া বনবাসী হইলাম ? তুমি কি রোহিণ, যে তোমার সুন্ন ভ্রমন্ত্র জগতে অতুল, চিন্তায় সখি, সখে অতৃপিতি, দঃখে অমত, যে ভ্রমর—তাহা পরিত্যাগ করলাম ? এই বলিয়া গোবিন্দলাল আর দঃখ ক্ৰোধের বেগ সংবরণ করিতে না পারিয়া রোহিণীকে পদাঘাত করিলেন। রোহিণী বসিয়া পড়িল। কিছ: বলিল না, কাঁদিতে লাগিল। কিন্তু চক্ষের জল গোবিন্দলাল দেখিতে পাইলেন না। গোবিন্দলাল বলিলেন, “রোহিণী, দাঁড়াও।” রোহিণী দাঁড়াইল । গো। তুমি একবার মরিতে গিয়াছিলো। আবার মরিতে সাহস আছে কি ? রোহিণী তখন মরিবার ইচ্ছা করিতেছিল। অতি কাতর সবরে বলিল, “এখন আর না মরিতে চাহিব কেন ? কপালে যা ছিল, তা হলো।” গো। তবে দাঁড়াও । নড়িও না। রোহিণী দাঁড়াইয়া রহিল। গোবিন্দলাল পিস্তলের বাক্স খলিলেন, পিস্তল বাহির করিলেন। পিস্তল ভরা ছিল। ভরাই থাকিত । পিস্তল আনিয়া রোহিণীর সম্পমািখ ধরিয়া গোবিন্দলাল বলিলেন, “কেমন, মরিতে পারিবে ?” রোহিণী ভাবিতে লাগিল। যে দিন অনায়াসে, অক্লেশে, বারণীর জলে ডুবিয়া মরিতে গিয়াছিল, আজি সে দিন রোহিণী ভুলিল। সে দঃখ নাই, সতরাং সে সাহসও নাই। ভাবিল, “মরিব কেন ? না হয় ইনি ত্যাগ করেন, করন। ইহাকে কখনও ভুলিব না, কিন্তু তাই বলিয়া মরিব কেন ? ইহাকে যে মনে ভাবিব, দঃখের দশায় পড়িলে যে ইহাকে মনে করিব, এই প্ৰসাদপরের সখরাশি যে মনে করিব, সেও ত এক সখি, সেও ত এক আশা। মরিব কেন ?” রোহিণী বলিল, “মরিব না, মারিও না। চরণে না রাখ, বিদায় দেও।” গো। দিই। এই বলিয়া গোবিন্দলাল পিস্তল উঠাইয়া রোহিণীর ললাটে লক্ষ্য করিলেন। রোহিণী কাঁদিয়া উঠিল। বলিল, “মারিও না! মারিও না! আমার নবীন বয়স, নাতন সখ। আমি আর তোমায় দেখা দিব না, আর তোমার পথে আসিব না। এখনই যাইতেছি। আমায় মারিও না!” গোবিন্দলালের পিস্তলে খট করিয়া শবদ হইল। তার পর বড় শব্দ, তার পর সব অন্ধকার! রোহিণী গতিপ্ৰাণা হইয়া ভূপতিত হইল । গোবিন্দলাল পিস্তল ভূমে নিক্ষেপ করিয়া অতি দ্রুতবেগে গহ হইতে নিগত হইলেন। (NG