পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ বলিলেন, “তোমারই জন্য এত দীর আসিয়াছি-তোমাকে আদেয় কিছই নাই—কি চাও, রপনগরের কন্যে ?” চঞ্চলকুমারী আবার যোড়হাত করিয়া বলিল, “আমি চঞ্চলমতি বালিকা বলিয়া আপনাকে আসিতে লিখিয়ছিলাম, কিন্তু আমি নিজের মন আপনি বঝিতে পারি নাই। আমি এখন মোগলসম্রাটের ঐশবয্যের কথা শনিয়া বড় মগধ হইয়াছি। আপনি অনািমতি করবেন-আমি দিল্লী যাইব ।” রাজসিংহ বিস্মিত ও প্রীত হইলেন। বলিলেন, “তোমার দিল্লী যাইতে হয় যাও।---আমার আপত্তি নাই—কিন্তু আপাততঃ তুমি যাইতে পাইবে না। যদি এখন তোমাকে ছাড়িয়া দিই, মোগল মনে করিবে যে, প্রাণভয়ে ভীত হইয়া তোমাকে ছাড়িয়া দিলাম। আগে যাদ্ধ শেষ হউক।--তার পর তুমি যাইও । আর তোমার মনের কথা যে বঝি নাই, তাহা মনে করিও না। আমি জীবিত থাকিতে তোমাকে দিল্লী যাইতে হইবে না। খোওয়ান সব-আগে চল ।” তখন চ৭৪লকুমারী মদ হাসিয়া, মৰ্ম্মভেদী মদন কটাক্ষা করিয়া, দক্ষিণ হস্তের কনিৎঠাঙ্গলিস্থিত হীরকাঙ্গরীয় বাম হস্তের অঙ্গলিদ্বয়ের দ্বারা ফিরাইযা রাজসিংহকে দেখাইতে দেখাইতে বলিলেন, “মহারাজ ! এই আঙ্গটিতে বিষ আছে। দিল্লীতে না যাইতে দিলে, আমি বিষ খাইব ।” রাজসিংহ তখন হাসিলেন—বলিলেন, “অনেকক্ষণ বঝিয়াছি রাজকুমারী-রমণীকুলে তুমি ধন্যা। কিন্তু তুমি যাহা ভাবিতেছ, তাহা হইবে না। আজ রাজপতের বাঁচা হইবে না ; আজি রাজপতিকে মরিতেই হইবে।--নাহিলে রাজপতনামে বড় কলঙক হইবে। আমরা যতক্ষণ না মরি —ততক্ষণ তুমি বন্দী। আমরা মরিলে তুমি যেখানে ইচ্ছা, সেইখানে যাইও ।” চঞ্চলকুমারী হাসিল – অতিশয় প্রণয়প্রফতুল্ল, ভক্তিপ্রণোদিত, সাক্ষাৎ মহাদেবের অনিবাৰ্য্য এক কটাক্ষবাণ, রাজসিংহের উপর ত্যাগ করিল। মনে মনে বলিতে লাগিল, “বীরচড়ামণি! আজি হইতে আমি তোমার দাসী হইলাম ! যদি তোমার দাসী না হই—তবে চ৭8ল কখনই প্রাণ রাখবে। না।” প্রকাশ্যে বলিল, “মহারাজ । দিল্লীর্শবর যাহাকে মহিষী করিতে অভিলাষ করিয়াছেন, সে কাহারও বন্দী নহে। এই আমি মোগল সৈন্যসম্মখে চলিলাম-কাহার সাধ্য রাখে দেখি ?” এই বলিয়া চঞ্চলকুমারী—জীবন্ত দেবীমত্তি, রাজসিংহকে পাশ করিযা রন্ধ্রুমখে চলিলেন । তাঁহাকে সপশ করে কাহার সাধ্য ? এজন্য কেহ তাঁহার গতিরোধ করিতে পারিল না। হাসিতে হাসিতে, হেলিতে দলিতে, সেই সবণীমান্ডাময়ী প্রতিমা রন্ধ্রুম,খে চলিয়া গেল। একাকিনী চ৭8লকুমারী সেই প্রজবলিত বহি তুল্য রন্ট, সশস্ত্ৰ পঞ্চ শত মোগল আশাবারোহীর সম্মখে গিয়া দাঁড়াইলেন। যেখানে সেই পথরোধকারী কামান-মনষ্যনিশ্চিমত বজ, অগিন উদগীর্ণ করিবার জন্য হাঁ করিয়া আছে—তাহার সম্মমখে, রত্নমণিডতা লোকাতীতা সন্দেরী দাঁড়াইল। দেখিয়া বিসিমত মোগলসেনা মনে কবিল--পৰ্ববতনিকবাসিনী পরী আসিয়াছে। মন:ষ্যভাষায় কথা কহিয়া চঞ্চলকুমারী সে ভ্ৰম ভাঙ্গিল |——বলিল, “এ সেনার সেনাপতি কে ?” মবারক স্বয়ং রন্ধ্রুমখে রাজপতিগণের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন—তিনি বলিলেন, “ইহারা এখন অধমের অধীন। আপনি কৈ ?” চ৭gলকুমারী বলিলেন, “আমি সামান্যা স্ত্রী। আপনার কাছে কিছ ভিক্ষা আছে—যদি অন্তরালে শানেন, তবেই বলিতে পারি।” মবারক বলিলেন, “তবে রন্ধুমধ্যে আগ হউন।” চঞ্চলকুমারী রন্ধ্রুমধ্যে অগ্রসর হইলেন— মবারক পাশচাং পাশচাৎ গেলেন । যেখানে কথা অন্যে শানিতে পায় না, এমন স্থানে আসিয়া চঞ্চলকুমারী বলিতে লাগিলেন, “আমি রুপনগরের রাজকন্যা। বাদশাহ আমাকে বিবাহ করিবার অভিলাষে আমাকে লাইতে এই সেনা পাঠাইয়াছেন—এ কথা বিশবাস করেন। কি ?” মবারক। আপনাকে দেখিয়াই সে বিশ্ববাস হয়। চঞ্চল। আমি মোগলকে বিবাহ করিতে অনিচ্ছক—ধৰ্ম্মেম পতিত হইব মনে করি। কিন্তু পিতা ক্ষীণবল--তিনি আমাকে আপনাদিগের সঙ্গে পাঠাইয়াছেন —তাঁহা হইতে কোন ভরসা। নাই বলিয়া আমি রাজসিংহের কাছে দত প্রেরণ করিয়াছিলাম-আমার কপালক্ৰমে তিনি পণ8াশ জন মাত্র সিপাহী লইয়া আসিয়াছেন—তাঁহাদের বলবনীয্য ত দেখিলেন ? মবারক চমকিয়া উঠিয়া বলিলেন, “সে কি-পঞ্চাশ জন সিপাহী এত মোগল মারিল ?” US