পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী ভবানন্দ তখন বলিল, “মহেন্দ্র সিংহ আজ প্রাতে সত্ৰী কন্যা লইয়া গহত্যাগ করিয়া যাইতেছিল, চাটনীতে—” এই পৰ্যন্ত বলতে ব্রহ্মচারী বলিলেন, “চটীতে যাহা ঘটিয়াছে, তাহা জানি। কে করিল ?” ভবা । গোয়ো চাষালোক বোধ হয়। এখন সকল গ্রামের চাষাভুষো পেটের জবালায় ডাকাত হইয়াছে। আজকাল কে ডাকাত নয় ? আমরা আজ লাঠিয়া খাইয়াছি—কোতোয়াল সাহেবের দই মণ চাউল যাইতেছিল—তাহা গ্রহণ করিয়া বৈষ্ণবের ভোগে লাগাইয়াছি। ব্ৰহ্মচারী হাসিয়া বলিলেন, “চোরের হােত হতে আমি তাহার সত্ৰী কন্যাকে উদ্ধার করিয়াছি। এখন তাহাদিগকে মঠে রাখিয়া আসিয়াছি। এখন তোমার উপর ভার যে, মহেন্দ্রকে খাজিয়া, তাহার স্ত্ৰী কন্যা তাহার জিম্মমা করিয়া দাও । এখানে জীবানন্দ থাকিলে কায্যোদ্ধার হইবে।” ভবানন্দ স্বীকৃত হইলেন। ব্ৰহ্মচারী তখন স্থানান্তরে গেলেন। সপ্তম পরিচ্ছেদ চটীতে বসিয়া ভাবিয়া কোন ফলোদয় হইবে না বিবেচনা করিয়া মহেন্দ্র গাত্রে থান করিলেন। নগরে গিয়া রাজপরিষদিগের সহায়তায় স্ত্রী-কন্যার অন্যসন্ধান করিবেন, এই সেই দিকেই চলিলেন। কিছর দরে গিয়া পথিমধ্যে দেখিলেন, কতকগলি গোেরর গাড়ি ঘেরিয়া অনেকগলি সিপাহী চলিয়াছে। ১১৭৬ সালে বাঙ্গালা প্রদেশ ইংরেজের শাসনাধীন হয় নাই। ইংরেজ তখন বাঙগালার দেওয়ান। তাঁহারা খাজনার টাকা আদায় করিয়া লন, কিন্তু তখনও বাঙগালীর প্রাণ সম্পপত্তি প্রভৃতি রক্ষণাবেক্ষণের ভার লয়েন নাই। তখন টাকা লইবার ভার ইংরেজের, আর প্রাণ সম্পপত্তির রক্ষণাবেক্ষণের ভার পাপিষঠ নরাধম বিশবাসহন্তা মনষ্যাকুলকলঙক মীরজাফরের উপর। মীরজাফর আত্মরক্ষায় অক্ষম, বাঙ্গালা রক্ষা করিবে কি প্রকারে ? মীরজাফর গলি খায় ও ঘামায়। ইংরেজ টাকা আদায় করে ও ডেসপ্যাচ লেখে। বাঙগালী কাঁদে আর উৎসন্ন যায়। অতএব বাঙ্গালার কর ইংরেজের প্রাপ্য। কিন্তু শাসনের ভার নবাবের উপর। যেখানে যেখানে ইংরেজেরা আপনাদের প্রাপ্য করা আপনারা আদায় করিতেন, সেখানে তাঁহারা এক এক কলেক্টর নিযক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু খাজনা আদায় হইয়া কলিকাতায় যায়। লোক না খাইয়া মরকে, খাজনা আদায় বন্ধ হয় না। তবে তত আদায় হইয়া উঠে নাই—কেন না, মাতা বাসমতী ধন প্রসব না করিলে ধন কেহ গড়িতে পারে না। যাহা হউক, যাহা কিছ আদায় হইয়াছে, তাহা গাড়ি বোঝাই হইয়া সিপাহীর পাহারায় কলিকাতায় কোম্পানির ধনাগারে যাইতেছিল। আজিকার দিনে দস্যভীতি অতিশয় প্রবল, এজন্য পঞ্চাশ জন সশস্ত্ৰ সিপাহী গাড়ির অগ্রপশ্চাৎ শ্রেণীবদ্ধ হইয়া সঙ্গীন খাড়া করিয়া যাইতেছিল। তাহাদিগের অধ্যক্ষ একজন গোরা। গোরা সবােব পশ্চাৎ ঘোড়ায় চড়িয়া যাইতেছিল। রৌদ্রের জন্য দিনে সিপাহীরা পথে চলে না, রাত্রে চলে। চলিতে চলিতে সেই খাজনার গাড়ি ও সৈন্য-সামন্তে মহেন্দ্রের গতিরোধ হইল। মহেন্দ্র সিপাহী ও গোেরর গাড়ি কর্তৃক পথ রুদ্ধ দেখিয়া, পাশ দিয়া দাঁড়াইলেন, তথাপি সিপাহীরা তাঁহার গা ঘোঁসিয়া যায় দেখিয়া এবং এ বিবাদের সময় নয়। বিবেচনা করিয়া—তিনি পথিপােশ বাসস্থ জণ্ডগলের ধারে গিয়া দাঁড়াইলেন। তখন এক জন সিপাহী বলিল, “এহি একঠো ডাকু ভাগত হৈ৷” মহেন্দ্রের হাতে বন্দক দেখিয়া এ বিশবাস তাহার দঢ় হইল। সে তাড়াইয়া গিয়া মহেন্দ্রের গলা ধরিল, এবং “শালা— চোর” বলিয়াই সহসা এক ঘষা মারিল ও বন্দক কাড়িয়া লইল। মহেন্দ্র রিক্ত হস্তে কেবল ঘষাটি ফিরাইয়া মারিলেন। মহেন্দ্রের একটি রাগ যে বেশী হইয়াছিল, তাহা বলা বাহল্য। ঘষাটি খাইয়া সিপাহী মহাশয় ঘরিয়া অচেতন হইয়া রাস্তায় পড়িলেন। তখন তিন চারি জন সিপাহী আসিয়া মহেন্দুকে ধরিয়া জোরে টানিয়া সেনাপতি সাহেবের নিকট লইয়া গেল, এবং সাহেবকে বলিল যে, এই ব্যক্তি একজন সিপাহীকে খােন করিয়াছে। সাহেব পাইপ খাইতেছিলেন, মদের ঝোঁকে একটখানি বিহবল ছিলেন ; বলিলেন, “শালাকো পাকড়লোকে সাদি করো।” সিপাহীরা বঝিতে পারিল না যে, বন্দকধারী ডাকাতকে তাহারা কি প্রকারে বিবাহ করিবে। কিন্তু নেশা ছটিলে সাহেবের মত ফিরিবে, বিবাহ করিতে হইবে না, বিবেচনায় তিন চারি জন CR SR SR